হলদিয়া, 4 মার্চ : বাড়িতে স্ত্রী । তার উপর রমা দে-র সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্ক । এখানেই শেষ নয় । গোপনে আইনিমতে বিয়ে করেছিল রমার মেয়ে রিয়াকেও । শুধু তাই নয়, রমা ও রিয়া দু'জনকে একসঙ্গে ঘুরতে নিয়ে যেত । কিন্তু পরে এই সব জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল সাদ্দাম । আর সেখানেই সমস্যার শুরু । তাই সব সমস্যার সমাধান করতে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে রমা ও রিয়া -কে পুড়িয়ে মারার ছক কষা হয় । হলদিয়ায় মা ও মেয়ে খুনের ঘটনায় ধৃত সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই তথ্য পেল পুলিশ । তবে, সাদ্দামের এই স্বীকারোক্তিকে সত্যি বলে মানতে নারাজ তদন্তকারীদের একাংশ । তাই খুনের আসল কারণ জানতে চার অভিযুক্তকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ ।
সাদ্দামকে জেরা করে প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীরা ভেবেছিল ব্ল্যাকমেইল থেকে মুক্তি পেতে রমা ও রিয়াকে খুন করেছে সে । কিন্তু পরে রিয়ার একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি পাওয়া যায় । যা থেকে তদন্তকারীরা জানতে পারে, মায়ের সঙ্গে সাদ্দামের সম্পর্কের কথা জানার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন রিয়া । পরে জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দামের সঙ্গে রমা ও রিয়ার ত্রিকোণ প্রেমের বিষয়টি সামনে আসে । জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম জানায়, রমার বিবাহবিচ্ছেদের পর ফেসবুকে আলাপ হয় তাদের । সেখান থেকেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তারা । একসঙ্গে থাকার জন্য হলদিয়ায় বাড়িও ভাড়া নেয় দু'জন । পরবর্তীকালে সেখানে মায়ের কাছে এসে মাঝে মাঝে থাকতেন রিয়া । আর তখনই তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সাদ্দাম । 2018 সালে রিয়ার সঙ্গে রেজিস্ট্রি ম্যারেজও করে সে ।
প্রথমে সাদ্দামের সঙ্গে একে অপরের সম্পর্কের কথা জানতেন না রমা ও রিয়া কেউই । কিন্তু পরবর্তীকালে রিয়া কোনওভাবে জেনে যায় সাদ্দামের সঙ্গে তাঁর মায়ের সম্পর্কে কথা । সেইসময় থেকেই শুরু হয় অশান্তি । পরে রমা জানতে পারেন সাদ্দাম আগে থেকেই বিবাহিত । তখন মেয়ে রিয়াকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রমা । কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন টাকার । সাদ্দামের বক্তব্য অনুযায়ী, ওই টাকা পেতেই রিয়ার সঙ্গে তার রেজিস্ট্রি ম্যারেজের সার্টিফিকেটকে হাতিয়ার করেন রমা । কিন্তু ঠিকাদারের ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় সেইসময় সাদ্দামের পক্ষে টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না । তাই সব সমস্যার সহজ সমাধান করতে বন্ধুদের সঙ্গে খুনের ছক কষে সাদ্দাম ।
পরিকল্পনামতো 17 ফেব্রুয়ারি রমার হলদিয়ার বাড়িতে আসে সাদ্দাম এবং তার বন্ধু মনজুর আলম ও আমিনুর হোসেন । সমস্যার মীমাংসা করার নামে সেখানে রমা ও রিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসে তিন জন । আলোচনায় সাদ্দাম রমা ও রিয়াকে 21 লাখ টাকা দিতে রাজি হয় । এরপরই রমার বাড়িতে পার্টির আয়োজন করে সকলে । রিয়া বাজার থেকে চাউমিন নিয়ে আসে । আর সাদ্দাম মদ কিনে আনে । তদন্তকারীরা জানায়, রিয়া চাউমিন নিয়ে এলে সুযোগ পেয়ে তাতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় আমিনুর ও মনজুর । সেই চাউমিন খেয়ে রমা ও রিয়া জ্ঞান হারালে গলা টিপে খুন করা হয় । পরে পেশায় গাড়ির চালক শুকদেব দাস ওরফে শিবুকে ডেকে দু'জনের দেহ লোপাটের জন্য তা নিয়ে যাওয়া হয় হুগলি নদীর পাড়ে ।
প্রথমে তারা দেহ দুটি মাটিতে পুঁতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । কিন্তু দিনের আলো ক্রমশ ফুটতে শুরু করায় তারা গাড়ির পেট্রোল বের করে দেহ দুটিকে জ্বালিয়ে দেয় । জেরায় সাদ্দাম জানায়, রমার সঙ্গে সম্পর্ক থেকে একাধিকবার বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল সে । কিন্তু রমার চাপে পড়ে তা কখনওই সম্ভব হয়নি । তাই কোথাও ঘুরতে গেলেও রিয়ার সঙ্গে রমাকেও নিয়ে যেতে হত । যদিও সাদ্দামের কথা সত্যি বলে মানতে নারাজ তদন্তকারীদের অধিকাংশ । জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কারণ সাদ্দাম জানালেও কোনওকিছুই স্পষ্ট নয় তদন্তকারীদের কাছে । তাই এই ঘটনায় ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা । তদন্তকারীদের অনুমান, এই মুখোমুখি জেরাতেই প্রকাশ্যে আসতে পারে আসল সত্য ।
18 ফেব্রুয়ারি হলদিয়ার দুর্গাচক থানার অন্তর্গত ঝিকুরখালিতে হুগলি নদীর পাড়ে উদ্ধার হয় অর্ধদগ্ধ জোড়া দেহ । তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যাদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে তারা সম্পর্কে মা ও মেয়ে । ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ।