ETV Bharat / state

অধিকাংশ পুজো বন্ধ, চাহিদা নেই পদ্মের ; সংকটে পদ্ম চাষিরা

অন্যান্য বছর এই মরশুমে ফুল বিক্রি হত 10 থেকে 12 টাকা দামে ৷ সেই ফুলই এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে পিস প্রতি 2 থেকে 3 টাকায় ৷

অধিকাংশ পুজো বন্ধ, বাজারে চাহিদা নেই পদ্মের ; সংকটে পদ্ম চাষিরা
অধিকাংশ পুজো বন্ধ, বাজারে চাহিদা নেই পদ্মের ; সংকটে পদ্ম চাষিরা
author img

By

Published : Oct 6, 2020, 6:59 PM IST

তমলুক, 6 অক্টোবর : রাবণ বধের জন্য অসময়ে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেছিলেন রামচন্দ্র । ভক্তের পরীক্ষা নিতে দেবীই সরিয়ে দিয়েছিলেন একটি ফুল । ফলে পদ্মের অভাবে বন্ধ হতে বসেছিল পুজো । আর তখনই দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের পদ্মসম চোখ অর্পণ করতে যান রামচন্দ্র । ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে দশভূজা রূপে আবির্ভূত হয়ে দেবী ফিরিয়ে দেন লুকিয়ে রাখা পদ্ম । সেই থেকেই উমার আরাধনায় লাগে 108 টি পদ্ম । আর তাই প্রতিবছরই দুর্গাপুজোর সময় পদ্ম ফুলের চাহিদা থাকে তুঙ্গে । রাজ্যের বাইরেও এইসময় ফুলের জোগান দিয়ে থাকে পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া,পশ্চিম মেদিনীপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলি । কিন্তু কোরোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক পুজো উদ্যোক্তাই এবছর তাদের পুজো বন্ধ রেখেছে । আর তাই বরাত মিলছে না পদ্মের । বাজারে চাহিদাও নেই ফুলের । ফলে চাষের পিছনে খরচ করেও ফুলের দাম না পাওয়ায় ব্যাপক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পদ্ম চাষিরা । চাষিদের আর্থিক ক্ষতির কথা মাথায় রেখে রাজ্যের হর্টিকালচার বিভাগের মন্ত্রী আবদুর রেজ্জাক মোল্লার দ্বারস্থ হতে চলেছে সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি ।

এরাজ্যসহ গোটা দেশ ও বিদেশে প্রতিবছর পুজোর সময় প্রায় 20 লাখ পদ্মের চাহিদা তৈরি হয় । যার সিংহভাগের জোগান দেয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা । যে কারণে প্রতিবছর পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, তমলুক, মহিষাদল, রামনগরসহ একাধিক ব্লকের রেল ও সরকারি জলাশয়গুলি লিজ নিয়ে পদ্ম চাষ করেন চাষিরা । ডিসেম্বর মাস থেকেই চারা (গেঁড়) লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় । গাছে ফুল আসতে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে । জুলাই মাস থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পুজোর জন্য বাজারে চাহিদা শুরু হয় পদ্মের । দুর্গাপুজো উপলক্ষে সেপ্টেম্বর থেকেই কোল্ডস্টোরগুলিতে ফুলের সংরক্ষণ শুরু করেন চাষিরা । কিন্তু এবছরের ছবিটা সম্পূর্ণ উলটো । কোরোনা সংক্রমণের কারণে বিশ্বকর্মা পুজোর সময় হিমঘরে মজুত রেখেও বাজারে চাহিদা না থাকায় ফেলে দিতে হয়েছে বহু ফুল । ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে বহু চাষিকে ।

অন্যবছর পদ্মের চাহিদা থাকে তুঙ্গে
অন্যবছর পদ্মের চাহিদা থাকে তুঙ্গে

প্রতিবছর বেঙ্গালুরু, দিল্লি, গুজরাত, বিহার ও ওড়িশা থেকে ফুল ব্যবসায়ীরা পুজোর এক মাস আগে থেকেই ফুলের বরাত দেন ৷ কিন্তু এবছর তাঁরাও মুখ ফিরিয়েছেন । অন্যান্য বছর এই মরশুমে ফুল বিক্রি হত 10 থেকে 12 টাকা দামে ৷ সেই ফুলই এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে পিস প্রতি 2 থেকে 3 টাকায় । চাষিরা জানিয়েছেন, এক বিঘা জলাশয় লিজ নিয়ে পদ্ম চাষ করতে খরচ পড়ে 30 হাজার টাকা মতো । ভালো দাম পাওয়া গেলে লাভ থাকে কুড়ি হাজার টাকার মতো । কিন্তু এবছর যে মূল্যে ফুল বিক্রি হচ্ছে তাতে আসল টাকা উঠে আসবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে । বাজারে চাহিদা না থাকায় চাষিরা সেভাবে হিমঘরে মজুত করেননি ফুল । তাই পুজোর একদম প্রাক্কালে ফুলের চাহিদা তৈরি হলেও জোগান দেওয়া সম্ভব হবে কি না তাও সুনিশ্চিত নয় । এইসব সমস্যা নিয়েই চলছেন জেলার প্রায় হাজার দু'য়েক পদ্ম চাষি ।

প্রায় আট বিঘা জলাশয়ে পদ্মের চাষ করেছেন সুনীল মাইতি । তিনি বলেছেন, "প্রতিবছর যে সকল পুজো উদ্যোক্তা আমাদের ফুলের বরাত দেন তাঁরাও এবছর কেউ আসেননি । ট্রেন না চলায় বাইরের রাজ্য ফুল পাঠানো যায়নি । বাগানের পরিচর্যা করে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে । ফুলের দাম না থাকায় টাকা উঠে আসবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি ।" আরও এক পদ্ম চাষি প্রসেনজিৎ কর জানিয়েছেন, "প্রতিবছর এ সময় পদ্মের দাম ওঠে প্রায় 10 থেকে 15 টাকা পর্যন্ত । কিন্তু এ বছর সেই ফুল বিক্রি হচ্ছে 2 থেকে 3 টাকায় । 500 পিস ফুল নিয়ে এখন বাজারে গেলে প্রথমদিকে 2 থেকে 3 টাকায় বিক্রি হচ্ছে ৷ শেষের দিকে এক টাকা দরে ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে । অনেক সময় আমরা ফুল ফেলে দিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছি । ওষুধ, সার, মজুরির পিছনে টাকা খরচ করেও ফুলের দাম না পাওয়ায় এখন আমরা কঠিন সমস্যার মধ্যে রয়েছি ।"

সংকটে পদ্ম চাষিরা
সংকটে থাকা পদ্ম চাষিদের কথা ভেবে সরকারের দ্বারস্থ হতে চলেছেন সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি। সংগঠনের সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক জানিয়েছেন, "কোরোনা পরিস্থিতির কারণে আদৌ পুজো হবে কি না এবং হলে কত সংখ্যক হবে তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল । অনেক দেরিতে রাজ্য সরকার দুর্গাপুজোর ঘোষণা করায় চাষিরা তেমনভাবে হিমঘরে ফুল মজুত করতে পারেননি । সেইসঙ্গে বাজারে চাহিদা নেই ফুলের । তাই দামও ভালো পাচ্ছেন না চাষিরা । এতে চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর,পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, হাওড়া সহ বেশকিছু জেলার চাষি । তাঁদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হটিকালচার বিভাগের মন্ত্রীর দ্বারস্থ হব । সরকারপক্ষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত পদ্ম চাষিদের সাহায্যে পাশে দাঁড়ায় সেই অনুরোধ করব ।"

তমলুক, 6 অক্টোবর : রাবণ বধের জন্য অসময়ে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেছিলেন রামচন্দ্র । ভক্তের পরীক্ষা নিতে দেবীই সরিয়ে দিয়েছিলেন একটি ফুল । ফলে পদ্মের অভাবে বন্ধ হতে বসেছিল পুজো । আর তখনই দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের পদ্মসম চোখ অর্পণ করতে যান রামচন্দ্র । ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে দশভূজা রূপে আবির্ভূত হয়ে দেবী ফিরিয়ে দেন লুকিয়ে রাখা পদ্ম । সেই থেকেই উমার আরাধনায় লাগে 108 টি পদ্ম । আর তাই প্রতিবছরই দুর্গাপুজোর সময় পদ্ম ফুলের চাহিদা থাকে তুঙ্গে । রাজ্যের বাইরেও এইসময় ফুলের জোগান দিয়ে থাকে পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া,পশ্চিম মেদিনীপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলি । কিন্তু কোরোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক পুজো উদ্যোক্তাই এবছর তাদের পুজো বন্ধ রেখেছে । আর তাই বরাত মিলছে না পদ্মের । বাজারে চাহিদাও নেই ফুলের । ফলে চাষের পিছনে খরচ করেও ফুলের দাম না পাওয়ায় ব্যাপক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পদ্ম চাষিরা । চাষিদের আর্থিক ক্ষতির কথা মাথায় রেখে রাজ্যের হর্টিকালচার বিভাগের মন্ত্রী আবদুর রেজ্জাক মোল্লার দ্বারস্থ হতে চলেছে সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি ।

এরাজ্যসহ গোটা দেশ ও বিদেশে প্রতিবছর পুজোর সময় প্রায় 20 লাখ পদ্মের চাহিদা তৈরি হয় । যার সিংহভাগের জোগান দেয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা । যে কারণে প্রতিবছর পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, তমলুক, মহিষাদল, রামনগরসহ একাধিক ব্লকের রেল ও সরকারি জলাশয়গুলি লিজ নিয়ে পদ্ম চাষ করেন চাষিরা । ডিসেম্বর মাস থেকেই চারা (গেঁড়) লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় । গাছে ফুল আসতে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে । জুলাই মাস থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পুজোর জন্য বাজারে চাহিদা শুরু হয় পদ্মের । দুর্গাপুজো উপলক্ষে সেপ্টেম্বর থেকেই কোল্ডস্টোরগুলিতে ফুলের সংরক্ষণ শুরু করেন চাষিরা । কিন্তু এবছরের ছবিটা সম্পূর্ণ উলটো । কোরোনা সংক্রমণের কারণে বিশ্বকর্মা পুজোর সময় হিমঘরে মজুত রেখেও বাজারে চাহিদা না থাকায় ফেলে দিতে হয়েছে বহু ফুল । ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে বহু চাষিকে ।

অন্যবছর পদ্মের চাহিদা থাকে তুঙ্গে
অন্যবছর পদ্মের চাহিদা থাকে তুঙ্গে

প্রতিবছর বেঙ্গালুরু, দিল্লি, গুজরাত, বিহার ও ওড়িশা থেকে ফুল ব্যবসায়ীরা পুজোর এক মাস আগে থেকেই ফুলের বরাত দেন ৷ কিন্তু এবছর তাঁরাও মুখ ফিরিয়েছেন । অন্যান্য বছর এই মরশুমে ফুল বিক্রি হত 10 থেকে 12 টাকা দামে ৷ সেই ফুলই এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে পিস প্রতি 2 থেকে 3 টাকায় । চাষিরা জানিয়েছেন, এক বিঘা জলাশয় লিজ নিয়ে পদ্ম চাষ করতে খরচ পড়ে 30 হাজার টাকা মতো । ভালো দাম পাওয়া গেলে লাভ থাকে কুড়ি হাজার টাকার মতো । কিন্তু এবছর যে মূল্যে ফুল বিক্রি হচ্ছে তাতে আসল টাকা উঠে আসবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে । বাজারে চাহিদা না থাকায় চাষিরা সেভাবে হিমঘরে মজুত করেননি ফুল । তাই পুজোর একদম প্রাক্কালে ফুলের চাহিদা তৈরি হলেও জোগান দেওয়া সম্ভব হবে কি না তাও সুনিশ্চিত নয় । এইসব সমস্যা নিয়েই চলছেন জেলার প্রায় হাজার দু'য়েক পদ্ম চাষি ।

প্রায় আট বিঘা জলাশয়ে পদ্মের চাষ করেছেন সুনীল মাইতি । তিনি বলেছেন, "প্রতিবছর যে সকল পুজো উদ্যোক্তা আমাদের ফুলের বরাত দেন তাঁরাও এবছর কেউ আসেননি । ট্রেন না চলায় বাইরের রাজ্য ফুল পাঠানো যায়নি । বাগানের পরিচর্যা করে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে । ফুলের দাম না থাকায় টাকা উঠে আসবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি ।" আরও এক পদ্ম চাষি প্রসেনজিৎ কর জানিয়েছেন, "প্রতিবছর এ সময় পদ্মের দাম ওঠে প্রায় 10 থেকে 15 টাকা পর্যন্ত । কিন্তু এ বছর সেই ফুল বিক্রি হচ্ছে 2 থেকে 3 টাকায় । 500 পিস ফুল নিয়ে এখন বাজারে গেলে প্রথমদিকে 2 থেকে 3 টাকায় বিক্রি হচ্ছে ৷ শেষের দিকে এক টাকা দরে ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে । অনেক সময় আমরা ফুল ফেলে দিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছি । ওষুধ, সার, মজুরির পিছনে টাকা খরচ করেও ফুলের দাম না পাওয়ায় এখন আমরা কঠিন সমস্যার মধ্যে রয়েছি ।"

সংকটে পদ্ম চাষিরা
সংকটে থাকা পদ্ম চাষিদের কথা ভেবে সরকারের দ্বারস্থ হতে চলেছেন সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি। সংগঠনের সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক জানিয়েছেন, "কোরোনা পরিস্থিতির কারণে আদৌ পুজো হবে কি না এবং হলে কত সংখ্যক হবে তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল । অনেক দেরিতে রাজ্য সরকার দুর্গাপুজোর ঘোষণা করায় চাষিরা তেমনভাবে হিমঘরে ফুল মজুত করতে পারেননি । সেইসঙ্গে বাজারে চাহিদা নেই ফুলের । তাই দামও ভালো পাচ্ছেন না চাষিরা । এতে চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর,পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, হাওড়া সহ বেশকিছু জেলার চাষি । তাঁদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হটিকালচার বিভাগের মন্ত্রীর দ্বারস্থ হব । সরকারপক্ষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত পদ্ম চাষিদের সাহায্যে পাশে দাঁড়ায় সেই অনুরোধ করব ।"
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.