কালনা, 9 ফেব্রুয়ারি: গরিব ঘরে খান অথচ খাবার আসে ফাইভ স্টার হোটেল থেকে। কালনার জনসভায় এই ভাষাতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম না-করে তাঁকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দল কৃষক বিক্ষোভের পাশে থাকবে বলে জানিয়ে দিয়ে এ দিন বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ''বিজেপি হল গোঁজামিলের দল। মিথ্যে কথা বলে বহিরাগত গুন্ডা এনে ওরা বাংলাকে লুঠ করতে চায়।'' এ দিন দলবদল করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতাদেরও একহাত নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
আজ জনসভায় শুরু থেকেই মন্দির শহর কালনার মাহাত্ম্য তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, কালনায় যত মন্দির রয়েছে, তার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছে সরকার। তিনি জানান, ''কালনাকে শান্তিপুর, নবদ্বীপের সঙ্গে সংযোগের জন্য 11 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি। আগামী দিনে এখানকার মন্দির উন্নয়নে আরও কাজ করব।'' মনীষীদের নিয়ে বিজেপি নেতাদের ভুল তথ্য প্রদানে সোচ্চার হয়ে মমতা বলেছেন, ''বিজেপি মানেই সর্বনাশ। হিন্দু ধর্মের নামে ওরা কুত্সা করছে। আমরাও তো হিন্দু। হিন্দু ধর্ম অন্য ধর্মকে অপমান করে না। বহিরাগত কিছু গুন্ডা টাকা দিয়ে এখানে সব করছে।''
এ দিন নাম না-করে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীদেরও একহাত নেন তিনি। বলেন, ''কেউ অন্যায় করলেই কান মুলে দেব, থাপ্পড় দেব। যাঁরা বুঝতে পারছেন টিকিট পাবে না, তাঁরা পালিয়ে যাচ্ছেন। যাঁরা মানুষকে না-দেখে নিজের পরিবারকে দেখে, তাঁদের পাশে আমি নেই। কয়েকটা দুষ্টু গোরু গোয়ালে না-থাকাই ভালো।''
কৃষকদের নিয়ে বিজেপি বাংলার বিরুদ্ধে মিথ্যে রটনা করছে। মমতার দাবি, ''আমরা কৃষকদের টাকা দিচ্ছি না, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। শস্য বিমা দিই। কিষান বিমা করে দিয়েছি। কৃষিজমিক কর মকুব করে দিয়েছি। কৃষক সম্মান নিধি নিয়ে আপনাদের যে তালিকা পাঠিয়েছি, তাঁদের আগে টাকা দিন।'' কৃষকদের কাঙাল করে দিতেই কেন্দ্র তিন নয়া কৃষি আইন এনেছে বলে তোপ দেগে মমতা বলেন, ''তিনটি কালো আইন গরিব কৃষকদের জন্য বিপদ। কৃষকদের কাঙাল করে সব লুঠ করে দিতে চায় ওরা। কয়েকজন শিল্পপতিদের সুবিধে করে দিতেই এই আইন আনা হয়েছে। যতদিন না-পর্যন্ত কালা আইন বাতিল হচ্ছে, ততদিন কৃষকদের আন্দোলনের পাশে আমরা আছি। কৃষক ও শ্রমিকরা জোট বাঁধুন।''
আরও পড়ুন: বিধানসভায় ভিকট্রি সাইন "আত্মপ্রত্যয়ী" মুখ্যমন্ত্রীর
এ দিন অমিত শাহের নাম না করেই তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ''ওরা বলছে গরিবের ঘরে গিয়ে খাচ্ছি। কিন্তু রান্না সেই ঘরে হচ্ছে না। খাবার আসছে ফাইভ স্টার হোটেল থেকে। যে জল খাচ্ছেন, তার এক বোতলের দাম 100 টাকা। নাটক চলছে।''
তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনলে রাজ্যের আরও প্রভূত উন্নয়ন হবে বলে দাবি করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেছেন, ''মিলবে স্বাস্থ্যসাথী। বিনা পয়সায় রেশন। বাংলার শাসন গুজরাট থেকে হবে না। বাংলার মানুষই বাংলাকে শাসন করবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান নিশ্চিত করতে জনগণের সরকারই একমাত্র ভরসা। তৃণমূলের বিকল্প তৃণমূলই।''
কালনার সভা থেকেই তৃণমূলে যোগ দেন প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, মমতার অনুপ্রেরণায় তিনি অভিভূত।