ETV Bharat / state

Paschim Medinipur : করোনাকালে দোসর বন্যা, তবু চিরন্তন মাটির দিওয়ালি গড়ছে জঙ্গলমহলের কুমোরপাড়া - কুমোরপাড়া

একদিকে করোনাকাল ৷ অন্যদিকে বন্যা বিধ্বস্ত পশ্চিম মেদিনীপুর ৷ আজ রোদ থাকলেও, কাল অনিশ্চিত ৷ এত কিছু সত্ত্বেও প্রতি বছরের মতো দিওয়ালি পুতুল গড়ছেন জঙ্গলমহলে পশ্চিম মেদিনীপুরের মৃৎশিল্পীরা ৷

দিওয়ালি প্রদীপ তৈরিতে মগ্ন শিল্পী
দিওয়ালি প্রদীপ তৈরিতে মগ্ন শিল্পী
author img

By

Published : Oct 22, 2021, 7:29 PM IST

পশ্চিম মেদিনীপুর, 22 অক্টোবর : মাটির দাম আকাশছোঁয়া, বাকি জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে । আরেক দিকে আজ রোদ থাকলেও অনিশ্চয়তা রয়েছে আবহাওয়া নিয়ে ৷ সদ্য বন্যায় ভেসে গিয়েছিল গোটা জেলা ৷ এখনও বেশ কিছু অঞ্চলে জল রয়েছে ৷ সরকারি নৌকা রয়েছে যাতায়াতের জন্য ৷ তবু আসন্ন দীপাবলিতে দিওয়ালি পুতুল গড়ছেন মেদিনীপুর শহরের কুমোররা ৷ দীর্ঘদিনের নস্টালজিয়া, তাই এত বাধা সত্ত্বেও কাটেনি পুতুল গড়ার নেশা ৷

এখন আকাশ পরিষ্কার ৷ চলছে মাটি আর বালি দিয়ে তৈরি দিওয়ালি পুতুল শুকানোর কাজ । জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরে কালীপুজোর দিন দীপাবলি উৎসব পালিত হয় । আসন্ন উৎসবে দিওয়ালি পুতুলে প্রদীপ জ্বালানোর প্রচলন রয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে । এই মাটির পুতুলে প্রদীপ বা মাটির ডিবরীর সাহায্যে পলতে লাগিয়ে, কেরোসিন বা সরষার তেল ঢেলে প্রদীপ জ্বালান গ্রামগঞ্জের মানুষজন ।

এই দিওয়ালি পুতুলে থাকে ফল, চিঁড়ে, বাতাসা সহযোগে পূজার নৈবেদ্য । দু'দিন ধরে পুজো চলে এবং আতশবাজি ফাটিয়ে উৎসব পালন করে এই জঙ্গলমহলের মানুষেরা । দিওয়ালি পুতুলের রমরমা এখনও রয়েছে জঙ্গলমহলে । দীপাবলি উৎসবের বেশ কিছু দিন বাকি থাকলেও রোদ ঝলমলে আবহাওয়ায় ইতিমধ্যে দেওয়ালি পুতুল গড়ার কাজ চলছে জোর কদমে । চলছে পুতুল রঙ, যাতে হাত লাগিয়েছে বাড়ির খুদেরাও ৷

করোনাকালে দোসর বন্যা, তবু চিরন্তন মাটির দিওয়ালি গড়ছে জঙ্গলমহলের কুমোরপাড়া

আরও পড়ুন : Lakshmi Puja : কোজাগরীর আরাধনার আগে বাজারে মন্দা, লক্ষ্মীলাভের আশা ছেড়েছেন ব্যবসায়ী থেকে মৃৎশিল্পীরা

মেদিনীপুর শহরের দিওয়ালি পুতুল পাওয়া যায় মিয়া বাজার সংলগ্ন কুমোর পাড়ায় । এখানে কুমোররা সারাবছর মাটির নানা কাজের পাশাপাশি দিওয়ালি পুতুল গড়ে অতিরিক্ত আয় করে থাকেন । 2020-র কোভিড-পরবর্তী সময়ে ভাটা পড়েছে বাজারে । তাছাড়া এ বছর যে পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে ও জল ছাড়া হয়েছে, তাতে একদিকে যেমন সবকিছু জলমগ্ন, তেমনই নদীও অশান্ত । নদীর জল বাড়ায় বালির সমস্যা দেখা দিয়েছে, মিলছে না পুতুল তৈরির প্রধান উপাদান মাটি । কোনওক্রমে যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তার দামও আকাশছোঁয়া । তবু নস্টালজিয়ায় মেতে এই জঙ্গলমহলে কুমোরপাড়ার মহিলা শিল্পীরা দিওয়ালি পুতুল তৈরিতে পিছপা হননি ।

ইতিমধ্যে আকাশ পরিষ্কার হতেই তারা তড়িঘড়ি করে সেই মাটির দেওয়ালি গড়ে তা পুড়িয়ে কোনোক্রমে শুকিয়ে নিচ্ছেন আকাশের নিচে । কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ে প্রতি বছর 5-6 হাজার করে পুতুল গড়তেন একেক জন মৃৎশিল্পী । সেখানে এ বছর কেউ 1 হাজার 500, কেউবা 2 হাজার পুতুল তৈরি করেছেন ৷ চুনে ডুবিয়ে চটজলদি সেরে ফেলছেন পুতুল গড়ার প্রারম্ভিক প্রস্তুতি । যদি ফের আকাশের মুখ ভার হয়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে, দুশ্চিন্তায় রোদ থাকতে থাকতে দ্রুত কাজ সেরে ফেলছেন মৃৎশিল্পীরা ৷

মৃৎশিল্পী শিলা দাস বলেন, "আগে বাজার ভাল ছিল, কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভাল নয় । গত বছর কোভিড পরিস্থিতিতে একরকম গিয়েছে ৷ এই বছর আকাশের মুখ ভার । নদীর জল উপচে পড়ায় মাটি এবং বালি পাওয়া যাচ্ছে না । তার সঙ্গে সব কিছুর দাম আকাশ ছোঁয়া । তবু আমরা এই পরিস্থিতিতে দিওয়ালি পুতুল গড়ি ৷" তিনি জানালেন বিয়ের পরে হাতেখড়ি হয়েছিল ৷ সেই থেকে চলছে পুতুল তৈরি ৷

পুতুল গড়লেও একরাশ হতাশা নিয়ে তিনি বললেন, "জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে পুতুল গড়ে চলেছি । তবে জানি না, এই বছর দিওয়ালি পুতুল আদৌ বিক্রি হবে কি না ৷ কারণ যদি নিম্নচাপ তৈরি হয়, একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়, তাহলে কারা দিওয়ালি পুতুল কিনবে ? কারাই বা অর্ডার দেবে । মহাজনরা ভয়ে অর্ডার দিচ্ছে না । এই আতঙ্কের জন্যে আগে থেকে পুতুল শুকিয়ে নিচ্ছি ।"

আরও পড়ুন : Burdwan Kumartoli: সামনেই দুর্গাপুজো, অন্ধকারেই দিন কাটছে বর্ধমানের মৃৎশিল্পীদের

আরেক শিল্পী জ্যোৎস্না পাইন বলেন, "এখন দেওয়ালি পুতুল তৈরি করতে গিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে পড়েছি আমরা । বিশেষ করে বালি মাটি কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না । কারণ নদীর জলের ফলে মাটির দাম আকাশছোঁয়া । ফলে আদৌও কোনও রকম ব্যবসা করতে পারব কি না সন্দেহ ।" তবে যেটুকু মাটি রয়েছে তারই মধ্যে দিওয়ালি পুতুল তৈরি করে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে নিচ্ছেন তিনি ৷ তাঁরও একই ভয়, ফের আকাশ মেঘলা হলে আর পুতুল শুকনো যাবে না ৷

জঙ্গলমহলের শতাধিক পরিবারে বাচ্চা, মহিলা মিলে পুতুল করেন আর এই সময়ের উপার্জনে সারা বছর সংসার চলে । ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, যাবতীয় ব্যয় থাকে এই পুতুলের ভাগ্যে । এর উপর নির্ভরশীল কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা । এবার ব্যবসা ঠিকঠাক না হলে বছরের হিসেব-নিকেশ থেকে অনেক কিছুই বাদ যাবে ।

পশ্চিম মেদিনীপুর, 22 অক্টোবর : মাটির দাম আকাশছোঁয়া, বাকি জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে । আরেক দিকে আজ রোদ থাকলেও অনিশ্চয়তা রয়েছে আবহাওয়া নিয়ে ৷ সদ্য বন্যায় ভেসে গিয়েছিল গোটা জেলা ৷ এখনও বেশ কিছু অঞ্চলে জল রয়েছে ৷ সরকারি নৌকা রয়েছে যাতায়াতের জন্য ৷ তবু আসন্ন দীপাবলিতে দিওয়ালি পুতুল গড়ছেন মেদিনীপুর শহরের কুমোররা ৷ দীর্ঘদিনের নস্টালজিয়া, তাই এত বাধা সত্ত্বেও কাটেনি পুতুল গড়ার নেশা ৷

এখন আকাশ পরিষ্কার ৷ চলছে মাটি আর বালি দিয়ে তৈরি দিওয়ালি পুতুল শুকানোর কাজ । জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরে কালীপুজোর দিন দীপাবলি উৎসব পালিত হয় । আসন্ন উৎসবে দিওয়ালি পুতুলে প্রদীপ জ্বালানোর প্রচলন রয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে । এই মাটির পুতুলে প্রদীপ বা মাটির ডিবরীর সাহায্যে পলতে লাগিয়ে, কেরোসিন বা সরষার তেল ঢেলে প্রদীপ জ্বালান গ্রামগঞ্জের মানুষজন ।

এই দিওয়ালি পুতুলে থাকে ফল, চিঁড়ে, বাতাসা সহযোগে পূজার নৈবেদ্য । দু'দিন ধরে পুজো চলে এবং আতশবাজি ফাটিয়ে উৎসব পালন করে এই জঙ্গলমহলের মানুষেরা । দিওয়ালি পুতুলের রমরমা এখনও রয়েছে জঙ্গলমহলে । দীপাবলি উৎসবের বেশ কিছু দিন বাকি থাকলেও রোদ ঝলমলে আবহাওয়ায় ইতিমধ্যে দেওয়ালি পুতুল গড়ার কাজ চলছে জোর কদমে । চলছে পুতুল রঙ, যাতে হাত লাগিয়েছে বাড়ির খুদেরাও ৷

করোনাকালে দোসর বন্যা, তবু চিরন্তন মাটির দিওয়ালি গড়ছে জঙ্গলমহলের কুমোরপাড়া

আরও পড়ুন : Lakshmi Puja : কোজাগরীর আরাধনার আগে বাজারে মন্দা, লক্ষ্মীলাভের আশা ছেড়েছেন ব্যবসায়ী থেকে মৃৎশিল্পীরা

মেদিনীপুর শহরের দিওয়ালি পুতুল পাওয়া যায় মিয়া বাজার সংলগ্ন কুমোর পাড়ায় । এখানে কুমোররা সারাবছর মাটির নানা কাজের পাশাপাশি দিওয়ালি পুতুল গড়ে অতিরিক্ত আয় করে থাকেন । 2020-র কোভিড-পরবর্তী সময়ে ভাটা পড়েছে বাজারে । তাছাড়া এ বছর যে পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে ও জল ছাড়া হয়েছে, তাতে একদিকে যেমন সবকিছু জলমগ্ন, তেমনই নদীও অশান্ত । নদীর জল বাড়ায় বালির সমস্যা দেখা দিয়েছে, মিলছে না পুতুল তৈরির প্রধান উপাদান মাটি । কোনওক্রমে যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তার দামও আকাশছোঁয়া । তবু নস্টালজিয়ায় মেতে এই জঙ্গলমহলে কুমোরপাড়ার মহিলা শিল্পীরা দিওয়ালি পুতুল তৈরিতে পিছপা হননি ।

ইতিমধ্যে আকাশ পরিষ্কার হতেই তারা তড়িঘড়ি করে সেই মাটির দেওয়ালি গড়ে তা পুড়িয়ে কোনোক্রমে শুকিয়ে নিচ্ছেন আকাশের নিচে । কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ে প্রতি বছর 5-6 হাজার করে পুতুল গড়তেন একেক জন মৃৎশিল্পী । সেখানে এ বছর কেউ 1 হাজার 500, কেউবা 2 হাজার পুতুল তৈরি করেছেন ৷ চুনে ডুবিয়ে চটজলদি সেরে ফেলছেন পুতুল গড়ার প্রারম্ভিক প্রস্তুতি । যদি ফের আকাশের মুখ ভার হয়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে, দুশ্চিন্তায় রোদ থাকতে থাকতে দ্রুত কাজ সেরে ফেলছেন মৃৎশিল্পীরা ৷

মৃৎশিল্পী শিলা দাস বলেন, "আগে বাজার ভাল ছিল, কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভাল নয় । গত বছর কোভিড পরিস্থিতিতে একরকম গিয়েছে ৷ এই বছর আকাশের মুখ ভার । নদীর জল উপচে পড়ায় মাটি এবং বালি পাওয়া যাচ্ছে না । তার সঙ্গে সব কিছুর দাম আকাশ ছোঁয়া । তবু আমরা এই পরিস্থিতিতে দিওয়ালি পুতুল গড়ি ৷" তিনি জানালেন বিয়ের পরে হাতেখড়ি হয়েছিল ৷ সেই থেকে চলছে পুতুল তৈরি ৷

পুতুল গড়লেও একরাশ হতাশা নিয়ে তিনি বললেন, "জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে পুতুল গড়ে চলেছি । তবে জানি না, এই বছর দিওয়ালি পুতুল আদৌ বিক্রি হবে কি না ৷ কারণ যদি নিম্নচাপ তৈরি হয়, একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়, তাহলে কারা দিওয়ালি পুতুল কিনবে ? কারাই বা অর্ডার দেবে । মহাজনরা ভয়ে অর্ডার দিচ্ছে না । এই আতঙ্কের জন্যে আগে থেকে পুতুল শুকিয়ে নিচ্ছি ।"

আরও পড়ুন : Burdwan Kumartoli: সামনেই দুর্গাপুজো, অন্ধকারেই দিন কাটছে বর্ধমানের মৃৎশিল্পীদের

আরেক শিল্পী জ্যোৎস্না পাইন বলেন, "এখন দেওয়ালি পুতুল তৈরি করতে গিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে পড়েছি আমরা । বিশেষ করে বালি মাটি কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না । কারণ নদীর জলের ফলে মাটির দাম আকাশছোঁয়া । ফলে আদৌও কোনও রকম ব্যবসা করতে পারব কি না সন্দেহ ।" তবে যেটুকু মাটি রয়েছে তারই মধ্যে দিওয়ালি পুতুল তৈরি করে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে নিচ্ছেন তিনি ৷ তাঁরও একই ভয়, ফের আকাশ মেঘলা হলে আর পুতুল শুকনো যাবে না ৷

জঙ্গলমহলের শতাধিক পরিবারে বাচ্চা, মহিলা মিলে পুতুল করেন আর এই সময়ের উপার্জনে সারা বছর সংসার চলে । ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, যাবতীয় ব্যয় থাকে এই পুতুলের ভাগ্যে । এর উপর নির্ভরশীল কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা । এবার ব্যবসা ঠিকঠাক না হলে বছরের হিসেব-নিকেশ থেকে অনেক কিছুই বাদ যাবে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.