বেলদা, 10 এপ্রিল: কয়েকদিন আগে ওড়িশায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে কোরোনা আক্রান্ত বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর ছড়ায় পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা এলাকায় । গতকাল মেসেজে বৃদ্ধের মৃত্যুর খবরকে গুজব বলে জানান স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা । কোরোনা আক্রান্ত ওই বৃদ্ধের ওড়িশায় চিকিৎসা চলছে এবং তিনি আপতত সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন । কিন্তু নতুন করে তাঁর স্ত্রীও কোরোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি ।
ওড়িশায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে কোরোনা ধরা পড়ে বেলদার ওই বৃদ্ধের । তবে প্রথমে অসুস্থ অবস্থায় তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরেরর একটি নার্সিংহোমে ভরতি ছিলেন । পুলিশের তদারকিতে সেই নার্সিংহোমের তিন ডাক্তারসহ 40 জনকে কোয়ারানটাইনে পাঠানো হয়েছে । ওই হাসপাতালে ভরতি থাকা অন্য রোগীদের ছুটি দিয়ে নার্সিংহোম সিল করে দেওয়া হয়েছে । জানা গেছে, কোরোনা সংক্রমিতের মধ্যে রয়েছেন সেখাকার তিন ডাক্তার ও নার্স ।
7 এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুরের স্থানীয় একটি হাসপাতাল থেকে অসুস্থ অবস্থায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে ওড়িশার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ওই বৃদ্ধকে । 8 তারিখ অর্থাৎ বুধবার হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাঁকে । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভরতি করেন । পরের দিন অর্থাৎ 9 এপ্রিল তাঁর সোয়াবের নমুনা পরীক্ষায় জানা যায় তিনি কোরোনা আক্রান্ত । এরপর ওড়িশা সরকারের নিজস্ব পোর্টালে পশ্চিমবঙ্গের ওই বৃদ্ধকে কোরোনা আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয় । অ্যাপেলো হাসপাতালের তরফে তাঁকে ভুবনেশ্বর কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় । জানা গেছে, বেসরকারি নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর পরিবারের সদস্যরা একটি চায়ের দোকানে নেমেছিলেন চা পানের জন্য । সেইমতো ওড়িশা সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, 44 নম্বর রোগীর যাত্রাপথ ধরেই সরকার সেই চা দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের কোয়ারানটাইনে পাঠায় ।
ঘটনায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বেলদা থানা থেকে 12 কিলোমিটার দূরে বৃদ্ধের গ্রামে যান । জানা যায়, অসুস্থ হওয়ার প্রথম দিকে ওই বৃদ্ধের প্রাথমিক চিকিৎসা করেছিলেন এক হাতুড়ে ডাক্তার । বৃদ্ধের পরিবারের সব সদস্য, বাড়ির পরিচারিকাকে কোয়ারানটাইনে পাঠানো হয় । এছাড়াও যে অ্যাম্বুলেন্সের চালক তাঁকে ওড়িশা নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁকেও কোয়ারানটাইনে পাঠানো হয় । এছাড়াও ওই এলাকায় কারা ওই বৃদ্ধের পরিবারের সদস্যদের সংস্পর্শে এসেছেন তা নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয় ।
যদিও পশ্চিম মেদিনীপুরে স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিককে ঘটনার প্রথম থেকে ফোন করা হলেও তাঁর তরফে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি । তাঁর কাছে এরকম কোনও খবর নেই বলে এড়িয়েও যান বেশ কয়েকবার । এরই মধ্যে গ্রামে রটে যায় ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে । সত্যি কি মৃত্যু হয়েছে তাঁর ? সরকারি তরফে কোনও উত্তর মিলছিল না । অবেশেষে গতকাল স্বাস্থ্য আধিকারিক মেসেজে জানান, ওই বৃদ্ধ আপাতত সুস্থ আছেন, তাঁর চিকিৎসা চলছে ।
এখানে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, কীভাবে কোরোনা আক্রান্ত হলেন ওই বৃদ্ধ ? খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, তাঁর এক নাতি বাইরে থেকে ফিরেছিলেন । তাঁর থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে প্রাথমিক অনুমান । এনিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল তিন । তবে কোরোনা আক্রান্তের তথ্য দিতে স্বাস্থ্য বিভাগ কেন এত দেরি করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে । আর এইরকম চলতে থাকলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ।