কেশিয়াড়ি, 9 নভেম্বর: আগেভাগে এলআইসি করে রাখার নিদান দিলেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ ৷ মঙ্গলবার শিক্ষাক্ষেত্রে শাসকদলের দুর্নীতি, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বেহাল দশা, অবৈধভাবে সুবর্ণরেখার বালি পাচার ও বিজেপি কর্মীর উপর মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে গেরুয়া শিবিরের মিছিল ও প্রতিবাদসভা হয় কেশিয়াড়ির নছিপুরে । মিছিলটি বিষ্ণুনগর থেকে শুরু হয়ে নছিপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয় ৷ সেই সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ ৷ নছিপুর বাসস্ট্যান্ডে বিরোধীদের আক্রমণ করে তাঁর হুঙ্কার, "এবার গাড়ি আটকালে গাড়ি উপর দিয়ে চলে যাবে । মায়ের কোল খালি হয়ে যাবে ৷ এখনই এলআইসি করিয়ে নিন" (Dilip Ghosh threatens in Keshiary opposition Paschim Medinipur) ৷
14 অক্টোবর দিলীপ ঘোষ পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা স্টেশন, নন্দ মার্কেট-সহ একাধিক জায়গায় হাঁটতে বেরন ৷ সে সময় তাঁকে লক্ষ্য করে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা 'গো ব্যাক' স্লোগান দিতে থাকেন ৷ সে সময় তিনি ক্ষোভের মুখে বলেন "বুকে পা দেব ৷" সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে এদিন তিনি বলেন, "আমি কয়েকদিন আগে মর্নিংওয়াক করতে বেরিয়েছি ৷ আমার পিছনে কয়েকজন লোক ঘেউ ঘেউ করে গোটা রাস্তা স্লোগান দিয়েছে । 'গো ব্যাক', 'গো ব্যাক' করছে ৷ আমি দেখি কে রে সকালবেলা ? জীবনে তো কোনও দিন সকালবেলা ওঠে না ৷ রাতে পার্টি করে ঘুমতে যায় ৷ আমাকে দেখে উঠে পড়েছে ৷ গোটা রাস্তা ঘুরছে ৷ আমিও বললাম, চলো ৷ সারা রাস্তা ঘুরছি ৷ এক ঘণ্টা হাঁটিয়েছি ৷ মেয়েদের অবস্থা খারাপ ৷ তাঁরা আমাকে 'গো ব্যাক' বলছে ৷ আবার আমার সঙ্গে ছবিও তুলছে ৷ বিচিত্র ব্যাপার ৷"
বিরোধীদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, "মানুষ আমাদের ভোট দিয়ে জিতিয়েছে ৷ আমাকে গো ব্যাক বলছে ! ভাই, এটা আমাদের জায়গা ৷ লোক ভোট দিয়ে জিতিয়েছে ৷ কোথাকার চোরছ্যাঁচড় এসে আমাকে 'গো ব্যাক' বলবে ৷ খুব সাবধান ! কাউকে ছেড়ে কথা বলব না ৷" কেশিয়াড়ি থেকে দিলীপ ঘোষ হুঁশিয়ারি দেন, "তাদেরই কিছু চামচা আজ আসার সময় আমার গাড়ি আটকেছিল ৷ আজ কেশিয়াড়তে তাদের বলে যাচ্ছি, খবরদার কিন্তু আর কোনও দিন বিজেপির গাড়ির সামনে আসবেন না ৷" এর পরিণতি হিসেবে দিলীপ ঘোষ বলেন, "উপর দিয়ে চলে গেলে, বাবা-মায়ের কোল খালি হয়ে যাবে । এলআইসি করে আসবেন ।"
আরও পড়ুন: 'গো ব্যাক' স্লোগান শুনে দিলীপ বললেন 'বুকে পা দেব'
ভারতে বিজেপি একটা বড় দল এবং কেন্দ্রেও ক্ষমতায় আছে গেরুয়া দল ৷ গাড়ি আটকানো প্রসঙ্গে বিজেপির সহ-সভাপতির দাবি, "কেউ বলুক, আমরা কারও সভায় পথ আটকেছি, কারও রাস্তা আটকেছি কাউকে বাধা দিয়েছি ? আমাদের দরকার নেই ৷ কারণ, বিজেপি জানে বিজেপির লোক বিজেপিকেই ভোট দেবে ৷" এরপর বিরোধীদের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশ্ন, "তাতে এত জ্বলার কী আছে ? কাজ করলে লোক ভোট দেবে ৷"
সম্প্রতি শাসকদলের একাধিক হেভিওয়েট নেতাদের হাজতবাস নিয়ে তিনি বলেন, "সবে উপর থেকে দু'চারটে ভারী ভারী নেতা ভিতরে গিয়েছে ৷ রোজ কারও না কারও ডাক আসছে চা খাওয়ার জন্য ৷ দু'চার দিন ডেকে চা নয় এবার ভাত খাওয়ার জন্য রেখে দিচ্ছে ৷" তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী, ভারী ভারী নেতাদের তোলা হয়ে গিয়েছে ৷ এবার হালকা নেতাদের দিকে হাত পড়েছে ৷ তিনি কটাক্ষ করে বলেন, "এবার নীচে নামবে ৷ 80 কিলো, 70 কিলো ৷ চেহারা দেখে নিন ৷ কার ভাইপো, বডিগার্ড, চামচা, বেলচা ৷ অনেকে ভাবছে ঝড় উপর দিয়ে যাবে ৷ উপর নয়, ছোটখাটো সব গাছ উপড়ে ফেলা হবে ৷ সিবিআই কাউকে ছাড়বে না ৷"
তৃণমূল নেতাদের সম্পত্তি নিয়ে দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, "দেখে রাখুন, এই যে তৃণমূল নেতাদের নীল সাদা রঙের দু'তলা, তিন তলা পাকা বাড়ি চকচক করছে ৷ ওখানে ঘুমোতে পারবেন না ৷ সুন্দর ব্যবস্থা আছে মেদিনীপুর জেলে বা দমদমের সেন্ট্রাল জেলে ৷" সেখানে কী ভাবে থাকবেন ঘাসফুল নেতারা, তাও বাতলে দিলেন বিজেপি সাংসদ, "সুন্দর সিমেন্টের বিছানা ৷ মাথায় ইট দিয়ে ঘুমোতে হবে ৷" তৃণমূল নেতাদের দামি স্করপিও গাড়ির প্রসঙ্গও বাদ যায়নি দিলীপ ঘোষের কথা থেকে ৷ এদিন তিনি বলেন, "অনেক ভালো ভালো গাড়ি কিনেছেন নেতারা ৷ কালো, সাদা, স্করপিও, এসি লাগানো ৷ তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৷ একদিন দেখবেন, কপালে আর সেই গাড়ি চড়া হবে না ৷ পুলিশের কালো গাড়ি বাড়ির সামনে দাঁড়াবে ৷ চুপচাপ বসে চলে যেতে হবে জেলে ৷ এই বাড়ি-গাড়ি ভোগ করতে পারবেন না ৷" তৃণমূলের প্রতি তাঁর আগাম সাবধানবাণী, "আপনারা ভাবছেন পার্থবাবু, মানিকবাবুর উপর দিয়ে যাচ্ছে ? কিন্তু সবের হিসাব হচ্ছে ৷"
আরও পড়ুন: 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তলোয়ারে ধার কমে গেছে বোধহয় !' কটাক্ষ দিলীপ ঘোষের