মেদিনীপুর, 4 সেপ্টেম্বর : রানওয়ের বুক চিরে উড়ে যেত ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের যুদ্ধবিমান । বিমানের ইঞ্জিনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ভারী বুটের শব্দে তখন চারিদিক গমগম করত । এখন সেই এরোড্রাম জুড়ে ঘন নিস্তব্ধতা । চন্দ্রকোনার পুরোনো বিমানঘাঁটির দখল নিয়েছে করলা, কুমড়োর বাগান । কংক্রিটের রানওয়েজুড়ে এখন শুধুই ইতিহাস ।
গত শতাব্দীর চারের দশক । গোটা বিশ্বে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটা । জাপানি বোমারু বিমানের মোকাবিলায় দেশের বহু জায়গায় এরোড্রাম গড়ে তোলে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্স । সেরকমই মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডের ডিগ্রি মোড় । প্রায় দু'হাজার একর জায়গা জুড়ে কাঁঠাল ডিহা, কমদমডিহা, ডিগ্রি মৌজা উপর গড়ে ওঠে এরোড্রাম । সেনা ছাউনি, হ্যাঙ্গারে সেজে ওঠে গোটা এলাকা ।
যুদ্ধ শেষে বদলে যায় চিত্র । বন্ধ হয়ে যায় বিমান ওঠা-নামা । উঠে যায় সেনা ছাউনি । এরপর কেটে গেছে প্রায় 70 বছর । কালের নিয়মে ধ্বংসের মুখে ডিগ্রির এরোড্রাম । সরকারি নজর না থাকায় রানওয়ের জমি জবরদখল হয়ে গেছে । শুধু তাই নয়, সেই জমি লিজ়ে চাষ করছেন স্থানীয় চাষিরা । চওড়া রানওয়ের দখল নিয়েছে করলা, কুমড়োর বাগান ।
স্থানীয় কংগ্রেস নেতা অরবিন্দ সাই বলেন, "প্রণব মুখার্জি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী থাকাকালীন তাঁকে ডিগ্রি এরোড্রামের বিষয়ে জানানো হয়েছিল । তিনি চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু, তারপর আর কিছু হয়নি । এখানে তৈরি রানওয়ে রয়েছে । নতুন রানওয়ে বানাতে গেলে অনেক খরচ । তাই আমরা চাই বায়ুসেনা এখানে একটা ইউনিট করুক । তাহলে হয়তো এলাকার অর্থনীতিটাই বদলে যাবে ।"
গড়বেতা 3 নম্বর ব্লকের BDO অভিজিৎ চৌধুরি বলেন, "এই জায়গাটিকে পুরোনো অবস্থানে ফিরিয়ে আনা ব্লক আধিকারিকের পক্ষে সম্ভব নয় । শুনেছি বায়ুসেনার পদস্থ আধিকারিকরা একবার এসেছিলেন । এখানে নাকি ট্রেনিং ক্যাম্প করা হবে । যদি হয় তাহলে খুব ভালো হবে ।" জবরদখলের বিষয়ে তিনি বলেন, "ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিকের নেতৃত্বে তদন্ত হবে ।"
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশমি কমল বলেন, "বিষয়টি সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল নই । খতিয়ে দেখব ।"
অনেকেই চাইছেন ডিগ্রি ফিরুক তার সোনালি দিনে । এরোড্রাম থেকে আবার সগর্জনে উড়ুক ফাইটার প্লেন । ফিরে আসুক পুরোনো ইতিহাস ।