মেদিনীপুর, 11 অক্টোবর: জেলার বনেদি বাড়ি এবং জমিদার বাড়ির অন্যতম পুজো হল মেদিনীপুর শহরের মল্লিক বাড়ির দুর্গাপুজো। প্রায় 290 বছরের পুজো এ বছরও জাঁকজমকভাবে পালন করার উদ্যোগ নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। জমিদার বাড়ির প্রথা না-থাকলেও বেহারাদের কাঁধে পালকি চড়ে মায়ের বিসর্জনের রীতি চালু রেখেছে বর্তমান প্রজন্ম।
মেদিনীপুরের যতগুলি পুরনো পুজো রয়েছে তার অন্যতম হল শহরের মধ্যস্থলে অবস্থিত মল্লিক বাড়ির পুজো। আসলে এই জমিদার বাড়ির পুজোর যে ঐতিহ্য অর্থাৎ 30 জন বেহারার কাঁধে চেপে পালকি করে বিসর্জন, তা আজও বজায় রেখেছে বর্তমান প্রজন্ম। বাকি সব কালের সঙ্গে বিলুপ্ত হলেও এই মল্লিক বাড়িতে রীতি মেনে এখনও পূজিত হন মা ৷ কথিত রয়েছে, প্রায় 290 বছর আগে পূর্বপুরুষ জন্মেঞ্জয় মল্লিকের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজো। তখন এত আধুনিকতার চকচকে ছিল না। রীতিমতো ধুতি-পাঞ্জাবি পরে প্রতিপদ থেকেই মায়ের আরাধনায় মেতে উঠতেন এই জমিদার বাড়ির পরিবার পরিজনরা।
শোনা যায়, সেই সময় কামান দেগে পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতেন মল্লিক বাড়ির সদস্যরা। এরপর প্রতিদিন রীতিনীতি মেনে আড়ম্বরভাবে চলত মায়ের আরাধনা। তবে কোনওদিনই বলি প্রথা হত না এই মল্লিক বাড়ির জমিদারি পুজোর। অষ্টমী-নবমীতে অন্নকুটের মধ্য দিয়ে তৎকালীন সময়ে গ্রামবাসীদের খাওয়ানোর প্রথা ছিল। সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানের দিন ছিল বিজয়া দশমী। যেখানে বেহারা দিয়ে পালকিতে করে মা দুগ্গার বিসর্জন হত জলাশয়ে। আর তা দেখতে ভিড় জমাতেন হাজার হাজার মানুষ ৷
তবে সেই জৌলুস আজ আর নেই। একে একে জন্মেঞ্জয় মল্লিকের চার ছেলে এবং তাঁর ভাবি প্রজন্মরা সবাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছেন। বর্তমানে প্রায় হাজারখানেক সদস্য এই মল্লিক বাড়ির। যা গোটা জেলা, রাজ্যসহ ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় রয়েছে। তবে এই পুজোর বিশেষ দিনে উপস্থিত হন একে একে সবাই। প্রতিবছর পালা করে একেকজনের ভাগে একেক বছরের পুজোর দায়িত্ব পড়ে। আর এবারে দায়িত্ব পড়েছে প্রদীপ মল্লিক নামে এক মল্লিক পরিবারের সদস্যের।
এখন চলছে এই মল্লিক বাড়ির বিভিন্ন পরিষ্কারের কাজ, রং করার কাজ, সেই সঙ্গে প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রদীপ মল্লিক বলেন, "আগের অনেক প্রথাই সময়ের সঙ্গে বিলীন হয়ে গিয়েছে। পুজোর সূচনা হয় প্রতিপদ থেকেই। তিনটি ঘটে পুজো হয়। প্রতিমা সাবেকি রীতি মেনেই তৈরি হয়। মায়ের বিসর্জন হয় দশমীতেই। তবে এখনও পুরনো রীতিনীতি অনুযায়ী বেহারাদের কাঁধে চড়েই মায়ের বিসর্জন ঘটে পালকিতে।
আরও পড়ুন: একদিকে চিত্রশিল্পী অন্যদিকে ভাস্কর, শিল্পের দুই ধারাতেই সাবলীল মালদার এই মৃৎশিল্পী