কলকাতা, 17 ডিসেম্বর: প্রায় 40 বছর পর উস্তাদ আমজাদ আলি খান এবং পণ্ডিত স্বপ্নন চৌধুরীর বাজনায় সুরের সাগরে ভাসল কলকাতা। 'স্বর সম্রাট রত্ন পুরস্কার'-এ সম্মানিত হলেন আমজাদ আলি খান।
দেখতে দেখতে 12 বছরে পা রাখল 'স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল' । দেশের অন্যতম সেরা রাগ-সঙ্গীতের উৎসব বলে সমাদৃত এই ফেস্টিভ্যাল। দেশের প্রাজ্ঞ পণ্ডিত-উস্তাদরা এই রাগ-সঙ্গীতের আসরে অংশগ্রহণ করেন। এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না। 14 এবং 15 ডিসেম্বর দু'দিন ব্যাপী নজরুল মঞ্চে আয়োজিত 'স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল'-এর অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন প্রবাদপ্রতিম সরোদশিল্পী উস্তাদ আমজাদ আলি খান। এ বছর 'স্বর সম্রাট রত্ন পুরস্কার' পেলেন তিনি। তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন আরেক বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী অমিয় রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন আমজাদ আলি খান বলেন, "এই সম্মান পেয়ে আমার সত্যি ভাল লাগছে। তেজেন্দ্র প্রতি বছর ওঁর গুরুর নামে এই যে অনুষ্ঠান করেন। এর জন্য ওঁকে সাধুবাদ জানাই। তবে, আমি চাইব তেজেন্দ্রর প্রথম গুরু উস্তাদ বাহাদুর খাঁ'র নামেও উনি এমন কোনও অনুষ্ঠান শুরু করুন।"
চলতি বছরের অনুষ্ঠানের দৌলতে 40 বছর পর আমজাদ আলি খান এবং বিশিষ্ট তবলাশিল্পী পণ্ডিত স্বপ্নন চৌধুরী একসঙ্গে মঞ্চে বাজালেন। বাজনা শুরু করার আগে আমজাদ'জী বলেন, "সারা দেশে যে ভাবে নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে, তা সত্যিই দুঃখের। আমাদের দেশে দুর্গারা আজ নির্যাতিতা। তাই রাগ 'দুর্গা' দিয়ে আমি বাজনা শুরু করব। দুর্গার কান্নাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করব।"
এরপর দুই দিকপালের সুরের মূর্ছনায় ভাসল কলকাতা। রাগ 'দুর্গা'র পর রাগ 'দরবারি' এবং শেষে শ্রোতাদের অনুরোধে রাগ 'সাহানা' শোনান তিনি। প্রসঙ্গত, প্রতিবছর স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেন এই সময়ের অন্যতম আরেক সরোদশিল্পী পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার এবং তাঁর পরিবার। দায়িত্বে শ্রী রঞ্জনী ফাউন্ডেশন। তেজেন্দ্র নারায়ণের গুরু স্বরসম্রাট আলি আকবর খানের নামেই এই উৎসবের নাম।
পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণের কথায়, "আলি আকবর খান কী বিরাট মাপের শিল্পী তা পরিমাপ করার ক্ষমতা আমার নেই! ওঁর নামে এই উৎসব, আমি চাইব রাগ সঙ্গীতের অনুষ্ঠান আরও বেশি বেশি করে প্রচার পাক। স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল শুধুমাত্র দিকপাল শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে না, নবীন প্রতিভাদের সব সময় সুযোগ দিয়ে এসেছে এই উৎসব। আমার ধ্রুব বিশ্বাস এই নবীন শিল্পীরাই একদিন দিকপাল হয়ে উঠবে। এবারেও অনেক নবীন শিল্পী তাঁদের প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ পাবেন।"
এবারে দুই দিনের অনুষ্ঠানে ছিল শিল্পীদের চাঁদের হাট। অতিথি হিসেবে ছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। এ ছাড়াও ছিলেন পণ্ডিত সাজন মিশ্র-স্বর্নেশ মিশ্র (কন্ঠ সঙ্গীত), ওঁরা শোনালেন রাগ 'বাগেশ্রী'। পণ্ডিত কুমার বোস, পণ্ডিত শ্রীনিবাস জোশী এবং ভিরাজ যোশির মেলবন্ধন মনে রাখার মত। পণ্ডিত ভিমসেন যোশির পুত্র এবং নাতি কলকাতাকে মুগ্ধ করলেন। ওঁরা জানান, ভিমসেন যোশি কলকাতাকে 'সেকেন্ড হোম' মনে করতেন। তাই কলকাতা তাঁদের কাছেও খুব স্পেশ্যাল। পিতা-পুত্র রাগ 'মুলতানি' শোনান।
সরোদশিল্পী পণ্ডিত দেবাশিস ভট্টাচার্য রাগ 'কাফি', 'পিলু' বাজান। সেতার শিল্পী শুভেন্দ্র রাও শোনান রাগ মধুমন্তী এবং শেষে রাগ 'খাম্বাজ'। এবারে স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যালের ন্যতম আকর্ষণ ছিল নবীন শিল্পীদের অনুষ্ঠান। নবীন প্রতিভাবান সরোদ শিল্পী ইন্দ্রায়ুধ মজুমদারের তত্ত্বাবধানে পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণের শিষ্যরা সেতার এবং সরোদের যুগলবন্দি শোনান। ছিলেন আরও অনেক বিশিষ্ট শিল্পীরা। এই শীতের আমেজে রাগ সঙ্গীতের ওমে দুইদিন মজে রইল গোটা কলকাতা।