ETV Bharat / state

সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড, 17 লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ - SANJAY ROY

আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল শিয়ালদা আদালত ৷ শনিবারই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল ৷

ETV BHARAT
সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু যাবজ্জীবন (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 20, 2025, 2:54 PM IST

Updated : Jan 20, 2025, 3:01 PM IST

কলকাতা, 20 জানুয়ারি: আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল সঞ্জয় রায়কে ৷ 9 অগস্টের ঘটনার 5 মাস 11 দিনের মাথায় সোমবার এই সাজা ঘোষণা করেন শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস ৷ তিনি জানান, যেহেতু এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ নয়, সেজন্য সঞ্জয়কে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়নি ৷ তাকে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হচ্ছে ৷ অর্থাৎ যতদিন সে বেঁচে থাকবে, ততদিন তাকে কারাগারে থাকতে হবে ৷ পাশাপাশি 17 লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷

এই ঘটনায় বিচারক গত শনিবারই সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন ৷ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার 64 (ধর্ষণ) নম্বর ধারা, 66 (ধর্ষণের পর মৃত্যু) নম্বর ধারা এবং 103 (1) (খুন) নম্বর ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় । তাকে বিচারক বলে দিয়েছিলেন যে, এই ঘটনায় সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি অথবা সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে ৷

শিয়ালদা আদালত চত্বরে জনতার ভিড়

আজ সকাল 10টা নাগাদ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে বের করা হয় সঞ্জয় রায়কে । তাকে শিয়ালদা আদালতে পেশ করা হয় সকাল 10টা বেজে 40 মিনিটে। সে সময় আদালত চত্বরে ভিড় করে দাঁড়িয়েছিল বহু মানুষ । হাজির হন অভয়া মঞ্চের সদস্যরা । সবাই দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সরব হন । তবে সঞ্জয়ের সঙ্গে যদি কেউ এই ঘটনায় জড়িত থেকে থাকেন, তাদেরও শাস্তির দাবি জানান জনতা ৷ উল্লেখ্য, সঞ্জয় একাই দোষী কি না, সে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরই সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে আমজনতা থেকে সেলিব্রিটিরা ৷

সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড (নিজস্ব ভিডিয়ো)

আদালতে আনা হয় সঞ্জয়কে

এদিন ঠিক পৌনে এগারোটা নাগাদ আদালতের লকআপে ঢোকানো হয় সঞ্জয় রায়কে । একে একে হাজির হতে থাকেন দুই পক্ষের আইনজীবীরা ৷ ঠিক 12টা 35 মিনিটে বিচারক অনির্বাণ দাস এজলাসে ঢোকেন ৷ আদালতের দোতলায় 210 নম্বর ঘরে শুরু হয় সাজা ঘোষণার পর্ব ৷ বিচারপতি এরপর সঞ্জয় রায়ের বক্তব্য শোনেন ৷ শনিবারই আদালতে সঞ্জয় ফের দাবি করেছিল যে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে ৷ তবে সেদিন তার কথা শুনতে চাননি বিচারক অনির্বাণ দাস ৷ তিনি সঞ্জয়কে বলেছিলেন, সোমবার সাজা ঘোষণার আগে তার বক্তব্য শুনবে আদালত ৷ সেই মতোই আজ বলতে দেওয়া হয় সঞ্জয়কে ৷

'আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে'

সঞ্জয় এদিনও দাবি করে যে, সে দোষ করেনি ৷ তাকে ফাঁসানো হচ্ছে ৷ বিচারক তখন তাঁকে বলেন, "আপনার বিরুদ্ধে যে সকল তথ্যপ্রমাণ আছে । তার থেকে জানা যাচ্ছে আপনি দোষী ৷" এদিন সিবিআই ফের সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবি জানায় ৷ সব পক্ষের বক্তব্য শেষ হয় 1টা 12 মিনিটে ৷ এরপর ঘর খালি করতে বলে 2.45-এ আবার সবাইকে উপস্থিত হতে বলেন বিচারক ৷

5 মাস 11 দিনে সাজা ঘোষণা

ঠিক দুপুর 2.45 মিনিটে ফের এজলাসে আসেন বিচারক-সহ সবাই ৷ 2.51 নাগাদ সাজা ঘোষণা করে আদালত ৷ সঞ্জয় রায়কে আরজি করের চিকিৎসক ছাত্রীতে ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারদণ্ডের সাজা দেন শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস ৷ আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার 5 মাস 11 দিনের মাথায় অপরাধীর শাস্তি ঘোষণা করা হল ৷

যেভাবে এগোল তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া

উল্লেখ্য, গত বছরের 9 অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক চিকিৎসক ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয় ৷ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় সেমিনার রুম থেকে তাঁর দেহ উদ্ধারের পরই অভিযোগ ওঠে যে, তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ৷ এই নিয়ে বিক্ষোভের ঝড় ওঠে রাজ্য তথা দেশজুড়ে ৷ প্রাথমিকভাবে কলকাতা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও, তদন্ত নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠায় পরে আদালতের নির্দেশে তদন্তভার চলে যায় সিবিআইয়ের হাতে ৷ এই মামলার চার্জশিট পেশ করে সিবিআই সঞ্জয় রায়কেই মূল অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করে ৷ তবে শুনানি ও বিচারপর্ব চলাকালীন বারবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছে সঞ্জয় ৷ সে দাবি করে যে, তাকে ফাঁসাতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে ৷

থেকে গেল কিছু প্রশ্ন

তবে, এই মামলায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও গ্রেফতার করেছিল সিবিআই ৷ তাঁদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ ছিল ৷ কিন্তু নির্ধারিত সময়ে চার্জশিট পেশ না হওয়ায় তাঁদের জামিন দেয় আদালত ৷ ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের গতিপ্রকৃতি আগামী দিনে কোন দিকে যাবে তা নিয়ে চর্চা চলছে নানা মহলে ৷ সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরই আরজি করে ধর্ষণ ও খুনে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না, সঞ্জয়ের অপরাধের পেছনে আর কার কার হাত ছিল, তারা শাস্তি পাবে কবে, সেইসব প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে চিকিৎসক থেকে শুরু করে আমজনতার মধ্যে ৷ সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মানুষজন ৷

কলকাতা, 20 জানুয়ারি: আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল সঞ্জয় রায়কে ৷ 9 অগস্টের ঘটনার 5 মাস 11 দিনের মাথায় সোমবার এই সাজা ঘোষণা করেন শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস ৷ তিনি জানান, যেহেতু এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ নয়, সেজন্য সঞ্জয়কে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়নি ৷ তাকে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হচ্ছে ৷ অর্থাৎ যতদিন সে বেঁচে থাকবে, ততদিন তাকে কারাগারে থাকতে হবে ৷ পাশাপাশি 17 লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷

এই ঘটনায় বিচারক গত শনিবারই সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন ৷ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার 64 (ধর্ষণ) নম্বর ধারা, 66 (ধর্ষণের পর মৃত্যু) নম্বর ধারা এবং 103 (1) (খুন) নম্বর ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় । তাকে বিচারক বলে দিয়েছিলেন যে, এই ঘটনায় সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি অথবা সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে ৷

শিয়ালদা আদালত চত্বরে জনতার ভিড়

আজ সকাল 10টা নাগাদ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে বের করা হয় সঞ্জয় রায়কে । তাকে শিয়ালদা আদালতে পেশ করা হয় সকাল 10টা বেজে 40 মিনিটে। সে সময় আদালত চত্বরে ভিড় করে দাঁড়িয়েছিল বহু মানুষ । হাজির হন অভয়া মঞ্চের সদস্যরা । সবাই দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সরব হন । তবে সঞ্জয়ের সঙ্গে যদি কেউ এই ঘটনায় জড়িত থেকে থাকেন, তাদেরও শাস্তির দাবি জানান জনতা ৷ উল্লেখ্য, সঞ্জয় একাই দোষী কি না, সে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরই সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে আমজনতা থেকে সেলিব্রিটিরা ৷

সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড (নিজস্ব ভিডিয়ো)

আদালতে আনা হয় সঞ্জয়কে

এদিন ঠিক পৌনে এগারোটা নাগাদ আদালতের লকআপে ঢোকানো হয় সঞ্জয় রায়কে । একে একে হাজির হতে থাকেন দুই পক্ষের আইনজীবীরা ৷ ঠিক 12টা 35 মিনিটে বিচারক অনির্বাণ দাস এজলাসে ঢোকেন ৷ আদালতের দোতলায় 210 নম্বর ঘরে শুরু হয় সাজা ঘোষণার পর্ব ৷ বিচারপতি এরপর সঞ্জয় রায়ের বক্তব্য শোনেন ৷ শনিবারই আদালতে সঞ্জয় ফের দাবি করেছিল যে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে ৷ তবে সেদিন তার কথা শুনতে চাননি বিচারক অনির্বাণ দাস ৷ তিনি সঞ্জয়কে বলেছিলেন, সোমবার সাজা ঘোষণার আগে তার বক্তব্য শুনবে আদালত ৷ সেই মতোই আজ বলতে দেওয়া হয় সঞ্জয়কে ৷

'আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে'

সঞ্জয় এদিনও দাবি করে যে, সে দোষ করেনি ৷ তাকে ফাঁসানো হচ্ছে ৷ বিচারক তখন তাঁকে বলেন, "আপনার বিরুদ্ধে যে সকল তথ্যপ্রমাণ আছে । তার থেকে জানা যাচ্ছে আপনি দোষী ৷" এদিন সিবিআই ফের সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবি জানায় ৷ সব পক্ষের বক্তব্য শেষ হয় 1টা 12 মিনিটে ৷ এরপর ঘর খালি করতে বলে 2.45-এ আবার সবাইকে উপস্থিত হতে বলেন বিচারক ৷

5 মাস 11 দিনে সাজা ঘোষণা

ঠিক দুপুর 2.45 মিনিটে ফের এজলাসে আসেন বিচারক-সহ সবাই ৷ 2.51 নাগাদ সাজা ঘোষণা করে আদালত ৷ সঞ্জয় রায়কে আরজি করের চিকিৎসক ছাত্রীতে ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারদণ্ডের সাজা দেন শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস ৷ আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার 5 মাস 11 দিনের মাথায় অপরাধীর শাস্তি ঘোষণা করা হল ৷

যেভাবে এগোল তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া

উল্লেখ্য, গত বছরের 9 অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক চিকিৎসক ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয় ৷ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় সেমিনার রুম থেকে তাঁর দেহ উদ্ধারের পরই অভিযোগ ওঠে যে, তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ৷ এই নিয়ে বিক্ষোভের ঝড় ওঠে রাজ্য তথা দেশজুড়ে ৷ প্রাথমিকভাবে কলকাতা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও, তদন্ত নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠায় পরে আদালতের নির্দেশে তদন্তভার চলে যায় সিবিআইয়ের হাতে ৷ এই মামলার চার্জশিট পেশ করে সিবিআই সঞ্জয় রায়কেই মূল অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করে ৷ তবে শুনানি ও বিচারপর্ব চলাকালীন বারবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছে সঞ্জয় ৷ সে দাবি করে যে, তাকে ফাঁসাতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে ৷

থেকে গেল কিছু প্রশ্ন

তবে, এই মামলায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও গ্রেফতার করেছিল সিবিআই ৷ তাঁদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ ছিল ৷ কিন্তু নির্ধারিত সময়ে চার্জশিট পেশ না হওয়ায় তাঁদের জামিন দেয় আদালত ৷ ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের গতিপ্রকৃতি আগামী দিনে কোন দিকে যাবে তা নিয়ে চর্চা চলছে নানা মহলে ৷ সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরই আরজি করে ধর্ষণ ও খুনে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না, সঞ্জয়ের অপরাধের পেছনে আর কার কার হাত ছিল, তারা শাস্তি পাবে কবে, সেইসব প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে চিকিৎসক থেকে শুরু করে আমজনতার মধ্যে ৷ সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মানুষজন ৷

Last Updated : Jan 20, 2025, 3:01 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.