ETV Bharat / state

নতুন আশার আলো দেখছে কবিতীর্থ চুরুলিয়া

চুরুলিয়া । বিদ্রোহী কবি কাজ়ি নজ়রুল ইসলামের জন্মভিটে ৷ ইতিহাসের পাতায় নামটি জ্বলজ্বল করলেও বাস্তবে তা কার্যত অবহেলিত ৷ কবির জন্মবার্ষিকীতেও সেখানে ধরা পড়ল অবহেলার ছাপ ৷ ক্ষোভও উগরে দিলেন তাঁর পরিবারের সদস্য ও গ্রামের বাসিন্দারা ।

Nazrul
কাজী নজরুল ইসলাম
author img

By

Published : May 25, 2020, 5:23 PM IST

Updated : May 26, 2020, 3:17 PM IST

চুরুলিয়া, 25 মে: ‘‘কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট’’- গানের কথা, সুরই তাঁর বিদ্রোহী সত্ত্বার প্রমাণ দেয় ৷ ছোটো থেকেই ধর্মীয় শিক্ষায় লালিত-পালিত হলেও তিনি বরাবরই ছিলেন স্বাধীনচেতা ৷ তিনি কাজ়ি নজ়রুল ইসলাম ৷ কিন্তু, তাঁর জন্মভিটেই পড়ে রয়েছে চরম অবহেলায় । হয়নি সংস্কার ।

1899 সালের 25 মে জন্ম কাজ়ি নজ়রুল ইসলামের ৷ প্রতি বছর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মেলা বসে সেখানে ৷ কিন্তু, এবার লকডাউনের জেরে তা বসেনি । কেবল প্রস্তরমূর্তিতে মাল্যদান করেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অনেকে । তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চুরুলিয়ায় এসেছিলেন আসানসোলের মেয়র জীতেন্দ্র তিওয়ারি ও কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরি ৷ তাঁরা দিয়েছেন সংস্কারের আশ্বাস ৷

এর আগেও অনেক আশ্বাস মিললেও কার্যত অবহেলতিই রয়ে গেছে কবির গ্রাম চুরুলিয়া ৷ অথচ অজয় নদের ওই পাড়েই সুন্দর করে সাজানো শান্তিনিকেতন ৷ এই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে কবির পরিবারেও ৷ 1958 সালে কবির জন্মভিটেতেই তৈরি করা হয়েছিল নজ়রুল অ্যাকাডেমি । তার পাশেই রয়েছে সংগ্রহশালা ৷ রয়েছে কবির পদ্মভূষণ সম্মান থেকে শুরু করে তাঁর হাতে লেখা চিঠি ও পাণ্ডুলিপি ৷ এছাড়া চুরুলিয়াতেই রয়েছে কবি পত্নী প্রমীলা দেবীর সমাধি ৷ রয়েছে কবির প্রতীকী সমাধিও ৷ কিন্তু, সেই ভাবে সংস্কার হয়নি ।

এই সমাধির পিছনেও রয়েছে কাহিনি ৷ কবির শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁকে যেন প্রমীলা দেবীর সমাধির পাশেই সমাধিস্থ করা হয় ৷ কিন্তু 1962 সালে 30 জুন বাংলাদেশে কবির মৃত্যু হওয়ায় তাঁকে সেখানেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল ৷ পরে 1976 সালে ঢাকা থেকে কবির ছেলে কাজি সব্যসাচী তাঁর সমাধির মাটি নিয়ে এসেছিলেন ৷ সেই মাটি দিয়েই প্রমীলা দেবীর সমাধির পাশে কবির প্রতীকী সমাধি তৈরি করেন বিপ্লবী গণেশ ঘোষ ৷

নতুন আশার আলো দেখছে কবিতীর্থ চুরুলিয়া...

কাজ়ি নজ়রুল ইসলাম বাঙালির অনুভূতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাঁর স্মৃতি বিজড়িত চুরুলিয়া রয়ে গেছে অবহেলিতই ৷ নজ়রুল অ্যাকাডেমির সম্পাদক তথা কবির ভাইপো কাজি রেজাউল করিম বলেন, ‘‘বহুবার সরকারের কাছে সংস্কারের জন্য আবেদন করা হয়েছে ৷ মেলেনি কোনও সদুত্তর ৷ রাজ্যই হোক কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার-কবির জন্মস্থান সংস্কারে আগ্রহ দেখায়নি কেউই ৷ কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বছরের একটা সময়েই কেবল জনসমাগম হয় গ্রামে ৷ বসে বিরাট মেলা, বাংলাদেশ সহ দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই হাজার হাজার মানুষ আসে ৷ তবে লকডাউনের জেরে এবার সেটাও বন্ধ ৷’’

কবির পরিবারের আর এক সদস্য সোনালি কাজি বলেন, ‘‘যেভাবে নজরুল অ্যাকাডেমি সহ গোটা গ্রামের উন্নয়নের প্রয়োজন ছিল, তার কিছুই হয়নি ৷ চুরুলিয়া আগেও যেমন অবহেলিত ছিল, এখনও সেরকমই রয়ে গেছে ৷’’

গ্রামের বাসিন্দা রাহুল মণ্ডল অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে কবি যতটা সম্মান পেয়েছেন, তার সামান্য অংশও কবি পাননি এই রাজ্য থেকে ৷ বাংলাদেশে তিনি জাতীয় কবি হিসেবে বন্দিত অথচ এখানে সংস্কার তো দূরের কথা, নামটাই ভুলতে বসেছে অনেকে ৷ পাশেই অবস্থিত শান্তিনিকেতনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে হয়েছে কত সংস্কার । অথচ এখানে সঠিক যোগাযোগ ব্যবস্থাটাও নেই ৷ বাইরে থেকে চুরুলিয়া আসতে গেলে একমাত্র পথ আসানসোল রেলস্টেশন ও অন্ডাল বিমানবন্দর ৷ সন্ধ্যে ছ’টার পর আসানসোল থেকে চুরুলিয়া আসার কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ ’’ আসানসোল থেকে 25 কিমি দূরে অবস্থিত চুরুলিয়ায় আসার জন্য একটি মাত্র সরকারি বাস চলে তাও অনিয়মিত ৷ তাই একমাত্র ভরসা কয়েকটি মিনিবাস ৷

রাজ্য সরকারের তরফে উদ্যোগ নিয়ে একটি যুব আবাস খোলা হলেও সেখানে সারা বছর থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ কেবল মেলার সময়ই বুকিং নেওয়া হয় যুব আবাসে ৷ বাকি সময় তালাবন্দী হয়েই থাকে যুব আবাসটি ৷

তবে এত অবহেলার মাঝেও আশার আলো দেখছে কবি পরিবার ৷ গতকাল কবির জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসে সংস্কারের আশ্বাস দিয়ে গেছেন আসানসোলের মেয়র জীতেন্দ্র তিওয়ারি ও কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরি ৷ তাঁরা বলেছেন, সংস্কারের জন্য নজ়রুল অ্যাকাডেমির তরফে একটি মাস্টারপ্ল্যান দেওয়া হলেই তা তুলে দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ৷

এবারও কি প্রাপ্তি শুধুই আশ্বাস ? না নতুন রূপে সেজে উঠে সত্যিকারের কবিতীর্থ হয়ে উঠবে চুরুলিয়া । প্রশ্ন রয়েই গেছে সেখানকার বাসিন্দাদের মনে ।

চুরুলিয়া, 25 মে: ‘‘কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট’’- গানের কথা, সুরই তাঁর বিদ্রোহী সত্ত্বার প্রমাণ দেয় ৷ ছোটো থেকেই ধর্মীয় শিক্ষায় লালিত-পালিত হলেও তিনি বরাবরই ছিলেন স্বাধীনচেতা ৷ তিনি কাজ়ি নজ়রুল ইসলাম ৷ কিন্তু, তাঁর জন্মভিটেই পড়ে রয়েছে চরম অবহেলায় । হয়নি সংস্কার ।

1899 সালের 25 মে জন্ম কাজ়ি নজ়রুল ইসলামের ৷ প্রতি বছর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মেলা বসে সেখানে ৷ কিন্তু, এবার লকডাউনের জেরে তা বসেনি । কেবল প্রস্তরমূর্তিতে মাল্যদান করেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অনেকে । তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চুরুলিয়ায় এসেছিলেন আসানসোলের মেয়র জীতেন্দ্র তিওয়ারি ও কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরি ৷ তাঁরা দিয়েছেন সংস্কারের আশ্বাস ৷

এর আগেও অনেক আশ্বাস মিললেও কার্যত অবহেলতিই রয়ে গেছে কবির গ্রাম চুরুলিয়া ৷ অথচ অজয় নদের ওই পাড়েই সুন্দর করে সাজানো শান্তিনিকেতন ৷ এই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে কবির পরিবারেও ৷ 1958 সালে কবির জন্মভিটেতেই তৈরি করা হয়েছিল নজ়রুল অ্যাকাডেমি । তার পাশেই রয়েছে সংগ্রহশালা ৷ রয়েছে কবির পদ্মভূষণ সম্মান থেকে শুরু করে তাঁর হাতে লেখা চিঠি ও পাণ্ডুলিপি ৷ এছাড়া চুরুলিয়াতেই রয়েছে কবি পত্নী প্রমীলা দেবীর সমাধি ৷ রয়েছে কবির প্রতীকী সমাধিও ৷ কিন্তু, সেই ভাবে সংস্কার হয়নি ।

এই সমাধির পিছনেও রয়েছে কাহিনি ৷ কবির শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁকে যেন প্রমীলা দেবীর সমাধির পাশেই সমাধিস্থ করা হয় ৷ কিন্তু 1962 সালে 30 জুন বাংলাদেশে কবির মৃত্যু হওয়ায় তাঁকে সেখানেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল ৷ পরে 1976 সালে ঢাকা থেকে কবির ছেলে কাজি সব্যসাচী তাঁর সমাধির মাটি নিয়ে এসেছিলেন ৷ সেই মাটি দিয়েই প্রমীলা দেবীর সমাধির পাশে কবির প্রতীকী সমাধি তৈরি করেন বিপ্লবী গণেশ ঘোষ ৷

নতুন আশার আলো দেখছে কবিতীর্থ চুরুলিয়া...

কাজ়ি নজ়রুল ইসলাম বাঙালির অনুভূতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাঁর স্মৃতি বিজড়িত চুরুলিয়া রয়ে গেছে অবহেলিতই ৷ নজ়রুল অ্যাকাডেমির সম্পাদক তথা কবির ভাইপো কাজি রেজাউল করিম বলেন, ‘‘বহুবার সরকারের কাছে সংস্কারের জন্য আবেদন করা হয়েছে ৷ মেলেনি কোনও সদুত্তর ৷ রাজ্যই হোক কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার-কবির জন্মস্থান সংস্কারে আগ্রহ দেখায়নি কেউই ৷ কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বছরের একটা সময়েই কেবল জনসমাগম হয় গ্রামে ৷ বসে বিরাট মেলা, বাংলাদেশ সহ দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই হাজার হাজার মানুষ আসে ৷ তবে লকডাউনের জেরে এবার সেটাও বন্ধ ৷’’

কবির পরিবারের আর এক সদস্য সোনালি কাজি বলেন, ‘‘যেভাবে নজরুল অ্যাকাডেমি সহ গোটা গ্রামের উন্নয়নের প্রয়োজন ছিল, তার কিছুই হয়নি ৷ চুরুলিয়া আগেও যেমন অবহেলিত ছিল, এখনও সেরকমই রয়ে গেছে ৷’’

গ্রামের বাসিন্দা রাহুল মণ্ডল অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে কবি যতটা সম্মান পেয়েছেন, তার সামান্য অংশও কবি পাননি এই রাজ্য থেকে ৷ বাংলাদেশে তিনি জাতীয় কবি হিসেবে বন্দিত অথচ এখানে সংস্কার তো দূরের কথা, নামটাই ভুলতে বসেছে অনেকে ৷ পাশেই অবস্থিত শান্তিনিকেতনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে হয়েছে কত সংস্কার । অথচ এখানে সঠিক যোগাযোগ ব্যবস্থাটাও নেই ৷ বাইরে থেকে চুরুলিয়া আসতে গেলে একমাত্র পথ আসানসোল রেলস্টেশন ও অন্ডাল বিমানবন্দর ৷ সন্ধ্যে ছ’টার পর আসানসোল থেকে চুরুলিয়া আসার কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ ’’ আসানসোল থেকে 25 কিমি দূরে অবস্থিত চুরুলিয়ায় আসার জন্য একটি মাত্র সরকারি বাস চলে তাও অনিয়মিত ৷ তাই একমাত্র ভরসা কয়েকটি মিনিবাস ৷

রাজ্য সরকারের তরফে উদ্যোগ নিয়ে একটি যুব আবাস খোলা হলেও সেখানে সারা বছর থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ কেবল মেলার সময়ই বুকিং নেওয়া হয় যুব আবাসে ৷ বাকি সময় তালাবন্দী হয়েই থাকে যুব আবাসটি ৷

তবে এত অবহেলার মাঝেও আশার আলো দেখছে কবি পরিবার ৷ গতকাল কবির জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসে সংস্কারের আশ্বাস দিয়ে গেছেন আসানসোলের মেয়র জীতেন্দ্র তিওয়ারি ও কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরি ৷ তাঁরা বলেছেন, সংস্কারের জন্য নজ়রুল অ্যাকাডেমির তরফে একটি মাস্টারপ্ল্যান দেওয়া হলেই তা তুলে দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ৷

এবারও কি প্রাপ্তি শুধুই আশ্বাস ? না নতুন রূপে সেজে উঠে সত্যিকারের কবিতীর্থ হয়ে উঠবে চুরুলিয়া । প্রশ্ন রয়েই গেছে সেখানকার বাসিন্দাদের মনে ।

Last Updated : May 26, 2020, 3:17 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.