কলকাতা, 16 নভেম্বর: কসবায় প্রকাশ্য রাস্তায় তৃণমূল কাউন্সিলরকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ৷ পুলিশের উপরই ঘটনার দায় চাপালেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ৷
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, "উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের সংস্কৃতি এখানে ঢুকতে দেওয়া হবে না । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারে বারে বলেছেন অস্ত্র উদ্ধার কর । অন্তঃরাজ্য অপরাধীদের আটকাও । তারপরেও হাঁ করে বসে থাকা যাবে না । আমাদের কাউন্সিলরকে খুন করলে পরিবার একজন হারাতো । দলের ক্ষতি হতো । পুলিশকে বলব ব্যবস্থা নিন ।"
এরপরেই পুলিশের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি ৷ বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে কেন অস্ত্র ঢুকছে ? কী করে অস্ত্র ঢুকছে? পুলিশের গোয়েন্দারা কী করছেন ? এত বাইরের অপরাধী আসছে কী করে ? নেটওয়ার্ক কোথায় ?"
ফিরহাদের কথায়, "গুলি চলেনি বলে কাউন্সিলর বেঁচে গিয়েছে । না-হলে সব শেষ হয়ে যেত । পুলিশকে খুঁজে বের করতে হবে কী উদ্দেশ্যে তাঁকে খুন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে? প্রতি ঘটনায় ভিন রাজ্যের অপরাধী গ্রেফতার হচ্ছে । এত বাইরের অপরাধী রাজ্যে আসছে কী করে? পুলিশ বলছে মুঙ্গের থেকে আসছে । অস্ত্র আসছে সেটা আটকানোর ব্যবস্থা পুলিশকেই করতে হবে । বাংলার সংস্কৃতি নষ্ট করে দিচ্ছে ।"
কসবায় এত দিন বিরোধীরা বলে এলেও এখন শাসকদলের একাংশ বলছেন, প্রোমোটাররাজ চলছে । দুষ্কৃতী ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে । এই প্রশ্নের উত্তরে ফিরহাদ জানান, দুষ্কৃতী মাথাচাড়া দেওয়া সুশান্ত ঘোষ বা ফিরহাদ হাকিমের আটকানোর কথা নয় । এটা আটকানোর কথা পুলিশের । পুলিশকে বলছি এগুলো আটকান ।
ফিরহাদের মতো কার্যত একই সুর শোনা গেল কুণাল ঘোষের গলায় ৷ এই তৃণমূল নেতা বলেন, "দলীয় কাউন্সিলরের উপর হামলা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ৷ বাংলাকে বদনাম করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে । বিদেশ থেকে পেশাদার অপরাধী ও অস্ত্র আনার ষড়যন্ত্র চলছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন অন্য রাজ্য থেকে আসা অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে ৷ পুলিশকে এই বিষয়ে আরও তৎপর হতে হবে ৷"
তবে পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় ফিরহাদ হাকিমকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী শিবির ৷ বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার তাঁর মন্তব্যের কিছু অংশ সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন ৷ সঙ্গে লিখেছেন, "যিনি রাজ্যের অপদার্থ পুলিশের এত কঠোর সমালোচনা করছেন, তিনি কি হঠাৎ স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও । তিনিই রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করেন ৷ পুলিশি রাজ চালিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ভয় দেখান । যিনি পুলিশের সমালোচনা করছেন, তিনিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য ৷"
তিনি আরও লেখেন, "ফিরহাদ হাকিমের কথা থেকেই স্পষ্ট, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে সাধারণ জনগণ যেমন পুলিশের উপর আস্থা হারিয়েছে, তেমনই তৃণমূল নেতারাও ছদ্মবেশী পুলিশ বাহিনীর উপর আস্থা হারিয়েছেন ।"
Has the person who is so harshly criticizing the state’s incompetent police force suddenly experienced a bout of memory loss?
— Dr. Sukanta Majumdar (@DrSukantaBJP) November 16, 2024
The Chief Minister of the state, Mamata Banerjee, who also serves as the Home Minister, happens to be his neighbor in Kalighat. She is the one who has… pic.twitter.com/ih9FWz3bjV
অন্যদিকে হামলার চেষ্টার ঘটনায় 108 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ বলেন, "যে ঘটনা ঘটেছে সেটা আমার কাছে হতাশাজনক । আমি 107 ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর ছিলাম । নিজের পাড়ায়, নিজের বাড়ির তলায় এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে ভাবতে পারিনি । আঘাত পেয়েছি । মূল অভিযুক্তকে ধরে দিয়েছি । আশা করব সঠিকভাবে কলকাতা পুলিশ তদন্ত করবে ।"
কাউন্সিলর জানান, তাঁকে তৃণমূল নেতৃত্ব ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন ৷ এ দিন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও সুশান্ত ঘোষের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে কথা বলে আসেন । তৃণমূল কাউন্সিলর আরও বলেন, "আমি রাজনীতির লোক ৷ 35 বছর ধরে রাজনীতি করছি । এটা রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে বলে মনে হয় না । বিরোধী দলের হাত আছে বলেও মনে হয় না । ঠিক কী কারণে ঘটানাটি হয়েছে, পুলিশ তদন্ত করছে । যা ঘটেছে সেটাই থানায় জানিয়েছি ।"
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে ফিরহাদ হাকিম স্পষ্ট বলেন, "কোনও গোষ্ঠী নেই । সকলে আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক । যখন বিজেপির কেউ মারা যান তখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে আঙুল তোলেন । আর তৃণমূলের কেউ মারা গেলে সেটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব !"