আসানসোল, 14 অক্টোবর: পিতৃপক্ষের শেষ দিনে রেডিয়োতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্তোত্র পাঠের সঙ্গেই বাঙালির দুর্গাপুজো শুরু হয়ে যায়। আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হতে থাকে মা আসছেন। কিন্তু এই মহালয়াতেই বিষাদের সুর নেমে আসে আসানসোলের হীরাপুরের ধেনুয়াগ্রামে। আবাহনেই যেন বিসর্জন। চারিদিকে যখন আগমনীর সুর বাজতে থাকে, তখন মহালয়ার বিকেল পেরিয়ে গেলেই কালীকৃষ্ণ আশ্রমে দেবী বন্দনা পরেই হয় পুজো সমাপন।
আসানসোলের হীরাপুরের ধেনুয়া গ্রামে কালিকৃষ্ণ যোগাশ্রম। দামোদরের ধারে গাছগাছালি ভরা এই আশ্রমে রয়েছে বেশ কয়েকটি মন্দির। চারিপাশে সবুজ, আশ্রম চত্বরে দু'টি বড় পুষ্করিণী মনোরম করেছে পরিবেশ। এই আশ্রমেই আয়োজন হয় দুর্গাপুজোর। কালীকৃষ্ণ আশ্রমের সম্পাদক সুবল চন্দ্র খাঁ বলেন, "আনুমানিক 1937 সালে এই আশ্রমের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল । তবে আগমনী দুর্গাপুজোর প্রচলন শুরু হয় 1978 সালে। তৎকালীন আশ্রমের মহারাজ তেজানন্দ বহ্মচারী স্বপ্নাদেশ পেয়েই নাকি, এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন।"
তিনি আরও বলেন, "কালীকৃষ্ণ আশ্রমের মা দুর্গার রূপেও পরিবর্তন রয়েছে। দেবীর সঙ্গে গনেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতীকে দেখা যায় না। তার বদলে জয়া ও বিজয়া দুই সখীকে দেখা যায় মা দুর্গার সঙ্গে। অন্যদিকে মা দুর্গার সঙ্গে দেখা যায় না মহিষাসুরকেও। তাই এখানে মায়ের মুখে কোন ক্রুদ্ধ ভাব থাকে না। বরং মৃন্ময়ী মূর্তির মুখে রয়েছে প্রশান্তির ছাপ।"
ব্যতিক্রমী এই দুর্গাপুজোয় সমস্ত রীতি রেওয়াজ এখানে একই দিনে হয়ে থাকে। মহালয়ার সকালে প্রথমে নবপত্রিকাকে স্নান করিয়ে নিয়ে আসা হয় মন্দির চত্বরেই পুষ্করিণী থেকে। নিয়ে আসা হয় মায়ের ঘটও। এরপর শুরু হয় মা দুর্গার পুজো। একদিনেই নিয়ম করে সপ্তমী, অষ্টমী, নবনী ও দশমীর পুজো হয়ে থাকে। সন্ধিপুজো, যজ্ঞও নিয়ম মেনে একদিনেই হয়ে থাকে ৷
আরও পড়ুন: পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের শুরু, তিল-জলদানের মাধ্যমে তর্পণ রাজ্যজুড়ে
একদিনের এই দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠেন এলাকাবাসীরাও। ব্যতিক্রমী পুজোর দেখতে আসেন পাশ্ববর্তী পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলা থেকে দূর-দূরান্তের ভক্তরাও। ভোগের খিচুড়ি সকলে মিলে খান ঠাকুর দালানে বসেই। বিকেলে পুজো সমাপন হয় ঘট ভাসানের মধ্য দিয়ে ৷ যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধে প্রতিমা রেখে দেওয়া হয় একাদশী পর্যন্ত। তাই একটা দিন হলেও সকলে মিলে মেতে ওঠেন এই দুর্গাৎসবে ৷