দুর্গাপুর, 17 জুলাই: জেমিনি সার্কাসের সেই প্রাণবন্ত রাজুকে মনে আছে? সেই জোকার যে জীবনের দুঃখকে ভুলে জোকার সেজে অন্যদের আনন্দ দিত ৷ ঠিক ধরেছেন, সাতের দশকে মুক্তি পাওয়া রাজ কাপুর পরিচালিত ও অভিনীত 'মেরা নাম জোকার' ছবি সার্কাসের সমসাময়িক গল্প ও নেপথ্যের কাহিনী তুলে ধরেছিল দর্শকদের সামনে ৷ ধীরে ধীরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ভিড়ে শিশুদের মুখে হারিয়ে যাওয়া হাসি ফোটাতে আবার হাজির সেই জোকার ৷ নাহ, ছবির পর্দায় নয়, দুর্গাপুরের বুকে ঘাঁটি গেড়েছে টারজান সার্কাস কোম্পানি। রকমারি জিমন্যাস্টিক, বাইক, সাইকেল খেলা, স্টান্টবাজির কেরামতিতে বিবর্ণ শৈশবে পড়েছে রঙ তুলির টান ৷
সার্কাসের ম্যানেজার তথা বিহারের বাসিন্দা নুরুল হক বারবার ফিরে গিয়েছেন পুরনো দিনের সার্কাসের জনপ্রিয়তায় ৷ তিনি বলেন, আগে কত বিড় হতো ৷ হাউসফুল হয়ে যেত ৷ এখন সেই দর্শক আর নেই ৷ সবাই মোবাইলে সব দেখে নেয় ৷ সাকার্সে কেউ আগ্রহ দেখায় না ৷ কোনওরকমে চলছে এই সার্কাস ৷ সার্কাস ঠিক মতো চললে আমাদের পরিবারও ঠিক মতো চলতে পারে ৷ ছোটরা মোবাইল নিয়ে বসে আছে ৷ সার্কাস কী দেখবে ৷ এমনকী টিকিটের দাম কম করলেও লোক আসে না ৷ এমনকী, অতিমারির কারণে অনেকে এই কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছে ৷ আর নতুন শিল্পীও তৈরি হচ্ছে না ৷"
দুর্গাপুরবাসীরাও চাইছেন রঙিন জগতের ভিড়ে বাড়ে বাড়ে ফিরে আসুক সাদা-কালো যুগের সার্কাস। অভিভাবক সুনীল যাদব বলেন, "আধুনিক প্রজন্ম সার্কাস দেখতে এসে যা তারা দেখতে চায় তা দেখতে পাচ্ছে না। উলটে মোবাইলেই তারা এখন সব দেখছে। তাই ধীরে ধীরে সার্কাস লুপ্ত হতে বসেছে। তবে সরকারিভাবে যদি সার্কাস শিল্পকে আবার মানুষের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সার্কাস আবার জনপ্রিয়তা ফিরে পাবে।"
একসময় দুর্গাপুরের রথের মেলা মানেই ছিল গান্ধি মোড়ের সার্কাস। অলিম্পিক, অজন্তা-সহ একাধিক কোম্পানির সার্কাস দেখার জন্য আলাদা উৎসাহ থাকতো অবিভক্ত বর্ধমান জেলাবাসীর মধ্যে। সুদূর গ্রাম থেকে গরুর গাড়ি চড়ে আবার কেউ সাইকেলে চড়ে আবার অনেকে পায়ে হেঁটেই সার্কাসের মঞ্চে হাজির হতেন। ছোটদের কাছে ছিল এই সার্কাসের বিশেষ আকর্ষণ ৷ রঙিন মঞ্চে সেই সব বাঘ-সিংহের গর্জন শিশুদের যেমন ভয় পাওয়াতো তেমনি আনন্দও দিত ৷ কিন্তু সেই সব দি এখন অতীত ৷ তবে হাল ছাড়েনি সার্কাসের খেলোয়াড়রা ৷ জিমনাস্টিক, স্টান্টবাজি, বাইকের খেলা, জোকারদের মজাদার খেলা আজও মন ভালো করে দেয় ৷
আরও পড়ুন: বিশেষভাবে সক্ষম যুবককে রাস্তায় হেনস্থা-মারধর ! লজ্জাজনক ঘটনার সাক্ষী কলকাতা
তবে চাহিদার অভাবে ধীরে ধীরে সেই সার্কাসে অনেকটাই ভাটা পড়েছে ৷ এখন সবকিছুই মুঠোফোনে বন্দি ৷ ছোটরাও সেই অভ্যাসের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে ৷ তবে পুরনো গান আর টারজান সার্কাসের ব্যানার পড়তেই অকাল পুরোনো উৎসবে আবার যেন জোয়ার লেগেছে ৷ রকমারি জিমন্যাস্টিক, বাইক, সাইকেল খেলা, স্টান্টবাজির কেরামতি মন কেড়ে নিচ্ছে দর্শকদের।