আসানসোল, ২১ ফেব্রুয়ারি: "মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা।" বাংলা নিয়ে এমন আবেগ আজও কান পাতলে শোনা যায়। একুশে ফেব্রুয়ারির সকাল থেকেই পাড়ায় পাড়ায় "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো..." গানে মেতে উঠতে দেখা যায় আপামর বাঙালিকে। কিন্তু তারপরেও ধুঁকছে বাংলা ভাষা। শপিংমল থেকে সিনেমা হল - সর্বত্রই সাইনবোর্ডে ইংরেজির রমরমা। কোনও কোনও সাইনবোর্ডে বাংলা দেখা গেলেও তাতে অজস্র বানান ভুল চোখে পড়ে। আর এর ব্যতিক্রম নয় ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী শহর আসানসোল।
আসানসোলের রাস্তায় বেরোলে আজকাল খুব একটা বাংলা শোনা যায় না। সীমান্তবর্তী এই শহরে হিন্দিভাষী মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাসে, ট্রেনে চড়লে হিন্দি আর ভোজপুরি ভাষার জগাখিচুড়ি শুনতে হয়। শহুরে বাঙালিরাও সেই ভাষা রপ্ত করে ফেলছেন। রাস্তায় বেরোলে সাইনবোর্ড, হোর্ডিং কিংবা বাসে-ট্যাক্সিতে আজকাল আর বাংলা হরফ দেখা যায় না । যে দু'একটি জায়গায় তা দেখা যায়, সেখানেও অজস্র বানান ভুল।
যেমন আসানসোলের চেলিডাঙা অঞ্চলে একটি অভিজাত মিষ্টির দোকানের সাইনবোর্ডে ভুল মিষ্টি বানানটা ভুল। দীর্ঘদিন ধরে সাইনবোর্ডে ভুল বানান জ্বলজ্বল করছে। কারও হুঁশ নেই। আসানসোল-দুর্গাপুর রুটের বেশিরভাগ বাসের গায়ে "দূর্গাপুর" লেখা। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাতে যে ব্যানার লেখা হয়েছে, তাতেও ভুল বানান চোখকে পীড়া দেয়। প্রশাসনের সাইনবোর্ডেও চোখে পড়ে ভুল বানান। বার্নপুর রোডে পুলিশ লাইনের সামনেই কোর্ট বানান লেখা হয়েছে "কোট"।
এই বিষয়ে আসানসোলের বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা কবি অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, "অন্য ভাষার প্রভাব বাংলা ভাষায় চলে আসছে। আর সাধারণ বাঙালিরাও তাতে মজে যাচ্ছে। ফলে বাংলা ভাষা তার নিজস্বতা হারাচ্ছে। সেই দিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন বাংলা ভাষা হারিয়ে যাবে। পৃথিবীতে প্রতি দু'সপ্তাহে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে।" আসানসোলের বিশিষ্ট কবি মনোজ মাজি বলেন "এই সব বানান চোখে দেখা যায় না। লাখ লাখ টাকা খরচ করে দুর্গাপুজো হয়, অথচ লেখা হয় দূর্গা। আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে কী শিখিয়ে যাচ্ছি?"
একমাত্র মানুষ সচেতন হলেই বাংলা ভাষা আবার গর্বের ভাষা হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রয়োজন ভাষা সচেতনতার। মাতৃভাষা দিবসে এই দাবিই উঠল আসানসোলের বিশিষ্টজনদের গলায়।