দুর্গাপুর, 19 মে: যিনি নারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত, যাঁকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁকে কেন তলব করছে না সিবিআই ? এ ব্যাপারে আদালতের তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে না ৷ নাম না করে এ ভাবেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দিকে আক্রমণ শানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পাশাপাশি তিনি দাবি করেন যে, অমিত শাহ নিজেই বলেছেন যে, একবার নরেন্দ্র মোদির নাম বলার জন্য সিবিআই তাঁকেও চাপ দিয়েছিল ৷
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করে জানিয়ে দিয়েছে যে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেককে জেরা করতে পারে সিবিআই ৷ তাঁকে আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য মোটা অঙ্কের জরিমানাও করা হয়েছে ৷ দুর্গাপুরে সেই নিয়ে কথা বলতে গিয়েই, শুভেন্দুর প্রসঙ্গ টেনে আনেন তৃণমূল সাংসদ ৷ যদিও তিনি জানিয়েছেন যে, বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা আছে তাঁর ৷
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে তৃণমূল কংগ্রেসের যুব নেতা কুন্তল ঘোষ ধরা পড়ার পর কুন্তল ঘোষ দাবি করেন যে, তাঁকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে । আর তাই নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল বেঁধে যায় । বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায় । নিয়োগ দুর্নীতি মামলার এই সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস সরিয়ে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে পাঠানো হয় । সেখানেও একই রায় বহাল রাখেন বিচারপতি ৷ পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বিচারপতি অমৃতা সিনহা কুন্তল ঘোষ ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আদালতের সময় নষ্ট করার অভিযোগে 50 লক্ষ টাকা জরিমানা করেন ।
হাইকোর্ট যখন এই রায় দেয়, তখন দুর্গাপুরে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রথমে তিনি বলেন, "বিচার ব্যবস্থার উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে । কিন্তু সিবিআইয়ের কাছে যিনি অভিযুক্ত, যাঁকে টিভির পর্দায় টাকা নিতে দেখা যাচ্ছে, তাঁকে যখন সিবিআই ডাকে না, তখন কোর্টের তৎপরতা দেখা যায় না । কুন্তল ঘোষকে আমার নাম জোর জবরদস্তি করে ইডি বলতে বলেছে । আর যেদিন আমি অভিযোগ করেছি, গত 29 মার্চ, সেদিন শহীদ মিনারে একই দিনে ভারতবর্ষের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের কনক্লেভে বলেছিলেন যে, হ্যাঁ সিবিআই আমাকেও চাপ দিয়েছিল, নরেন্দ্র মোদির নাম বলার জন্য । আমাকে বলা হয়েছিল যে, নরেন্দ্র মোদির নাম যদি নাও, তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে । এটা আমি বলছি না, ভারতবর্ষের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন ।"
রাজনৈতিক নেতাদের কথায় যে ইডি-সিবিআই চলে, দেশের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই কথাকেই মান্যতা দিয়েছেন বলে দাবি করেন অভিষেক । তাঁর মত, "আমি ঠিক বলছি না ভুল বলছি, তার বিচার করবেন ভারতবর্ষের মানুষ ।"
এরপরেই ইটিভি ভারতের প্রতিবেদকের তাঁর প্রতি প্রশ্ন ছিল যে, বিচারব্যবস্থায় কি দোরোখা একাদশী দেখতে পাচ্ছেন ? যদিও এই প্রশ্নের উত্তর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এড়িয়ে গিয়ে তিনি পালটা প্রতিবেদকের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন যে, "আপনি কি মনে করেন আমি ভুল বলছি, না আমি ঠিক বলছি ? যদি মনে হয় আমি ভুল বলছি, তাহলে আমায় বলে দিন যে আমি ভুল বলছি, কেন ভুল বলছি ৷ তাহলে আমি আমার কথা প্রত্যাহার করে নেব ।"
অভিষেক এ দিনের বক্তব্যে বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন ঠিকই, তবে কেন্দ্রের শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে আদালতের তৎপরতা নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলে দিলেন ৷
আরও পড়ুন: বিচারপতি অমৃতা সিনহার রায়কে চ্যালেঞ্জ, ডিভিশন বেঞ্চে আপিল অভিষেকের