শান্তিপুর, 19 সেপ্টেম্বর : 1 টাকায় গরম সুস্বাদু সিঙাড়া খেতে চান ? চলে যান শান্তিপুরের সুত্রাগড়ে বটা ময়রার দোকানে ৷ 2021-এ মূল্যবৃদ্ধির জমানাতেও এই অবিশ্বাস্য দামে সিঙাড়া বিক্রি করছেন দিদি-ভাই, অলোক দাস ও নীলিমা দাস ৷ সকাল হলে এক টাকার সিঙাড়া কিনতে ভিড় জমে যায় দোকানে ৷ অন্য লোকের মুখে শুনে দূর থেকেও মানুষ আসেন এই সিঙাড়ার খোঁজে ৷
বটা ময়রার দোকানের ইতিহাস জানালেন বর্তমান প্রজন্মের অলোক দাস ও নীলিমা দাস ৷ অলোক দাস জানালেন, এই দোকানের বয়স প্রায় 250 বছর ৷ তিনি নিজে প্রায় 40 বছর ধরে সিঙাড়া বিক্রি করছেন ৷ তাঁর দাদু মন্মথ দাস এই দোকান বানিয়েছিলেন ৷ তাঁর বাবা সন্তোষ দাসের সময়ে দোকানের নাম হয় বটা ময়রার দোকান ৷ তখন তিনিও স্কুলের পরে বাবার সঙ্গে সিঙাড়ার কাজে হাত লাগাতেন ৷ সেই আমলে চার আনা, আট আনায় সিঙাড়া বিক্রি হত ৷ এখন 1 টাকা দাম হয়েছে ৷ তাঁর দিদি নীলিমা দাস জানালেন, তাঁর মা মারা যাওয়ার পর 11 বছর বয়স থেকে সিঙাড়া বানানোয় লেগেছিলেন ৷ আজও তা চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ লাভ-ক্ষতি অত কিছু ভেবে সিঙাড়া বানান না তাঁরা ৷
আরও পড়ুন : Ranu Mondal Biopic: তৈরি হচ্ছে বায়োপিক, ঈশ্বরের দান বলছেন রাণাঘাটের রাণু মণ্ডল
1 টাকায় এ যুগে সিঙাড়া বিক্রি করে চালাচ্ছেন কী করে ? এর উত্তরে অলোকবাবু জানালেন, চারদিকে বিজ্ঞাপন দেওয়ায় অনেকটাই বেড়েছে বিক্রি ৷ সারা দিনে 500-600 সিঙাড়া বিক্রি হয় ৷ কখনও তা 700তেও পৌঁছায় ৷ আর দোকানের ভাড়া দিতে হয় না ৷ কোনও কারিগর নেই ৷ তাই এখনও এই দামে দিতে পারছেন ৷ গ্যাস, ময়দা, তেল সবকিছুর দাম বেড়েছে, তাও এই দাম দেখে অনেকে ক্রেতাই অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন অলোক দাসকে ৷ কিন্তু তিনি বললেন, "এখনও দিচ্ছি ৷ আগে থেকে করে আসছি ৷ আর বাচ্চা ছেলেমেয়েদের হাতে বাবা-মায়েরা 1 টাকা কি 2 টাকা দেন ৷ তাই তারাও আসে সিঙাড়া কিনতে ৷ ওদের জন্য বাড়াতে পারছি না এখনও ৷" চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে পরে কী হবে নিশ্চিত করে বলতে পারলেন না অলোক দাস ৷
সিঙাড়া কিনতে এসেছিলেন শঙ্কর ঘোষ ৷ তিনি জানালেন, এখনও এই দামে সিঙাড়া বিক্রির জন্য এঁদের ধন্যবাদ ৷ তিনি আগাগোড়াই এখান থেকে সিঙাড়া কিনছেন ৷ তিনি বললেন, "সিঙাড়া খেতে ভাল ৷" এই দামে অবাক লাগে তাঁরও ৷
কড়াই থেকে ভেজে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে ফুরিয়ে যায় গরম সিঙাড়া ৷ সারাদিনই দোকান খোলা থাকে ৷ আর এই অঞ্চলে নতুন মানুষ এসে প্রথমেই এক টাকার সিঙাড়ার খোঁজ করেন । আজ পর্যন্ত কোনও ক্রেতাকেই ফিরে যেতে হয়নি ৷ অলোকবাবুর দিদি নীলিমা দাস 65 বছর বয়সেও একমনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সিঙাড়া তৈরির কাজ করে যান প্রতিদিন । এখন এক টাকার সিঙাড়া মানেই শান্তিপুরের সুত্রাগড় অঞ্চলের বটা ময়রার দোকান ।