কৃষ্ণনগর, 15 জানুয়ারি : টুসু লৌকিক দেবী । কুর্মি , ওরাঁও , মুণ্ডা , রাজোয়ার সম্প্রদায়ের মানুষেরা টুসুকে কুমারী হিসাবে কল্পনা করেন । আর সেই কারণে মূলত কুমারীরাই এই পুজোর ব্রত পালনে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করে থাকেন । নদিয়ার বিভিন্ন আদিবাসী এলাকায় আয়োজিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী টুসু উৎসব ।
টুসু আদিবাসী জনজাতির উৎসব । অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিন থেকে শুরু হয়ে পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির দিন শেষ হয় । আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা টুসুকে কুমারী হিসাবে কল্পনা করে থাকেন । সেই কারণে মূলত কুমারীরাই এই পুজোর ব্রত পালনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন । এই উৎসব পালনের চারদিন চাউরি , বাউড়ি , আঘান ও মকর নামে পরিচিত ।
চাউরির দিন মেয়েরা বাড়ির উঠোন পরিষ্কার করে গোবর মাটি দিয়ে নিকিয়ে দেন । এর পর ঢেকিতে চালের গুড়ো তৈরি করা হয় । পরে চাউরির দিন বিভিন্ন আকৃতির মিষ্টি পুর দেওয়া পিঠা তৈরি করা হয় । এই পিঠা উঠি পিঠা নামে পরিচিত ।
বাউরির রাত 10 টা থেকে টুসুর জাগরণ অনুষ্ঠিত হয় । কুমারী মেয়েরা ফুলের মালা দিয়ে বাড়ি সাজান । এই রাতে ভোগ রান্না হয় , ভোগের সঙ্গে থাকে ছোলা , মিষ্টি ও বিভিন্ন ডাল ভাজা প্রভৃতি । আঘানের দিন সকালে একসাথে পল্লির মোড়ে এক সঙ্গে দল বেঁধে গান করে । এতে পল্লি ভিত্তিক দল অংশগ্রহণ করে ।
আরও পড়ুন শেষ পুণ্যস্নানের যোগ, গঙ্গাসাগরে বিদায়ের সুর
উৎসবের শেষদিন অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির দিন মেয়েরা গান গাইতে গাইতে টুসু দেবীকে বাঁশ বা কাঠের তৈরি রঙিন কাগজে সজ্জিত চতুর দোলায় বসিয়ে জলাশয় বা নদীতে বিসর্জন দেন ।
জলাশয়ের সামনে প্রত্যেকে একে অপরের টুসুর ব্যঙ্গ করে গান গাইতে গাইতে টুসু দেবীর বিসর্জন দেন । টুসু বিসর্জনের পরে মেয়েরা নদী বা পুকুরে স্নান করে নতুন কাপড় পরেন । এদিকে ছেলেরা কাঠ , খড় ,পাটকাঠি দিয়ে ঘর বানিয়ে পোড়ান । শেষ হয় টুসু উৎসব ।