মালদা, 9 অগাস্ট : খুন না কি আত্মহত্যা? এক সদ্য বিবাহিত যুবতির অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই প্রশ্ন উঠছে মানিকচকে ৷ ওই যুবতির আব্বার বাড়ির সদস্যদের দাবি, তাঁদের মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে৷ এনিয়ে এখনও পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়নি । তবে, ঘটনার পর থেকেই পলাতক মৃতের শওহর সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন৷ ঘটনার প্রেক্ষিতে আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে মানিকচক থানার পুলিশ ৷
ঘটনাটি মানিকচক ব্লকের চৌকি মীরদাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কোরিটোলা গ্রামের৷ মৃত যুবতির নাম পায়েল বিবি৷ বয়স ১৯ বছর৷ মাত্র ৯ মাস আগে পায়েলের নিকাহ হয় কোরিটোলা গ্রামের যুবক ওবায়েদুর রহমানের সঙ্গে ৷ ওবায়েদুর পেশায় শ্রমিক ৷ বছরের বেশিরভাগ সময় ভিনরাজ্যে কাজে যায় ৷ গত মঙ্গলবারই সে ভিনরাজ্য থেকে বাড়ি ফিরে এসেছে ৷ পায়েলের আব্বার বাড়ির সদস্যদের বক্তব্য, নিকাহর পণ বাবদ একটি টেলিভিশন ও শো-কেস দাবি করেছিল ওবায়েদুর ও তার পরিবার ৷ কিন্তু অভাবের তাড়নায় ৯ মাস পরেও সেই দাবি পূরণ করতে পারেননি তাঁরা ৷ এর জন্য প্রায়ই পায়েলকে কথা শোনাত শ্বশুরবাড়ির লোকজন ৷ তাঁর উপর মানসিক অত্যাচারও চালানো হত ৷ গত এক মাস পায়েলকে একদিনের জন্যও আব্বার বাড়ি যেতে দেওয়া হয়নি ৷ এনিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন পায়েল ৷
পায়েলের আব্বার বাড়ি কোরিটোলা গ্রামেই ৷ তাঁর আম্মা হাসিনা বিবি বলেন, "গত পরশুই মেয়ে আমাকে টিভি আর শো-কেসের কথা বলেছিল৷ বলেছিল, আম্মা, টিভি আর শো-কেস না দিলে আমাকে এরা বাড়ি আসতে দেবে না ৷ বকেয়া পণের জন্য গত একমাস মেয়েকে ওরা একবারও আমাদের বাড়ি আসতে দেয়নি ৷ মেয়ের উপর অত্যাচার চালাত ওরা ৷ মারধরও করত ৷ আজ আমি নিজের কাজে একটু বাইরে যাই ৷ ফেরার সময় দেখি, ওবায়েদুরদের বাড়ির সামনে ভিড় ৷ জিজ্ঞাসা করায় লোকজন জানায়, পায়েল গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে ৷ ভিতরে ঢুকে দেখি, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির কেউ সেখানে নেই ৷ সবাই পালিয়ে গেছে ৷ আমার মেয়েকে ওরা পণের জন্য শ্বাসরোধ করে খুন করে গলায় ওড়না বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়েছে৷"
এদিকে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের অবর্তমানে পায়েলের আব্বার বাড়ির লোকজনই দড়ি কেটে তাঁকে নিয়ে যান স্থানীয় মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে ৷ কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা পায়েলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ৷ খবর পেয়ে হাসপাতালে যায় মানিকচক থানার পুলিশ ৷ ততক্ষণে হাসপাতাল চত্বরে জড়ো হয়ে যায় শ'খানেক গ্রামবাসী ৷ তারা এই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানায় ৷ গ্রামবাসীদের জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে সেখানে যান মানিকচক থানার OC দেবব্রত চক্রবর্তী ৷ যান BDO সুরজিৎ পণ্ডিতও৷ তিনিই পায়েলের মৃতদেহের ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত করেন ৷ এরপর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় মালদা মেডিকেলে ৷
মানিকচক থানার OC জানিয়েছেন, এখনও মৃতের আব্বার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি ৷ এই ঘটনায় আপাতত তাঁরা একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছেন ৷ এখনও পর্যন্ত ওই যুবতির শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে ৷