মালদা, 29 মার্চ : কোনও পারিবারিক কারণে নয়, পাতানু মণ্ডলকে রাজনৈতিক কারণেই খুন করা হয়েছে। BJP-র হয়ে ভালো কাজ করায় তাঁকে খুন করেছে তৃণমূল। আজ একথা জানান মালদা জেলা BJP সভাপতি সঞ্জিত মিশ্র।
বুধবার রাতে পাতানু মণ্ডলকে ঘরে ঢুকে গুলি করে খুন করা হয়। এরপর তাঁকে নিয়ে শুরু হয় টানাপোড়েন। BJP-র তরফে দাবি করা হয় পাতানু তাদের কর্মী। অন্যদিকে এই ঘটনাকে পারিবারিক কোন্দল বলে দাবি করেছেন জেলা তৃণমূলের অন্যতম নেতা গৌরচন্দ্র মণ্ডল। একধাপ এগিয়ে নিহত পাতানুকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের মালদা জেলা কার্যকরী সভাপতি।
মালদা জেলা BJP সভাপতি সঞ্জিত মিশ্র বলেন, "পাতানু মণ্ডল আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী ছিল। দু'দিন আগে উত্তর মালদা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের খিদিরপুর এলাকায় গেছিলাম। সেদিন পাতানু প্রায় 5 হাজার মানুষকে জমা করেছিল। এটাই তৃণমূলের রাগের কারণ। সেই রাত থেকেই পাতানু ও তাঁর পরিবারের উপর আক্রমণ শুরু হয়। সে স্ত্রীকে আশ্বস্ত করে জানায় ভোটের কাজে বাড়ি ফিরতে রাত হলেও কেউ যেন চিন্তা না করে। এরপর গতরাত সাড়ে 12টা নাগাদ 2 দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকে তাকে লক্ষ্য করে 4টি গুলি করে পালায়।"
আরও পড়ুন : স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামীর হাতে খুন ব্যক্তি; "দলীয় কর্মী", দাবি BJP-র
গতকাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অরিন্দম সরকার জানান, এই ঘটনায় পাতানু মণ্ডলের স্ত্রী তাঁর অভিযোগপত্রে যে দু'জনকে অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, তাদের একজন তাঁর প্রাক্তন স্বামী সুমিত মণ্ডল ওরফে দীনেশ, দ্বিতীয়জন তাঁরই বাবা সুবোধ দাস। তাহলে এর সঙ্গে তৃণমূলের যোগ কোথায়? প্রশ্নের উত্তরে BJP-র জেলা সভাপতি বলেন, "গোটা বিষয় নিয়ে পুলিশ বাজারে একটা গল্প ছেড়েছে। পাতানু মণ্ডলের স্ত্রীর আগে একটি বিয়ে হয়েছিল। পরে তিনি পাতানুকে বিয়ে করেন। সেটাও 2 বছর আগে। পুলিশ গল্প ছড়ানোর চেষ্টা করছে, রুমা মণ্ডলের পূর্বতন স্বামী প্রতিশোধ নিতে পাতানুকে খুন করেছে। কিন্তু এলাকাবাসীর সঙ্গে এনিয়ে কথা বলে আমরা দেখেছি, এমন কোনও বিষয় নেই। 2 বছর আগেই সব মিটে গেছে। এনিয়ে কোনও গোলমাল হয়নি। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক খুন। ওই ছেলেটি BJP-র হয়ে ভালো কাজ করার জন্যই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এনিয়ে জেলাজুড়ে BJP কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। আজ পাতানু মণ্ডলের ময়নাতদন্ত হবে। জেলার প্রতিটি এলাকা থেকে দলীয় কর্মীরা হাসপাতালে জমা হবে। হাসপাতাল থেকে আমরা পাতানু মণ্ডলের মৃতদেহ দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যাব। সেখানেও আমাদের কর্মীরা থাকবে। আমাদের এই পরিকল্পনা জানানোর জন্য গতকাল পুলিশের কাছে যাওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু পুলিশ বলছে, তারা এব্যাপারে কিছু জানে না।"
ভোটের মুখে মৃতদেহ নিয়ে যদি মিছিল করা হয় তবে কি তা অন্যপক্ষের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া নয়? সঞ্জিতবাবু বলেন, "এটা কারোর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার বিষয় নয়। একটা অমানবিক ঘটনার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ। তৃণমূল আজ একটা পিশাচের দলে পরিণত হয়েছে। তাদের পৈশাচিক চেহারা মানুষ জানুক। সেই কারণেই আমরা এই মিছিল করতে চাইছি। এই ঘটনাকে নিয়ে আমরা ভোটের রাজনীতি করতে চাই না। আমরা শুধু এই অমানবিক ঘটনা মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই।"
ইংরেজবাজার থানার IC শান্তনু মিত্র জানিয়েছেন, মৃতদেহ নিয়ে মিছিলের বিষয়ে BJP-র পক্ষ থেকে এখনও পুলিশের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। নির্বাচনের মুখে এমন মিছিল করা যায় কি না তা তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে খোঁজ নিচ্ছেন।