মালদা, 26 সেপ্টেম্বর: বাবা ছিলেন একসময়ের প্রথিতযশা শিল্পী ৷ মাটির মূর্তি কিংবা আলকাপ গান, দুই জগতেই তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ ৷ সেই মনোহরচন্দ্র সাহার ছেলে হয়ে গেলেন হোমগার্ড ৷ পুলিশ বিভাগে দীর্ঘদিন চাকরি করলেও শিল্প তাঁর রক্তে ৷ সময়ের অভাবে ও নেশার টানে এতদিন প্রতিবছর বানিয়ে এসেছেন মাতৃমূর্তি ৷ অবশেষে গতবছর চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন ৷ এবার তাঁর সারাটা সময়জুড়ে শুধুই শিল্পের ভাবনা ৷ নতুন আঙ্গিকে, নতুন মাধ্যমে কীভাবে নতুন ঘরানার প্রতিমা তৈরি করা যায়, সেই ভাবনাতেই কেটে যায় দিন ৷
মাথায় রয়েছে পরিবেশ রক্ষার ভাবনাও ৷ সেই ভাবনা থেকেই 2006 সাল থেকে মাটি দিয়ে মূর্তি গড়া ছেড়ে দিয়েছেন ৷ মাধ্যম হিসাবে একেকবার একেক ধরনের সামগ্রী বেছে নিয়েছেন ৷ এবার ভুট্টা ফলের বিভিন্ন অংশ তাঁর প্রতিমা তৈরির উপকরণ ৷ প্রতি বছরের মতো এবারও শিল্পী বিষ্ণুচন্দ্র সাহা ছাপ ফেলতে চলেছেন জেলাবাসীর মনে ৷ স্ত্রী পূর্ণিমাদেবী আর মেয়ে বিপাশা, এই হল বিষ্ণুবাবুর পৃথিবী ৷ সেই পৃথিবীর অর্ধেক অংশজুড়ে তাঁর শিল্পচেতনা, বাকি অংশে মেয়ে ৷ বাবার ভাবনার শরিক এখন মেয়েও ৷ শুধু ভাবনাই বা কেন! অন্যতম সহকারীও বটে ৷ বাবাও চান, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তাঁর শিল্প মাখানো রক্ত বয়ে যাক মেয়ের ধমনী দিয়েও ৷
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন এবার বিষ্ণুবাবুর মূর্তি তৈরির থিম ৷ তাঁর দুর্গা একাধারে যেমন ভারতীয়, অন্যদিকে ইউরোপিয়ানও ৷ শুধু শারীরিক গঠন নয়, ফ্যাশানেও তিনি প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মিলন ঘটানোর চেষ্টা করছেন ৷ সেই ছাপ থাকছে মূর্তিতেও ৷ সন্তানদের সঙ্গে মায়ের শরীরময় বিভিন্ন ধরনের ট্যাটু ৷ সেখানেও দুই ঘরানার শিল্প অটুট ৷ বিষ্ণুবাবু বলেন, "প্রতি বছরই নতুন মাধ্যমে প্রতিমা বানিয়ে মানুষকে নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি ৷ এবারও মূর্তিতে মাটির কোনও ব্যবহার নেই ৷ সেই জায়গায় গমের ভুসি, ধানের তুষ আর ভুট্টা ফলের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করছি ৷ বিকল্প মাধ্যমে প্রতিমা তৈরি করে আমি পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা দিতে চাইছি ৷"
মেয়ে বিপাশার কথায়, "ছোট থেকেই দেখে আসছি, প্রতি মুহূর্তে বাবা নতুন কিছু চিন্তাকে সৃষ্টির পথে এগিয়ে নিয়ে যান ৷ সেটা ফেলে দেওয়া জিনিস হোক কিংবা অন্য কিছু ৷ হয়তো সেসব মানুষের ভাবনাতেও আসবে না ৷ আমি আমার বাবার জন্য গর্বিত ৷"
আরও পড়ুন: সামনেই পুজো, কাঁচামালের সংকটের মধ্যেও জীবন-জীবিকা বাঁচাতে তৎপর চন্দ্রকোনার মালাকাররা