ETV Bharat / state

প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল কণ্ঠ, মহালয়ার সকালেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কাছে ক্ষমা চান উত্তম - উত্তমকুমার বলেছিলেন, তিনি মহিষাসুরমর্দিনী করতে চাননি

আচমকাই 1976 সালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণর বদলে উত্তমকুমারকে দিয়ে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ করানো হয় ৷ কিন্তু তা মানতে পারেনি বাঙালি ৷ বিক্ষোভ দেখানো হয় আকাশবাণী ভবনের সামনে ৷ ষষ্ঠীর দিন ফের সম্প্রচার করতে হয়েছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী । তবে এখানেই শেষ নয় ৷ পরে বীরেন্দ্রবাবুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন মহানায়ক ৷ ক্ষমাও চান তিনি ৷

ছবি
author img

By

Published : Sep 28, 2019, 4:03 AM IST

Updated : Sep 28, 2019, 5:35 PM IST

কলকাতা, 28 সেপ্টেম্বর : পিতৃপক্ষের শেষ, দেবীপক্ষের শুরু । শিউলির গন্ধে ভরা শরতের অমাবস্যার ভোর আজও যার দেবী বন্দনায় মুখরিত ৷ আজও মহালয়ার ভোরে যার মহিষাসুরমর্দিনী না শুনলে অসম্পূর্ণ থেকে যায় আপামর বাঙালির শারদোৎসব ৷ তিনি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ৷ পেরিয়েছে অনেক বছর ৷ রেডিয়োয় মহালয়া শোনার সেই নেশাও ধীরে ধীরে হারিয়েছে ৷ তবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের সেই মহালয়া পাঠেও এক সময় সংকীর্ণ রাজনীতি থাবা বসিয়েছিল ৷ আচমকাই 1976 সালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণর বদলে উত্তমকুমারকে দিয়ে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ করানো হয় ৷ কিন্তু তা মানতে পারেনি বাঙালি ৷ বিক্ষোভ দেখানো হয় আকাশবাণী ভবনের সামনে ৷ ষষ্ঠীর দিন ফের সম্প্রচার করতে হয়েছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী । তবে এখানেই শেষ নয় ৷ পরে বীরেন্দ্রবাবুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন মহানায়ক ৷ ক্ষমাও চান তিনি ৷ কী হয়েছিল সেদিন? তৎকালীন সময়ের নানা কথা উঠে এল বীরেন্দ্রকৃষ্ণের উত্তরসূরির স্মৃতিচারণে ৷

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উত্তরসূরিরা সকলেই এখন বিদেশে ৷ যাঁরা কলকাতায় আছেন তাঁরাও এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে । আজও উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরের টাউন স্কুল সংলগ্ন সাত নম্বর রামধন মিত্র লেনের বাড়িতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জ্ঞাতি,শরিকি সকলে রয়েছেন । তবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের ঘরেই এখনও থাকেন মেয়ে সুজাতা ভদ্র ৷ 86 বছর বয়সে এসে স্মৃতিতে মরচে ধরেনি ৷ বলেন, "উত্তমকুমার মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ করার পর তিনদিন আমরা বাড়িতে থাকতে পারিনি । বাড়ির সামনে হাজার হাজার লোক । ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন তাঁরা ৷ গোলমাল হয়েছে । রাস্তায় নো এন্ট্রি বোর্ড লাগানো রয়েছে । উত্তমকুমার বাবাকে বলেছিলেন, তিনি মহিষাসুরমর্দিনী করতে চাননি । তাঁকে জোর করে করানো হয়েছিল ।"

দেখুন ভিডিয়ো

সত্যিই এক বিরল কণ্ঠ ৷ এই কণ্ঠ বাঙালির ঘরে আর ফেরেনি ৷ মহালয়া এবং মহিষাসুরমর্দিনী নিয়ে অনেকে অনেক গবেষণা করেছেন । কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বিকল্প আজও পাওয়া যায়নি ৷ মেয়ে সুজাতার বক্তব্য, "সেবার উত্তমকুমার মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ করলেন । বাবা শুনে বলেছিলেন, লোকে নতুন কিছু চায় । উত্তমকুমারের মহালয়া মানুষ শুনবে । নতুনত্ব সবাই চায় । কিন্তু আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ উত্তমকুমারকে দিয়ে মহালয়ার ভোরে মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ করিয়ে সফল হয়নি । বাধ্য হয়ে ফের বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী বাজাতে হয়েছিল রেডিয়োতে । লাইভ অনুষ্ঠানের সময় অন্ধকার ছাদে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে সবাই আকাশবাণী কলকাতার মহিষাসুরমর্দিনী শুনতেন৷"
সুজাতার স্মৃতিচারণে উঠে এল আকাশবাণীতে মহালয়া পাঠ করতে যাওয়ার দিনগুলি ৷ বললেন, "রাত দুটোর সময় আকাশবাণী ভবন থেকে গাড়ি এসে বাবাকে নিয়ে যেত । যুদ্ধের পরে সরাসরি অনুষ্ঠান আর হয়নি ৷ তারপর থেকে মহিষাসুরমর্দিনীর রেকর্ড চালানো হত ৷ কিন্তু প্রতি মহালয়ার ভোরেই তিনি যেতেন আকাশবাণী ভবনে । কেউ কোনও ভুল-ত্রুটি করলে শুধরে দিতেন । বাবার দৈনন্দিন জীবন, স্মৃতি বিজড়িত বহু জিনিসের কথাও উঠে এল সুজাতার কথায় ৷ বললেন, "বাবা অল্প সময় বাড়িতে থাকতেন । যেটুকু সময় থাকতেন নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন । শেষের দিকে শরীর ভালো না থাকায় খুব একটা বের হতেন না । বাড়িতেই শুয়ে, বসে, পড়াশোনা করতেন ।"

তবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের অনেক বই, জিনিসপত্রের আজ কোনও হদিশ নেই ৷ এক সময় যাঁরা বাড়ি আসতেন কিছু জিনিস নিয়ে গেছেন ৷ আর ফেরত দেননি ৷ অনেকে অনেক কিছু করে নিয়েছেন । কিন্তু বাবা কিছুই করতে পারেননি । আক্ষেপ মেয়ের ৷ তবে এই সব কিছুর ঊর্ধ্বে তিনি বাঙালিকে যা দিয়ে গেছেন তা কোনও দেওয়া-নেওয়ার মাপকাঠিতে মাপা যায় না ৷

আজ মহালয়া ৷ হয়তো আজও কোনও রেডিয়োকে ঘিরে চাদর মুড়ি দেয়ে সবাই শুনছেন মহিষাসুরমর্দিনী ৷ আবার শরতের আকাশ ভরে উঠেছে তাঁর কণ্ঠে -"আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর । ধরণীর বহিরাকাশে অন্তর্হিত মেঘমালা ।"

কলকাতা, 28 সেপ্টেম্বর : পিতৃপক্ষের শেষ, দেবীপক্ষের শুরু । শিউলির গন্ধে ভরা শরতের অমাবস্যার ভোর আজও যার দেবী বন্দনায় মুখরিত ৷ আজও মহালয়ার ভোরে যার মহিষাসুরমর্দিনী না শুনলে অসম্পূর্ণ থেকে যায় আপামর বাঙালির শারদোৎসব ৷ তিনি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ৷ পেরিয়েছে অনেক বছর ৷ রেডিয়োয় মহালয়া শোনার সেই নেশাও ধীরে ধীরে হারিয়েছে ৷ তবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের সেই মহালয়া পাঠেও এক সময় সংকীর্ণ রাজনীতি থাবা বসিয়েছিল ৷ আচমকাই 1976 সালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণর বদলে উত্তমকুমারকে দিয়ে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ করানো হয় ৷ কিন্তু তা মানতে পারেনি বাঙালি ৷ বিক্ষোভ দেখানো হয় আকাশবাণী ভবনের সামনে ৷ ষষ্ঠীর দিন ফের সম্প্রচার করতে হয়েছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী । তবে এখানেই শেষ নয় ৷ পরে বীরেন্দ্রবাবুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন মহানায়ক ৷ ক্ষমাও চান তিনি ৷ কী হয়েছিল সেদিন? তৎকালীন সময়ের নানা কথা উঠে এল বীরেন্দ্রকৃষ্ণের উত্তরসূরির স্মৃতিচারণে ৷

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উত্তরসূরিরা সকলেই এখন বিদেশে ৷ যাঁরা কলকাতায় আছেন তাঁরাও এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে । আজও উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরের টাউন স্কুল সংলগ্ন সাত নম্বর রামধন মিত্র লেনের বাড়িতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জ্ঞাতি,শরিকি সকলে রয়েছেন । তবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের ঘরেই এখনও থাকেন মেয়ে সুজাতা ভদ্র ৷ 86 বছর বয়সে এসে স্মৃতিতে মরচে ধরেনি ৷ বলেন, "উত্তমকুমার মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ করার পর তিনদিন আমরা বাড়িতে থাকতে পারিনি । বাড়ির সামনে হাজার হাজার লোক । ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন তাঁরা ৷ গোলমাল হয়েছে । রাস্তায় নো এন্ট্রি বোর্ড লাগানো রয়েছে । উত্তমকুমার বাবাকে বলেছিলেন, তিনি মহিষাসুরমর্দিনী করতে চাননি । তাঁকে জোর করে করানো হয়েছিল ।"

দেখুন ভিডিয়ো

সত্যিই এক বিরল কণ্ঠ ৷ এই কণ্ঠ বাঙালির ঘরে আর ফেরেনি ৷ মহালয়া এবং মহিষাসুরমর্দিনী নিয়ে অনেকে অনেক গবেষণা করেছেন । কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বিকল্প আজও পাওয়া যায়নি ৷ মেয়ে সুজাতার বক্তব্য, "সেবার উত্তমকুমার মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ করলেন । বাবা শুনে বলেছিলেন, লোকে নতুন কিছু চায় । উত্তমকুমারের মহালয়া মানুষ শুনবে । নতুনত্ব সবাই চায় । কিন্তু আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ উত্তমকুমারকে দিয়ে মহালয়ার ভোরে মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ করিয়ে সফল হয়নি । বাধ্য হয়ে ফের বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী বাজাতে হয়েছিল রেডিয়োতে । লাইভ অনুষ্ঠানের সময় অন্ধকার ছাদে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে সবাই আকাশবাণী কলকাতার মহিষাসুরমর্দিনী শুনতেন৷"
সুজাতার স্মৃতিচারণে উঠে এল আকাশবাণীতে মহালয়া পাঠ করতে যাওয়ার দিনগুলি ৷ বললেন, "রাত দুটোর সময় আকাশবাণী ভবন থেকে গাড়ি এসে বাবাকে নিয়ে যেত । যুদ্ধের পরে সরাসরি অনুষ্ঠান আর হয়নি ৷ তারপর থেকে মহিষাসুরমর্দিনীর রেকর্ড চালানো হত ৷ কিন্তু প্রতি মহালয়ার ভোরেই তিনি যেতেন আকাশবাণী ভবনে । কেউ কোনও ভুল-ত্রুটি করলে শুধরে দিতেন । বাবার দৈনন্দিন জীবন, স্মৃতি বিজড়িত বহু জিনিসের কথাও উঠে এল সুজাতার কথায় ৷ বললেন, "বাবা অল্প সময় বাড়িতে থাকতেন । যেটুকু সময় থাকতেন নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন । শেষের দিকে শরীর ভালো না থাকায় খুব একটা বের হতেন না । বাড়িতেই শুয়ে, বসে, পড়াশোনা করতেন ।"

তবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের অনেক বই, জিনিসপত্রের আজ কোনও হদিশ নেই ৷ এক সময় যাঁরা বাড়ি আসতেন কিছু জিনিস নিয়ে গেছেন ৷ আর ফেরত দেননি ৷ অনেকে অনেক কিছু করে নিয়েছেন । কিন্তু বাবা কিছুই করতে পারেননি । আক্ষেপ মেয়ের ৷ তবে এই সব কিছুর ঊর্ধ্বে তিনি বাঙালিকে যা দিয়ে গেছেন তা কোনও দেওয়া-নেওয়ার মাপকাঠিতে মাপা যায় না ৷

আজ মহালয়া ৷ হয়তো আজও কোনও রেডিয়োকে ঘিরে চাদর মুড়ি দেয়ে সবাই শুনছেন মহিষাসুরমর্দিনী ৷ আবার শরতের আকাশ ভরে উঠেছে তাঁর কণ্ঠে -"আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর । ধরণীর বহিরাকাশে অন্তর্হিত মেঘমালা ।"

Intro:পিতৃপক্ষের শেষ, দেবীপক্ষের শুরু। সেই শুরুতেই মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী কে না শুনেছেন। যাকে ছাড়া বাঙালির দুর্গা পুজো সম্পন্ন হয় না, সেই বিরল কন্ঠের অধিকারী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উত্তরসূরী সকলেই এখন বিদেশে থাকেন। যারা কলকাতায় আছেন তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে। উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরের টাউন স্কুল সংলগ্ন সাত নম্বর রামধন মিত্র লেনের বাড়িতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জ্ঞাতি, শরিকি সকলে রয়েছেন। তার বোন সুজাতা ভদ্র থাকেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ঘড়েই।


Body:বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র প্রতি বছর মহালয়ার ভোরে আকাশবাণীতে মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ করতে যেতেন। এমন একজন বিরল কন্ঠের অধিকারী ইদানীংকালে আর বাঙালির ঘরে ফেরেনি। অনেকে অনেক গবেষণা করেছেন মহালয়া এবং মহিষাসুরমর্দিনী নিয়ে। কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মত ও অননুকরনীয় কন্ঠ আর তৈরি হয়নি। ভবিষ্যতে হবে কিনা তা সময় বলবে।
যেবার মহালয়ার ভোরে মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ করেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। সেদিন রক্ষণশীল বাঙালিরা আকাশবাণী ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। মহানায়কের মহিষাসুরমর্দিনী পছন্দ হয়নি ঐতিহ্যবাহী বাঙালির। তাদের আবদার এই আকাশবাণী কর্তৃপক্ষকে ষষ্ঠীর দিন ফের সম্প্রচার করতে হয়েছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী।
"উত্তম কুমার মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ করার পর তিনদিন আমরা বাড়িতে থাকতে পারিনি। বাড়ির সামনে হাজার হাজার লোক। গোলমাল হচ্ছে। রাস্তায় নো এন্ট্রি বোর্ড লাগানো রয়েছে। উত্তম কুমার বাবাকে বলেছিলেন, তিনি মহিষাসুরমর্দিনী করতে চাননি। তাকে জোর করে করানো হয়েছিল।" ৮৬ বছর বয়সে এসে আজও একথা মনে রয়েছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মেয়ে সুজাতা ভদ্রের।
কোন এক মহালয়ার ভোরের কথা বলতে গিয়ে স্মৃতিতে ডুবে গেলেন বীরেন্দ্র তনয়া সুজাতা, তিনি জানাচ্ছেন, তার বাবা অল্প সময় বাড়িতে থাকতেন। যেটুকু সময় থাকতেন নিজের কাজ নিয়েই বাড়িতে ব্যস্ত থাকতেন। শেষের দিকে শরীর ভাল না থাকায় খুব একটা বের হতেন না বীরেন্দ্রকৃষ্ণ। বাড়িতেই থাকতেন শুয়ে, বসে, পড়াশোনা করতেন। প্রচারবিমুখ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বহু বই স্মৃতি বিজড়িত বহু জিনিসের কোনো হদিস নেই বাড়ি থেকে। জানাচ্ছেন সুজাতা। একসময় যারা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পরিবারে আসতেন, তারা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ব্যবহৃত সামগ্রী নিয়ে যেতেন স্মৃতি হিসেবে রাখবেন বলে। এই করে করে সব জিনিস বাড়িছাড়া হয়ে গিয়েছে বলে জানান সুজাতা।
অনেকে অনেক কিছু করে নিয়েছেন। কিন্তু বাবা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ কিছুই করতে পারেননি। তা বলে আক্ষেপ নেই বৃদ্ধা সুজাতার। মহালয়ার সকালে যখন লাইভ অনুষ্ঠান হতো রাত দুটোর সময় আকাশবাণী ভবন থেকে গাড়ি এসে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে নিয়ে যেতো। যুদ্ধের পরে লাইভ অনুষ্ঠান আর হয়নি আকাশবাণীতে। তারপর থেকে মহালয়ার ভোরে মহিষাসুরমর্দিনী'র রেকর্ড চালানো হতো বলে জানিয়েছেন সুজাতা। কিন্তু প্রতি মহালয়ার ভোরেই তিনি যেতেন আকাশবাণী ভবনে। কেউ কোনো ভুল-ত্রুটি করলে শুধরে দিতেন। জানাচ্ছেন সুজাতা।
যেবার উত্তম কুমার মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ করলেন মহালয়ার ভোরে। বাবা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ শুনে বলেছিলেন, লোকে নতুন কিছু চায়। উত্তম কুমারের মহালয়া মানুষ শুনবে। নতুনত্ব সবাই চায়। সেই স্মৃতিই ফিরে এসেছে সুজাতার কথায়।
আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ উত্তমকুমারকে দিয়ে মহালয়ার ভোরে মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ করিয়ে সফল হননি। বাধ্য হয়ে ফের বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী বাজাতে হয়েছিল রেডিওতে। বাঙালির চাপে। মানুষের চাপে। জনতার চাপে। এই ঘরেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ থাকতেন। লাইভ অনুষ্ঠানের সময় অন্ধকার ছাদে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে সবাই আকাশবাণী কলকাতার মহিষাসুরমর্দিনী শুনতেন। বললেন সুজাতা ভদ্র। পিতৃ কন্ঠ যে ভগবান প্রদত্ত তাও জানাচ্ছেন তিনি। সেই ঈশ্বর প্রদত্ত কন্ঠের সদ্ব্যবহার করেছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ। আজও বাঙালির মননে, মহালয়ার ভোরে চির জাগরুক বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।



Conclusion:বাবার স্মৃতি জানাই নিয়ে যাক। তারা যদি আর ফেরত নাও দেয়। তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই‌‌। কারণ দৈনন্দিন জীবনে প্রচুর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে সুজাতার জীবনে। সেই স্মৃতি সততই সুখের। ১৯০৫ সালের ৪ আগস্ট জন্মেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ। ১৯৯১ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যু হয় তার। সুজাতা মনে করেন, অমন গলা আর হবেনা।
প্রিয় বাবার বই, বিভিন্ন স্মৃতি যারা নিয়ে গেছেন, তাদের কাছ থেকে সেগুলি আর ফিরে পাওয়ার আশা রাখেন না তিনি। শুধু আবেদন যত্ন করে সেগুলো আগলে রাখুক, যারা নিয়ে গিয়েছেন। সুজাতা ভদ্র বলছিলেন, প্রথম শ্রেণীর একটি বাংলা দৈনিকের সংবাদ প্রতিনিধি তার বাবার হাতের লেখা একটি বই নিয়ে চলে গিয়েছে। পরে দেবে বলেও আর ফিরিয়ে দেয় নি।
Last Updated : Sep 28, 2019, 5:35 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.