কলকাতা, 30 মে : কম্পিউটার অথবা মোবাইলে গেম খেলছেন দীর্ঘ সময় ধরে ? কিংবা, অন্য কোনও কাজে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করে চলেছেন এই সব বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম ? এই ব্যবহার কী ভাবে, কতটা প্রভাব ফেলতে পারে শরীরের উপরে ? এই বিষয়ে বলেছেন আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক সোমনাথ দাস ।
মোবাইল ফোন, কম্পিউটার সহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম ছাড়া বর্তমানে বহু মানুষের জীবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে । এই সব বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম অনেক বেশি সময় ধরে ব্যবহার করলে কোনও সমস্যা কি দেখা দিতে পারে? অধ্যাপক সোমনাথ দাস বলেন, "টক্সিকোলজির দিক থেকে এই ধরনের বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম পার্টিকেল (ফোটন পার্টিকেল) বলেই পরিচিত । এটি আসলে ন্যানো টক্সিকোলজি নামের একটি বিষয়ের অধীনে রয়েছে । এগুলি সব সময় বের হয় । অর্থাৎ, ফোটন পার্টিকেলগুলি শরীরের উপরে প্রভাব ফেলতে থাকে । কতটা প্রভাব পড়ে, এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত যত গবেষণা হয়েছে, তাতে মিশ্র ফলাফল দেখা গিয়েছে । বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই ফোটন পার্টিকেলগুলি যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে অথবা বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা হয় তাহলে শরীরের উপরে প্রভাব ফেলতে থাকে । যার ফলে ব্যবহারকারীর ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে । ব্লাড প্রেসারে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে । শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে ।" সহজ করে বললে, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার করা উচিত নয় । অর্থাৎ, যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই ব্যবহার করা উচিত । দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা উচিত নয় ।
অনেকে গেম খেলেন। এর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহৃত হতে থাকে মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার । এক্ষেত্রে কোনও সমস্যা দেখা দিতে পারে ? এর উত্তরে সোমনাথ দাস বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে গেম খেলার কারণে ফোটন পার্টিকেলগুলি আমাদের শরীরের উপরে অবাঞ্ছনীয় ভাবে প্রভাব ফেলে ।
বিশেষ কোনও উপায় কী রয়েছে, যার মাধ্যমে শরীরের উপরে ক্ষতিকর প্রভাব কম পড়তে পারে? তিনি বলেন, "খুব সহজ উপায়, প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয় । এছাড়া যে স্ক্রিনগুলি ফোটন পর্টিকেলগুলিকে শরীরের উপরে প্রভাব ফেলার বিষয়টিকে কমিয়ে দেয় । যেমন ব্লু স্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে । মোবাইল ফোনের ব্যাক গ্রাউন্ডে যে আলো দেখা যায়, তা যদি কমানো সম্ভব হয়, বা ব্যাকগ্রাউন্ডের আলোকে যদি কম করে রাখা হয় তা হলে এটি একটি উপায় হতে পারে । কম্পিউটার, মোবাইল ফোন শরীর থেকে যত দূরে সম্ভব রেখে ব্যবহার করা উচিত । এর ফলে যে ফোটন পার্টিকেলগুলি বের হচ্ছে, সেগুলি সরাসরি না হলেও অথবা কিছুটা হলেও শরীরের উপরে কম প্রভাব ফেলবে । এভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে ।"
কেন প্রভাব ফেলে? এর উত্তরে সোমনাথবাবু বলেন, "এই ধরনের ওয়েভ অর্থাৎ, ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ওয়েভের সংস্পর্শে এলে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ যে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ওয়েভ চলে, সেগুলির একটি ইন্ডাকশন বা ইনডিউসড হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় । অর্থাৎ, সহজ করে বললে, একটি মোবাইল ফোন বুকের কাছাকাছি রাখা হচ্ছে । তার একটি ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ওয়েভ রয়েছে । এই ফোনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কোনও না কোনও ইনফরমেশন আসছে বা বেরিয়ে যাচ্ছে । অর্থাৎ, সব সময় একটি ওয়েভ বা প্রক্রিয়া চালু রয়েছে । বুকের ভিতরে হৃদপিণ্ড চালু রাখার জন্য এমনই একটি ওয়েভ বা ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ওয়েভ সব সময় কাজ করে যায় । দু'টির যখন ইন্টারফেস আসে, তখন কোনও না কোনও পরিবর্তন বা প্রভাব এর উপরে পড়তে বাধ্য । এই বিষয়গুলি নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষণা চলছে । আগামী দিনে হয়তো এর ফলাফল আমাদের সামনে আসবে ।"