ETV Bharat / state

ছেলের চিকিৎসায় দিনে দেড় লাখ টাকা খরচ, সহনাগরিকরাই আপন সিংহ দম্পতির

author img

By

Published : Jul 6, 2021, 8:58 PM IST

Updated : Jul 6, 2021, 10:32 PM IST

নিজের একমাত্র সন্তানকে সুস্থ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ পিতা রুদ্রপ্রসাদ সিংহ । নিজেও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ । জিৎপালের চিকিৎসার জন্য এক এক দিনে খরচ হচ্ছে 1 লাখ 40 হাজার টাকা । এগিয়ে এসেছেন সহনাগরিকরা । যে মানুষগুলিকে কোনওদিন দেখেননি, কোনওভাবে চেনেনও না... সেই মানুষগুলি হঠাৎ করে যেন বড্ড কাছের হয়ে উঠেছেন সিংহ দম্পতির ।

চিকিৎসায় খরচ দিনে দেড় লাখ টাকা
ছবি

কলকাতা, 6 জুলাই : মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও -- শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার এই দুই পংক্তি প্রায় সকলেরই শোনা । যাঁরা কবিতা নিয়ে চর্চা করেন, তাঁরা মাঝে মাঝেই আবেগের বশে আবৃত্তিও করে থাকেন । কিন্তু বাস্তবে ? আদৌ কি এমনটা হয় ? অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে আমরা ক'জনই বা দাঁড়াই । বাস্তবের এক রুক্ষতার মধ্যেও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাটি মনে করিয়ে দিচ্ছে ভালবাসার শহর কলকাতা । মানবিকতার আরও এক দৃষ্টান্ত গড়ল তিলোত্তমা । যে মানুষগুলিকে কোনওদিন দেখেননি, কোনওভাবে চেনেনও না... সেই মানুষগুলি হঠাৎ করে যেন বড্ড কাছের হয়ে উঠেছেন সিংহ দম্পতির ।

বেঙ্গালুরুর একট বেসরকারি সংস্থায় মোটা মাসমাহিনায় মার্কেটিং বিভাগে কাজ করেন জিৎপাল সিংহ । বাড়ি মুর্শিদাবাদে । বাবা রুদ্রপ্রসাদ সিংহ কিছুদিন আগেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন । দেখভালের জন্য সেভাবে আর কেউ নেই । খবর দেওয়া হয় বেঙ্গালুরুতে । বাবা অসুস্থ । কে দেখাশোনা করবে, চিকিৎসা ঠিকঠাক হবে তো ? খবর পাওয়া মাত্র হাজার রকমের চিন্তা ঢুকে পড়ে জিৎপালের মাথায় । দ্বিতীয়বার আর কিছু ভাবেননি । করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সোজা চলে আসেন কলকাতায় ।

এদিকে রুদ্রপ্রসাদবাবু অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই তাঁকে এনে রাখা হয়েছিল নাকতলায় । সেখানে জিৎপালের পিসির বাড়ি আছে । সেখানে থেকেই চিকিৎসা চলছিল বৃদ্ধের । বাবার চিকিৎসার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে করতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন জিৎপাল । পরিস্থিতি ক্রমেই গুরুতর হতে শুরু করে । এখনও হাসপাতালে ভর্তি । হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে বছর তিরিশের এই তরতাজা প্রাণ ।

6 জুন জিৎপালের করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে । উপসর্গ আগে থেকেই দেখা যাচ্ছিল । সেদিন রাত থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে । পরের দিনই তাঁকে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । সেই থেকে আজ প্রায় এক মাস হতে চলল । কিন্তু শারীরিক উন্নতির কোনও লক্ষ্মণ নেই । চিকিৎসক সৌরভ মাঝির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল জিৎপালের ।

আরও পড়ুন : করোনা চিকিৎসার বাড়তি খরচে লাগাম টানতে টাস্ক ফোর্স গঠন দার্জিলিংয়ে

এরই মধ্যে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করে । শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আরও প্রকট হয় । প্রথমে আইসিসিইউতে চিকিৎসা চলছিল । পরে ভেন্টিলেশনে পাঠানো হয় । হাসপাতাল থেকে জানানো হয় ইসিএমও পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে হবে জিৎপালের । জুলাই মাসের 2 তারিখ বাইপাসের ধারে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় জিৎপালকে । প্রয়োজন হয় ইসিএমও-র । এখন কৃত্রিম হৃদযন্ত্র ও কৃত্রিম ফুসফুস ব্যবহার করতে হয় ।

প্রতিদিন 1 লাখ 40 হাজার টাকা খরচ লাগছে জিৎপালের চিকিৎসায় । ইতিমধ্যেই চারজন চিকিৎসকের বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়েছে । 24 ঘণ্টা নজরদারিতে রাখা হয়েছে । কতদিনে সুস্থ হয়ে উঠবে তা জিৎপাল, কারও জানা নেই । করোনায় জিৎপালের ফুসফুসে সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলেছে । ফুসফুস একপ্রকার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে । আর সেই কারণেই কৃত্রিম ফুসফুসের সাহায্য নিতে হচ্ছে ।

নিজের একমাত্র সন্তানকে সুস্থ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ পিতা রুদ্রপ্রসাদ সিংহ । নিজেও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ । জিৎপালের চিকিৎসার জন্য এক এক দিনে খরচ হচ্ছে 1 লাখ 40 হাজার টাকা । চিকিৎসার এই বিশাল খরচ জোগাড় করতে নাভিশ্বাস উঠছে বৃদ্ধ বাবার । নিজের একমাত্র সন্তানের প্রাণ রক্ষা করতে নিজের শেষ সম্বলটুকু তুলে দিয়েছেন । আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতরা এগিয়ে এসেছেন সাহায্যের জন্য । প্রত্যেকে নিজের নিজের সাধ্যমতো সাহায্য করছেন । কিন্তু আরও টাকার প্রয়োজন । ছেলের চিকিৎসার জন্য সহনাগরিকদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন তিনি ।

বৃদ্ধ রুদ্রপ্রসাদকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন শহর কলকাতার বেশ কিছু স্বচ্ছল এবং অর্থবান মানুষ । বৃদ্ধের আবেদনের সঙ্গে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য উল্লেখ করা হয়, সেখানে জমা পড়তে থাকে টাকা । বিভিন্ন সহনাগরিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় । যদিও আরও টাকার প্রয়োজন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে । তবে কলকাতার এই সমস্ত হৃদয়বান সহনাগরিকের সাহায্যে পেয়ে আশা ছাড়ছেন না জিৎপালের বৃদ্ধ মা এবং বাবা ।

মা আলপনা সিংহ ছেলের এই করুণ পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন । একমাত্র ছেলেকে অনেক স্নেহে আদরে বড় করেছেন তিনি । ছেলেকে ঘিরে হাজার স্বপ্ন ছিল মায়ের দুচোখে । আজ সেই দুচোখে জল । ছেলের চিকিৎসার জন্য অর্থ জোগাড় করতেই ব্যস্ত এই দম্পতি । তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছেলে জিৎপাল ।

কলকাতা, 6 জুলাই : মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও -- শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার এই দুই পংক্তি প্রায় সকলেরই শোনা । যাঁরা কবিতা নিয়ে চর্চা করেন, তাঁরা মাঝে মাঝেই আবেগের বশে আবৃত্তিও করে থাকেন । কিন্তু বাস্তবে ? আদৌ কি এমনটা হয় ? অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে আমরা ক'জনই বা দাঁড়াই । বাস্তবের এক রুক্ষতার মধ্যেও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাটি মনে করিয়ে দিচ্ছে ভালবাসার শহর কলকাতা । মানবিকতার আরও এক দৃষ্টান্ত গড়ল তিলোত্তমা । যে মানুষগুলিকে কোনওদিন দেখেননি, কোনওভাবে চেনেনও না... সেই মানুষগুলি হঠাৎ করে যেন বড্ড কাছের হয়ে উঠেছেন সিংহ দম্পতির ।

বেঙ্গালুরুর একট বেসরকারি সংস্থায় মোটা মাসমাহিনায় মার্কেটিং বিভাগে কাজ করেন জিৎপাল সিংহ । বাড়ি মুর্শিদাবাদে । বাবা রুদ্রপ্রসাদ সিংহ কিছুদিন আগেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন । দেখভালের জন্য সেভাবে আর কেউ নেই । খবর দেওয়া হয় বেঙ্গালুরুতে । বাবা অসুস্থ । কে দেখাশোনা করবে, চিকিৎসা ঠিকঠাক হবে তো ? খবর পাওয়া মাত্র হাজার রকমের চিন্তা ঢুকে পড়ে জিৎপালের মাথায় । দ্বিতীয়বার আর কিছু ভাবেননি । করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সোজা চলে আসেন কলকাতায় ।

এদিকে রুদ্রপ্রসাদবাবু অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই তাঁকে এনে রাখা হয়েছিল নাকতলায় । সেখানে জিৎপালের পিসির বাড়ি আছে । সেখানে থেকেই চিকিৎসা চলছিল বৃদ্ধের । বাবার চিকিৎসার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে করতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন জিৎপাল । পরিস্থিতি ক্রমেই গুরুতর হতে শুরু করে । এখনও হাসপাতালে ভর্তি । হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে বছর তিরিশের এই তরতাজা প্রাণ ।

6 জুন জিৎপালের করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে । উপসর্গ আগে থেকেই দেখা যাচ্ছিল । সেদিন রাত থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে । পরের দিনই তাঁকে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । সেই থেকে আজ প্রায় এক মাস হতে চলল । কিন্তু শারীরিক উন্নতির কোনও লক্ষ্মণ নেই । চিকিৎসক সৌরভ মাঝির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল জিৎপালের ।

আরও পড়ুন : করোনা চিকিৎসার বাড়তি খরচে লাগাম টানতে টাস্ক ফোর্স গঠন দার্জিলিংয়ে

এরই মধ্যে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করে । শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আরও প্রকট হয় । প্রথমে আইসিসিইউতে চিকিৎসা চলছিল । পরে ভেন্টিলেশনে পাঠানো হয় । হাসপাতাল থেকে জানানো হয় ইসিএমও পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে হবে জিৎপালের । জুলাই মাসের 2 তারিখ বাইপাসের ধারে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় জিৎপালকে । প্রয়োজন হয় ইসিএমও-র । এখন কৃত্রিম হৃদযন্ত্র ও কৃত্রিম ফুসফুস ব্যবহার করতে হয় ।

প্রতিদিন 1 লাখ 40 হাজার টাকা খরচ লাগছে জিৎপালের চিকিৎসায় । ইতিমধ্যেই চারজন চিকিৎসকের বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়েছে । 24 ঘণ্টা নজরদারিতে রাখা হয়েছে । কতদিনে সুস্থ হয়ে উঠবে তা জিৎপাল, কারও জানা নেই । করোনায় জিৎপালের ফুসফুসে সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলেছে । ফুসফুস একপ্রকার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে । আর সেই কারণেই কৃত্রিম ফুসফুসের সাহায্য নিতে হচ্ছে ।

নিজের একমাত্র সন্তানকে সুস্থ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ পিতা রুদ্রপ্রসাদ সিংহ । নিজেও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ । জিৎপালের চিকিৎসার জন্য এক এক দিনে খরচ হচ্ছে 1 লাখ 40 হাজার টাকা । চিকিৎসার এই বিশাল খরচ জোগাড় করতে নাভিশ্বাস উঠছে বৃদ্ধ বাবার । নিজের একমাত্র সন্তানের প্রাণ রক্ষা করতে নিজের শেষ সম্বলটুকু তুলে দিয়েছেন । আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতরা এগিয়ে এসেছেন সাহায্যের জন্য । প্রত্যেকে নিজের নিজের সাধ্যমতো সাহায্য করছেন । কিন্তু আরও টাকার প্রয়োজন । ছেলের চিকিৎসার জন্য সহনাগরিকদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন তিনি ।

বৃদ্ধ রুদ্রপ্রসাদকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন শহর কলকাতার বেশ কিছু স্বচ্ছল এবং অর্থবান মানুষ । বৃদ্ধের আবেদনের সঙ্গে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য উল্লেখ করা হয়, সেখানে জমা পড়তে থাকে টাকা । বিভিন্ন সহনাগরিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় । যদিও আরও টাকার প্রয়োজন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে । তবে কলকাতার এই সমস্ত হৃদয়বান সহনাগরিকের সাহায্যে পেয়ে আশা ছাড়ছেন না জিৎপালের বৃদ্ধ মা এবং বাবা ।

মা আলপনা সিংহ ছেলের এই করুণ পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন । একমাত্র ছেলেকে অনেক স্নেহে আদরে বড় করেছেন তিনি । ছেলেকে ঘিরে হাজার স্বপ্ন ছিল মায়ের দুচোখে । আজ সেই দুচোখে জল । ছেলের চিকিৎসার জন্য অর্থ জোগাড় করতেই ব্যস্ত এই দম্পতি । তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছেলে জিৎপাল ।

Last Updated : Jul 6, 2021, 10:32 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.