কলকাতা, 30 নভেম্বর : ছিটকে এসে চোখে পেরেক ঢুকেছিল ৷ তারই চিকিৎসা করতে গিয়ে চিকিৎসকদের গাফিলতিতে চোখ নষ্টের অভিযোগ উঠল ৷ রোগীর বাবার অভিযোগ, চিকিৎসকদের অবহেলায় তাঁর বছর ছাব্বিশের ছেলে রাজা নস্করের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে । শনিবার এই অভিযোগ উঠেছে রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজি (RIO)-র বিরুদ্ধে । এই অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে কর্তৃপক্ষ ।
কলেজ স্ট্রিটের একটি প্রেসে কাজ করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের বাসিন্দা রাজা নস্কর । সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে এক ইঞ্চির একটি পেরেক কেটে অর্ধেক করা হচ্ছিল ৷ তখন ওই পেরেকের অর্ধেক অংশ ছুটে এসে রাজা নস্করের চোখে লাগে । সহকর্মীরা দ্রুত তাঁকে নিয়ে যান কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অন্তর্গত রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজিতে । পরিজনরা জানিয়েছেন, পেরেকের ওই অংশটি রাজা নস্করের চোখে ঢুকে গেছিল কি না, তা তাঁরা জানতেন না । তবে ঘটনা কী হয়েছিল, চিকিৎসকদের কাছে তা বর্ণনা করেন । চিকিৎসকরা রাজা নস্করের চোখে ব্যান্ডেজ করে দেন ।
RIO কর্তৃপক্ষের কাছে শনিবার রাজা নস্করের বাবা জন্মেঞ্জয় নস্কর লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময় একটি পেরেক তাঁর ছেলের একটি চোখে ঢুকে গেছিল । সময় নষ্ট না করে তাঁর ছেলেকে নিয়ে আসা হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । চিকিৎসকরা তাঁর ছেলের চোখের সেলাই করে বেডে পাঠিয়ে দেন । দু' দিন পরে কোনও চিকিৎসা ছাড়া রাজা নস্করের ওই চোখটি তোলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা । তিনি সম্মতি জানান । গতকাল সকালে অস্ত্রোপচার করে চোখের মধ্যে থেকে পেরেকের ওই অংশটি বের করেন চিকিৎসকরা । RIO-র অধিকর্তাকে লিখিত অভিযোগে রাজা নস্করের বাবা বলেছেন, "চোখের মধ্যে যদি পেরেক থেকে থাকে তাহলে ভরতির সময় চিকিৎসকরা কেন বললেন না ? চিকিৎসকরা কেন সঠিক চিকিৎসা করলেন না ? সুস্থ ছেলেকে পঙ্গু করে তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়ার অধিকার কি ডাক্তারি আইনে রয়েছে ?"
পরিজনদের অভিযোগ, চোখের মধ্যে পেরেকের টুকরো রয়েছে কি না, তা জানার জন্য পরীক্ষা করে দেখা হয়নি । চিকিৎসকরা বলেন, চোখে সংক্রমণ ঘটে গেছে । এই জন্য চোখ তুলে ফেলতে হবে । শুক্রবার চোখ তুলে ফেলার অস্ত্রোপচারের সময় চোখের মধ্যে থেকে এক ইঞ্চি পেরেকের অর্ধেক অংশটি বের করেন চিকিৎসকরা । শুধুমাত্র এমন নয় । পরিজনদের অভিযোগ, চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে রাজা নস্করের একটি (ডান) চোখ হারাতে হল ।
এমন অভিযোগের বিষয়ে RIO-র অধিকর্তা অসীমকুমার ঘোষের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক । আমাদের দুর্ভাগ্য, রাজা নস্করের একটি চোখ আমরা বাঁচাতে পারলাম না ।" তিনি বলেন, "সংক্রমণ ঘটে গেছিল । চোখটিকে না তুললে রাজা নস্করের প্রাণসংশয় ছিল । রাজা নস্করকে প্রাণে বাঁচাতে, ওর একটি চোখ তুলে ফেলতে হল ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "মঙ্গলবার সকালে রাজা নস্করের চোখে স্ক্যান করে দেখা হয়েছিল, চোখের মধ্যে পেরেকের টুকরো রয়েছে । অস্ত্রোপচারের জন্য আমরা প্ল্যান করেছিলাম । দুর্ভাগ্য, তার আগেই সংক্রমণ ঘটে গেল ।" RIO-র অধিকর্তা বলেন, "অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গড়েছি । ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ।"