কলকাতা, 2 জুলাই : তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম সরকারি বৈঠকে ডাক পেলেন বিরোধী বিধায়করা । আজ রাজ্যের তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেখানে তৃণমূল বিধায়কদের পাশাপাশি আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল অন্য দলের বিধায়কদেরও । তৃণমূল, বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও BJP মিলিয়ে বিধানসভায় মোট 84 জন ST ও SC বিধায়ককে আমন্ত্রণ জানানো হয় । বৈঠক শুরু হয় দুপুর 2 টোয়।
আজ বিধানসভায় কাউন্সিল রুমে দীর্ঘ বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী । মূলত মুখ্যমন্ত্রী বিধায়কদের কাছ থেকে জানতে চান কীভাবে পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর সম্প্রদায়ের আরও উন্নতি করা যায় । আদিবাসী মঙ্গল কমিটির বৈঠক ব্লক এবং জেলা স্তরে সব জেলায় ঠিক মতো হয় না বলে মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেছেন । বাগদার বিধায়ক দুলাল বর বলেন, তাঁর বিধানসভায় 3 বছর ধরে তপশিলি সম্প্রদায়ের মানুষ সার্টিফিকেট পান না । কল্যাণীর তৃণমূল বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস কবিতা পাঠ করে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। তারপর তিনি বলেন , "এই ধরনের বৈঠকের জন্য আগেই মুকুল রায়কে বার বার বলেছিলাম, কিন্তু তিনি কথা শোনেননি । " একথা শুনেই মমতা বলেন, " যে বিধানসভার সদস্য না,তাঁর কথা এখানে বলবেন না। কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা আলোচনা প্রসঙ্গে জয়শ্রীরাম বলায় মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ভর্ৎসনা করেন । ড: বি আর আম্বেদকরের নামে একটা ইউনিভার্সিটির দাবি তোলেন দুলাল বর । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ওনার নামে অনেক কিছু আছে । আপাতত বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব নয় ।" শিউলি সাহা আরও বলেন, "দলিতদের নিরাপত্তা দরকার, অন্য রাজ্যে দলিতদের মেরে ফেলা হচ্ছে ,আমাদের এখানে দলিতদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুন ।"
কয়েকজন বিধায়ক বলেন, পরিবারের পূর্বসূরির SC, ST বা OBC সার্টিফিকেট রয়েছে তাঁদের পরিবারে নতুন যাঁরা জন্ম নিচ্ছে অনেক সময় অনেক জেলায় তাঁরা সার্টিফিকেট পাচ্ছে না । সরকারি অফিসে গিয়ে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন অনেক তপশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "যদি দেখা যায় এইরকম ঘটনা ঘটছে, তাহলে সেক্ষেত্রে গ্রিভান্স সেলে অভিযোগ জানানো যাবে। তার সঙ্গে সরকার নতুন করে একটা আইন আনতে চলেছে বলে জানান তিনি । সেই আইনে সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খতিয়ে দেখে সেই ব্লক,মহকুমা বা জেলা প্রশাসনের অফিসারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাঁকে সাসপেন্ড করবে। তবে, সেক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হতে হবে ।" নতুন যে আইন বিধানসভায় আসছে তাতে তপশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের সার্টিফিকেটের সরলীকরণের বিষয়টিও থাকছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
এক মাসের মধ্যে তপশিলিদের সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা অনেক জায়গায় অফিসারদের গড়িমসিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অনেক বিধায়ক ।মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ শুনে আশ্বস্ত করেছেন তাঁদের । দপ্তরের পক্ষ থেকে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি । ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তপশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের জন্য কী কী কাজ করা হয়েছে সেই খতিয়ান নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত বিধায়কদের পাঁচ পাতার একটি খসড়া দেওয়া হয় ।
অন্যদিকে এই বৈঠকের সমালোচনা করে সুজন চক্রবর্তী বলেন, "সর্বনাশের আতঙ্ক থেকেই আজ তপশিলি শ্রেণীভুক্ত বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী আলাদাভাবে কোনও দলের বিধায়কদের সঙ্গে এইভাবে বৈঠক করতে পারেন না।"