কলকাতা, 2 মে: "2024 এর লোকসভা ভোট হবে পরিবর্তনের নির্বাচন ৷ সব বিরোধীদের একজোট হতে হবে ৷" মঙ্গলবার এক ভিডিয়ো বার্তায় এই ডাক দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেসে সরকারের তৃতীয় ইনিংসের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি । এই বর্ষপূর্তির দিনে জাতীয় ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একজোট হওয়ার ডাক দিলেন মমতা । এদিন 8 মিনিট 56 সেকেন্ড-এর একটি ভিডিয়ো বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, চব্বিশের ভোট হতে চলেছে পরিবর্তনের নির্বাচন । একজোট হতে পারলে বিজেপিকে হারানো সম্ভব । যদিও একথা তৃণমূল সুপ্রিমোর গলায় আগেও শোনা গিয়েছে ৷
এদিন তাঁর সরকারের তৃতীয় ইনিংসের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এদিন জোটবার্তা দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দিতেও বক্তব্য রেছেছেন ৷ এদিন এই ভিডিয়োতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, "আগামী লোকসভা নির্বাচন হবে পরিবর্তনের নির্বাচন । সব বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলি একত্রিত হলে বিজেপিকে হারানো সম্ভব। দেশে পরিবর্তনের প্রয়োজন ৷ আগামী নির্বাচন হবে পরিবর্তনের ভোট ৷" উল্লেখ্য, 2011 সালে রাজ্যে পরিবর্তনের ডাক দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে তাৎপর্যপূর্ণভাবে নোটবন্দি এবং এনআরসি প্রসঙ্গ উঠে আসে । তিনি বলেন, "এই সরকার নোটবন্দি করেছে । এনআরসি'র নোটিশ জারি করেছে, এনআরসি'র নাম করে দেশবাসীকে অত্যাচার করছে । আমরা এই ধরনের একটা সরকারকে কেন সমর্থন করব ?" মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, তিনি নিশ্চিত বিরোধীরা একজোট হলেই বিজেপিকে হারানো সম্ভব হবে ৷ তিনি জানান, পৃথিবীতে মানুষের থেকে কোনও বড় শক্তি হয় না । মানুষই প্রথম এবং মানুষই শেষ কথা বলে । মমতার প্রত্যয়, "আমরা এবার হারব না বরং আমরা এবার জিতব ।"
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী । তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে তিনি যেন একটা নতুন কিছু আবিষ্কার করে ফেলেছেন । তবে এটা আবিষ্কারের কোনও বিষয় নয় । বিজেপির বিরুদ্ধে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত । জাতীয় দল হিসেবে সিপিআইএম, কংগ্রেস এবং বামপন্থী দলেরা বরাবরই একথা বলে যাচ্ছে । উনি কি বিষয়টি নতুন করে আবিষ্কার করলেন নাকি ! উনি তো এই মনোভাবে নেই । উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেখা গিয়েছে উনি তো বিজেপির সঙ্গে আছেন । গোয়া অথবা মেঘালয়ে উনি তো বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছেন ।" এই সিপিএম নেতার কথায়, আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দলের ভাঙন বুঝতে পারছেন বলে, এই কথাগুলি বলছেন । বোধদয় যদি বিলম্বিত হয় তবে খারাপ নয় । উনি পাত্তা দেবেন না ওনার পিছন পিছন সবাই দৌড়বেন এমন বিশ্বাসযোগ্যতা আর ওনার নেই ।
আরও পড়ুন: মমতার তৃতীয় ইনিংসের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি, 10 অঙ্গীকারের বাস্তব রূপায়ণ কতটা হল ?
এদিকে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও । তাঁর কথায়, ক্লাস ফোরের একটা ছাত্রও জানে বিরোধীরা সবাই একজোট হলে বিজেপিকে হারানো সম্ভব । এই কথা বহুবার কংগ্রেস দলের তরফ থেকে বলা হয়েছে । বিজেপির হাতে চল্লিশ শতাংশ ভোট রয়েছে বাকি ষাট শতাংশ ভোট বিরোধীদের হাতে । সবাই বুঝলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতদিন বোঝেননি । বিজেপির হাত শক্ত করার পর এখন হঠাৎ তার মনে হচ্ছে বিরোধীরা এক হলে বিজেপিকে হারানো যাবে । এর মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই । বাস্তব মানতে কষ্ট হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বাসযোগ্যতা আর ভারতীয় রাজনীতিতে কিছু আছে কি! তিনি যখন সব হারিয়েছেন, জাতীয় দলের প্রতীক চলে গিয়েছে । এখন যখন বুঝতে পারছেন বাংলাও তার হাতছাড়া হতে চলেছে তখন বাঁচার জন্য বিরোধীদলের ঐক্যের স্লোগান তুলছেন । এ সমস্ত মমতার অক্ষমতা এবং দুর্বলতা ঢাকার চেষ্টা বলেই মনে করছেন অধীর চৌধুরী ৷