কলকাতা, 3 জুলাই: খোদ কলকাতায় বাংলা ভাষাকে অপমান করার অভিযোগ উঠল এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৷ বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে বাঙালির মাতৃভাষাকে অপমান করার মতো এই ধৃষ্টতা দেখানোর অভিযোগ উঠেছে লোরেটো কলেজের মতো নামী কলেজের বিরুদ্ধে ৷
বিতর্ক দানা বেঁধেছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক নির্দেশিকাকে ঘিরে ৷ যেখানে বলা হয়েছে বাংলা মাধ্যমের কোনও পড়ুয়া অংশ নিতে পারবে না এই কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ায় ৷ বাংলার পাশাপাশি হিন্দি মাধ্যমের পড়ুয়াদের জন্যও এই একই নির্দেশ দিয়েছে এই কলেজ কর্তৃপক্ষ ৷ যা ঘিরে রীতিমতো নিন্দার সুর শোনা যাচ্ছে শিক্ষামহল থেকে নেটিজেনদের মুখে ।
ঠিক কী বলা হয়েছে লোরেটো কলেজের নির্দেশিকায় ?
যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে এই কলেজের তরফে সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, 'লোরেটো কলেজে পড়াশোনার মাধ্যম ইংরাজি । পরীক্ষাতেও ইংরাজিতেই উত্তর দিতে হয় ৷ কলেজের লাইব্রেরির শুধু ইংরাজি ভাষার বই রাখা হয় । বাংলা বা হিন্দির মতো আঞ্চলিক ভাষার বই সেখানে নেই ৷ তাই যাঁরা আঞ্চলিক ভাষার স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করেছেন তাঁরা এই কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না ।' আর এই নির্দেশিকা বর্তমানে ভাইরাল হয়েছে সোশাল মিডিয়াতে । উঠেছে নিন্দার ঝড় ।
তবে এই ঘটনা নতুন কিছু নয় বলেই জানাচ্ছেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার । তিনি বলেন,"দিনের পর দিন ইংরাজি মাধ্যম কলেজগুলিতে এই ঘটনা চলতেই থাকছে । লোরেটো নতুন কিছু করেনি । সমাজে বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াদের অস্পৃশ্য করে রাখা হচ্ছে । এরফলে বহু বাবা-মা তাঁদের সন্তানের ভর্তি করছেন ইংরাজি স্কুলেই । আসতে আসতে বাংলার বুকে বাংলা পড়ার লোক আর পাওয়া যাবে না ।" এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে মুখ খুলেছে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করা সংগঠন বঙ্গযোদ্ধা । সেই সংগঠনের তরফে অরিন্দম বিশ্বাস জানান,ইংরাজি ভাষা দরকার নিশ্চয়ই, তবে তা বাংলাকে উপেক্ষা করে না । মহারাষ্ট্রে এই ধরণের ঘটনা ঘটবে না । শুধুমাত্র বাংলাতেই তাদের মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করা যায় কারণ বাংলার রাজনৈতিক নেতারা পঙ্গু । বাংলার নেতারা ভোট নিয়েছে, রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছে বাঙালিদের থেকে । তবে বাঙালিদের যে প্রতিবাদ তা হারিয়ে গিয়েছে ।
প্রশ্ন উঠছে, বাংলার বুকে বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করা পড়ুয়াদের এভাবে সরাসরি নিষেধাজ্ঞার মুখে ঠেলে দেওয়া বা ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করার কথা মাথাতেই বা এল কী করে এই কলেজ কর্তৃপক্ষের ? কারা এই সিদ্ধান্ত নিলেন? বাংলা বা হিন্দি মাধ্যমে পড়াশোনা করলে সে লোরেটোতে ইরাজিতে পড়াশোনা করতে পারবে না, এই ধারণাই বা তৈরি হল কী করে ?
এই ধরণের নির্দেশিকা কেন দেওয়া হয়েছে তা জানতে লোরেটো কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি । লোরেটো কলেজে মূলত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে । তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল এই বিষয়টি নিয়ে । তাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রতি বছরই তারা এই ধরনের নিয়ম রাখে । কারণ, কলেজ কর্তৃপক্ষ লক্ষ্য করেছে বাংলা মাধ্যম থেকে যাওয়া পড়ুয়াদের ওই কলেজের যে পঠন পাঠন তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যায় পড়তে হয় । তাই মাঝপথে পড়া ছেড়ে চলে যান বহু পড়ুয়া । তাই এবছর এই নির্দেশিকা ৷
তবে কলেজটির এই সিদ্ধান্ত কোনও ভাবেই মেনে নিচ্ছে না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য শান্তা দত্ত বলেন, "অনেক পরে এই বিষয়টা আমরা জানতে পেরেছি । আগামিকাল আবার দেখা করতে বলেছি ওদের । পশ্চিমবঙ্গে এটা হতে পারে না । যেহতু এইবছর মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাই এবার ছেড়ে দিচ্ছি । কিন্তু পরবর্তী বছর থেকে এই ধরণের কোনও নির্দেশ দেওয়া যাবে না ।"
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য করার পক্ষে সওয়াল প্রাক্তন উপাচার্যদের