কলকাতা, 27 মার্চ : ফুলবাগান থানায় তখন সবে দিনের শুরু ৷ চারিদিকে লকডাউন থাকায় কাজের চাপ তুলনায় কম ৷ তবে, সবসময় নজর রাখতে হচ্ছে চারপাশে ৷ কেউ যাতে অকারণে বাইরে না বের হন, সেদিকে চলছে অনবরত তদারকি ৷ হঠাৎই থানায় এসে উপস্থিত হন এক মধ্যবয়স্ক মহিলা ৷ আবেদন, বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে ৷ প্রথমে হতবাক হলেও পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলে সবটা জানতে পারে পুলিশ ৷
নাম ঊষাদেবী ৷ বাড়ি হুগলির বৈদ্যবাটিতে ৷ আট বছর ধরে সল্টলেকের একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন তিনি ৷ দেখভাল করতে সল্টলেকের একটি গোটা পরিবারের ৷ প্রতিদিন বৈদ্যবাটি থেকে যাওয়ায় আসা করতেন তিনি ৷ তবে মাসখানেক আগে ওই বাড়ির পুত্রবধূর সন্তান হলে, দায়িত্ব বাড়ে 58 বছরের ঊষাদেবীর ৷ 24 ঘণ্টার জন্য কাজে নিয়োগ করা হয় তাঁকে ৷ দায়িত্ব বাড়লেও বাড়েনি মাইনে ৷ কাজের তালিকায় যোগ হয়, মা-সন্তানের দেখভাল করা ৷ বৈদ্যবাটির বাড়ি ছেড়ে তাঁর থাকার জায়গা নির্ধারিত হয় সল্টলেকের ওই বাড়ির রান্না ঘরের সামনের এক চিলতে জায়গা ৷ সবকিছু হাসিমুখেই মেনে নিয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু, বর্তমানে দেশে কোরোনার থাবা যেন তাঁর চাকরিটাও খেয়ে নিল ৷ কোরোনার জেরে তাঁকে কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয় ৷
24 মার্চ জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁকে আর প্রয়োজন নেই ৷ কাজ থেকে ছাড়িয়ে পৌঁছে দেওয়া হয় হাতিয়ারায় তাঁর বড় ছেলের বাড়িতে ৷ কিন্তু, ছেলের বউ বাড়িতে জায়গা দিতে রাজি হয়নি তাঁকে ৷ বাধ্য হয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে কোনওরকমে পথচলতি মানুষের সাহায্য নিয়ে ফুলবাগানে এক আত্মীয়র বাড়ি পৌঁছান ঊষা দেবী ৷ কিন্তু, তাঁর বাড়ি এতটাই ছোটো যে, সেখানেও থাকতে অসুবিধা ৷ বাধ্য হয়ে আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে থানায় আসা ৷ পুলিশই পারে তাঁকে সাহায্য করতে, এই আশা নিয়েই আবেদন জানান ৷
ঊষাদেবীর বিপদের কথা শুনে সহানুভূতির সঙ্গেই পাশে দাঁড়ায় পুলিশ ৷ পৌঁছে দেওয়া হয় বৈদ্যবাটির বাড়িতে ৷ পুলিশের কাছে এই সাহায্য পেয়ে আপ্লুত তিনি ৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী যেখানে পরিচারিকাদের সঙ্গে এই সময় সুব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন, তাদের মাইনে না কেটে ছুটি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন । সেখানে ঊষা দেবীর সঙ্গে এই ব্যবহারে মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই ৷