কলকাতা, 23 ফেব্রুয়ারি : 25 ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের (WBSU) চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে । সেই সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনকড় । আজ টুইট করে এমনই জানিয়েছেন তিনি । টুইটে লিখেছেন, "25 ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে আচার্য হিসেবে সভাপতিত্ব করব ।"
রাজ্যের একের পর এক প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনকড় । বিশেষত, রাজ্যপালের আচার্য হিসেবে ক্ষমতা খর্বের বিধি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় পেশ করার পর থেকেই একের পর এক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে রাজ্য়পালের অংশ নেওয়া বাতিল করে দেওয়া হয়েছে বা অনুষ্ঠানে গিয়েও বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অংশগ্রহণ না করে ফিরে যেতে হয়েছে তাঁকে । সেই বিধি পাশও হয়ে যায় কিছুদিনের মধ্যেই । নতুন বিধি পেশের পরেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছিল রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (MAKAUT)। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে গেলেও সেখানে বিক্ষোভের মুখে পড়ে অংশগ্রহণ না করেই ফিরে যেতে হয়েছিল জগদীপ ধনকড়কে । যাদবপুরের পরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ঘিরেও তৈরি হয় বিতর্ক । প্রথমে সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্রে নাম না থাকায় রাজ্যপালের ক্ষোভ প্রকাশ । পরে সমাবর্তনে গেলেও NRC, CAA, NPR -এর বিরোধিতায় TMCP-র প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁকে ।
শেষ বিতর্ক হয় কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে । এই বিশ্ববিদ্যালয়েরও সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্রে নাম ছিল না রাজ্যপাল তথা আচার্যের । এমনকি তাঁকে সমাবর্তনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ তুলে টুইটারে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন আচার্য । সেখানেই শেষ নয় । উপাচার্যকে তার জন্য শো-কজ়ও করেন রাজ্যপাল । এই ধরনের একের পর এক ঘটনার মধ্যেই আজ স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে রাজ্যপালের সভাপতিত্ব করার বিষয়টি কী তাহলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে কেন্দ্র করে যে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত এতদিন অব্যাহত ছিল তা মেটার ইঙ্গিত দিচ্ছে? প্রশ্ন উঠছে সংশ্লিষ্ট মহলে ।
যদিও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত 17 ফেব্রুয়ারি রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করার পর থেকেই রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের আবহ কিছুটা কেটেছে । মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কয়েকদিন পরেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ ভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে বৈঠক করেন বলে জানা গেছিল । দু'টি বৈঠকই ইতিবাচক হয়েছিল বলে টুইটে জানিয়েছিলেন জগদীপ ধনকড় । তারপর থেকেই তাঁর মুখে রাজ্যের প্রতি নরম সুর শোনা যাচ্ছিল । এরই মধ্যে তিনি আজ টুইট করে বলেন, "25 ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে আচার্য হিসেবে সভাপতিত্ব করব । 2008 সালে শুরু হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় 2017 সালে । এই সুযোগে উপাচার্য ও ফ্যাকাল্টিদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করব ।"
সমাবর্তনে রাজ্যপালের অংশগ্রহণ ও তাঁর সভাপতিত্ব করার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরি বলেন, "এই বছর বিধি অনুযায়ী আমরা কাজ করছি । বিধি অনুযায়ী আমরা উচ্চশিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি । তারপরে নিয়ম মেনে যা করার তা হচ্ছে । আমাদের সমাবর্তন করছি । সেখানে কে আসবেন বা কে আসবেন না সেই ব্যাপারটা নিয়ে আমরা কিছু বলি না । শিক্ষামন্ত্রী গত তিন বছর আসেননি, রাজ্যপাল এসেছেন । এই বছর কে আসবেন, কে আসবেন না আমি কিচ্ছু জানি না । আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয় আচার্য আসবেন কি না । তবে, শুনেছি আজকে উনি টুইট করেছেন উনি আসবেন । সেটা আমি আগামীকাল গেলে জানতে পারব । আমরা অফিশিয়ালি এখনও কিছু জানি না । আমাদের আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি । বিধি অনুযায়ী, রাজ্যপালের আমাদের জানানোর কথা নয়, তাঁর জানানোর কথা রাজ্য সরকারকে । সেটা উনি করেছেন কি না সেটা আগামীকাল জানতে পারব ।"