কলকাতা, 16 মে : দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের উপর সৃষ্ট নিম্নচাপ ক্রমশ ঘনীভূত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করেছে । আজ ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সেটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে । বর্তমানে সেটি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে । ওড়িশা- পারাদ্বীপের 1100 কিলোমিটার দক্ষিণে তথা দিঘা থেকে 1250 কিলোমিটার দক্ষিণে বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে 1330 কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে সেটি । এই গভীর নিম্নচাপটি আজ সন্ধের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বলে জানাল আলিপুর আবহাওয়া অফিস । ক্রমশ আরও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হবে 24 ঘণ্টার মধ্যে ।
আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে রবিবার অর্থাৎ 17 মে । 18 মে অভিমুখ পরিবর্তন করে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দিকে অগ্রসর হবে । ঘূর্ণিঝড় আমফান উত্তর-পূর্ব দিক থেকে এসে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিম দিকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলার দিকে অগ্রসর হবে । উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে আসার পর ঘূর্ণিঝড় আমফান আমাদের রাজ্যে প্রবেশ করবে কি না তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না । তবে রাজ্যের এক অংশে বিশেষ করে উপকূলের জেলাগুলিতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ।
কলকাতাসহ সাত জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে আগামী মঙ্গল ও বুধবার । কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে । গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে । উপকূলীয় জেলাগুলির মধ্যে উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরে 90 থেকে 100 কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে । সেই সঙ্গে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টির সর্তকতা দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস । গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে হালকা ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ।
এর প্রভাবে সোমবার থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটবে আমাদের রাজ্যে । মঙ্গলবার ও বুধবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলের জেলাগুলিতে। আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, 90 থেকে 100 কিলোমিটার পর্যন্ত ঝোড়ো হওয়া বইবে উপকূলের জেলাগুলিতে । উত্তর বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র উত্তাল হবে । গভীর সমুদ্রে ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে 190 থেকে 200 কিলোমিটার । গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সময়ে গতিবেগ ছিল 45 থেকে 60 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় । ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সময় এর গতিবেগ থাকবে 90 থেকে 110 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় । আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার এই ঘূর্ণিঝড় শক্তি সঞ্চয় করে অতি শক্তিশালী সক্রিয় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে । তখন এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকবে 120 থেকে 145 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় । ইতিমধ্যেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে । যাঁরা সমুদ্রে গেছেন তাঁদের দ্রুত ফিরে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । উপকূলের জেলাগুলিতেও সর্তকতা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস ।
এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছে থাইল্যান্ড । এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আগামী 24 ঘণ্টায় বর্ষা ঢুকবে আন্দামান-নিকোবরে । আলিপুর আওয়া অফিস জানিয়েছে, সব ঠিক থাকলে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে । আর কয়েক দিনের মধ্যেই আন্দামান দ্বীপে বর্ষা ঢুকে যাবে । আজ সকাল থেকে কলকাতায় আকাশ আংশিক মেঘলা রয়েছে। গত 24 ঘণ্টায় কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল 37.3 ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল 28.2 ডিগ্রি সেলসিয়াস যা স্বাভাবিকের থেকে দুই ডিগ্রি বেশি । বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সর্বোচ্চ 87% ও সর্বনিম্ন 46% । আগামী 24 ঘণ্টায় কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 38 ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা 28 ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকবে ।