ETV Bharat / state

দেহে মিলল 6 বুলেট, খুনে কি সুপারি কিলার ? কে এই দুলাল সরকার - MALDA TMC LEADER MURDER CASE

এখনও পর্যন্ত দুলাল সরকারের দেহে মিলেছে 6টি বুলেট ৷ তৃণমূল নেতা খুনে পুলিশকে দায়ী করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

ETV BHARAT
তৃণমূল নেতা খুনে কি সুপারি কিলার (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 2, 2025, 7:57 PM IST

মালদা, 2 জানুয়ারি: 2008 সালে প্রথমবার, 2017 সালে দ্বিতীয়বার ৷ দু’বারই বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছিলেন ৷ কিন্তু তৃতীয়বার আর শেষ রক্ষা হয়নি ৷ দুষ্কৃতীদের একের পর এক গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন জেলা তৃণমূলের সহসভাপতি, প্রখ্যাত ব্যবসায়ী দুলাল সরকার ওরফে বাবলা ৷ তাঁর খুনের পেছনে সুপারি কিলারের দল রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ৷

নিজের ঘনিষ্ঠ স্নেহভাজনের মৃত্যুর খবর প্রথম জনসমক্ষে নিয়ে আসেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ দিনের আলোয় নিজের এলাকায় দুলাল সরকারের খুনের ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা শহর ৷ ঘটনার প্রেক্ষিতে থমথমে হয়ে রয়েছে ঝলঝলিয়া এলাকা ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহর জুড়ে পুলিশি টহলদারি শুরু হয়েছে ৷ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মুখে কুলুপ জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের ৷ তবে দুলাল সরকারের এহেন মৃত্যুতে পুলিশকেই দায়ী করেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ৷

ETV BHARAT
দুলাল সরকারের দেহে মিলেছে 6টি বুলেট (নিজস্ব চিত্র)

1982 সালে প্রয়াত বরকত গনি খান চৌধুরীর হাত ধরে রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করেন দুলাল সরকার ৷ ধীরে ধীরে বরকত সাহেবের অন্যতম প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি ৷ 1995 সালে প্রথমবার কংগ্রেসের টিকিটে পুর নির্বাচনে অংশ নিয়েই ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলর হন ৷ 1999 সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি ৷ মালদা জেলায় কার্যত তিনিই তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা ৷ তিনি মোট ছ’বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ৷ তিন দফায় পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানও হন ৷ 2006 থেকে 2009 সাল পর্যন্ত জেলা তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন ৷ বর্তমানে তিনি ছিলেন দলের জেলা সহসভাপতি ৷

দুলাল সরকারের স্ত্রী চৈতালি ঘোষ সরকারও ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলর ৷ তিনি মালদা জেলা আদালতের একজন আইনজীবীও ৷ একমাত্র ছেলে পুপান শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি কলেজের ছাত্র ৷ ব্যবসায়ী হিসাবেও সফলতা পেয়েছিলেন দুলাল সরকার ৷ তিনিই প্রথম এই জেলায় প্লাইউড ফ্যাক্টরি নির্মাণ করেন ৷ করতেন আম আর জমির ব্যবসা ৷ রয়েছে স্কুল আর হোটেল ব্যবসাও ৷ উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ব্যবসায় ঢুকে পড়েন তিনি ৷ তাঁর পড়াশোনাও সেখানে থমকে যায় ৷

মালদা মেডিক্যালের সহকারী অধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার প্রসেনজিৎ বর জানিয়েছেন, "দুলালবাবুর শরীরের একাধিক জায়গায় গুলির চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে ৷ মূলত মাথার পিছনের দিকে তাঁকে গুলি করা হয়েছিল ৷ চিকিৎসকরা তাঁকে বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা করেন ৷ কিন্তু সফল হওয়া যায়নি ৷ তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷"

অপারেশন থিয়েটরের এক কর্মী জানিয়েছেন, দুটি গুলি তাঁর গলার পিছনের অংশে, দুটি মাথায়, দুটি পেটে লেগেছে ৷ এতেই শেষ নয় ৷ আরও একাধিক জায়গায় গুলির ক্ষতচিহ্ন রয়েছে ৷ ক্ষতস্থানগুলি থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় ৷ অনেক চেষ্টা করেও রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায়নি ৷ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয় তাঁর ৷

এদিকে এদিন কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আজ বাবলা সরকারকে খুন করা হয়েছে ৷ সে প্রথম থেকে আমাদের সঙ্গে দলের কাজ করত ৷ পুলিশের গাফিলতিতেই ওর এই মৃত্যু ৷ কারণ, এর আগেও ওকে খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল ৷ তবু পুলিশ ওর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ৷ আমি ফিরহাদ আর সাবিনাকে মালদা পাঠাচ্ছি ৷"

2008 সালে প্রথমবার দুষ্কৃতীদের গুলির নিশানা হন দুলাল সরকার ৷ সেবার গুলি তাঁর পেট ছুঁয়ে চলে যায় ৷ 2017 সালে ফের তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা ৷ সেবার গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল ৷ কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি ৷ কে বা কারা, কেন তাঁকে খুন করল, তা নিয়ে জেলা জুড়ে কানাঘুষো শুরু হয়েছে ৷ ইতিমধ্যে তদন্তে নেমে পড়েছে পুলিশ ৷ স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের একাংশেরও অনুমান, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে সুপারি কিলারের দল ৷ যে পদ্ধতিতে দুলালবাবুকে খুন করা হয়েছে তাতে দুষ্কৃতীরা যে রীতিমতো রেইকি করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত ৷ যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে একাধিক সিসি ক্যামেরা রয়েছে ৷ আপাতত সেসব ফুটেজের ভিত্তিতেই শুরু হয়েছে পুলিশি তদন্ত ৷

প্রতিদিনের মতো এদিন সকাল সওয়া 10টা নাগাদ সর্বমঙ্গলা পল্লির ফ্ল্যাট থেকে গাড়িতে চেপে প্লাইউড ফ্যাক্টরির দিকে রওনা দিয়েছিলেন দুলাল সরকার ৷ ভবানী মোড়ে গাড়ি থেকে নেমে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অফিসের সাফাইকর্মী টুসি হরিজনের সঙ্গে কথা বলেন ৷ সেখান থেকে রওনা দেন ফ্যাক্টরির উদ্দেশে ৷

তাঁর গাড়ির চালক সুমন রায় জানাচ্ছেন, "ফ্যাক্টরির সামনে যেতেই চার দুষ্কৃতী আমাদের পথ আটকায় ৷ তারা একটি বাইকে চেপে এসেছিল ৷ মুখে কাপড় বাঁধা ছিল ৷ আমি কাকুকে বলেছিলাম, যেন তিনি গাড়ি থেকে না নামেন ৷ কিন্তু তিনি থতমত খেয়ে গাড়ি থেকে নেমে যান ৷ তখনই দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় ৷ কাকু প্রাণ বাঁচাতে দোকানে ঢুকে পড়েন ৷ সেই দোকানে ঢুকে দুষ্কৃতীরা তাঁকে একের পর এক গুলি চালিয়ে বেরিয়ে যায় ৷ ওরা কেউ কোনও কথা বলেনি ৷ আমি গাড়ি ঘুরিয়ে দোকানের ভিতর ছুটে যাই ৷ কাকুকে ডাকাডাকি করি ৷ কিন্তু তিনি সাড়া দেননি ৷ তখন সেখানে অনেক লোক ৷ সবাই ছবি তুলছিল ৷ কেউ কাকুকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি ৷ শেষ পর্যন্ত পরিচিত লালটুদা আর আমি কাকুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করি ৷ দুষ্কৃতীদের আমি চিনতে পারিনি ৷ ওরা একটি বাইকেই এসেছিল মনে হয়েছে ৷"

প্রাণ বাঁচাতে যে দোকানে দুলাল সরকার আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই দোকানের কর্মী সুদাম মণ্ডল জানাচ্ছেন, "বাবলাদা প্রতিদিন সকালে কারখানায় আসতেন ৷ আজও এসেছিলেন ৷ গাড়ি থেকে নামতেই চারটি ছেলে তাঁকে তাড়া করে ৷ ওদের সবার হাতে ছিল পিস্তল ৷ মুখ কাপড়ে বাঁধা ৷ ওরা বাইরে থেকেই বাবলাদাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে ৷ সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় আমাদের দোকানের ভিতরে ঢুকে একের পর এক গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায় ৷ তখন আমরা দোকানে দু’জন ছিলাম ৷ ওরা আমাদেরও তাড়া করেছিল ৷ প্রাণ বাঁচাতে আমরা দোকান থেকে পালিয়ে যাই ৷"

কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না দুলাল সরকারের স্ত্রী চৈতালি ৷ হাসপাতাল ছাড়ার সময় শুধু বলে ওঠেন, "ও তো কারও ক্ষতি করেনি ৷ ওর উপর কাদের রাগ ছিল ? কারা আমার এত বড় ক্ষতি করে দিল ?"

মালদা, 2 জানুয়ারি: 2008 সালে প্রথমবার, 2017 সালে দ্বিতীয়বার ৷ দু’বারই বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছিলেন ৷ কিন্তু তৃতীয়বার আর শেষ রক্ষা হয়নি ৷ দুষ্কৃতীদের একের পর এক গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন জেলা তৃণমূলের সহসভাপতি, প্রখ্যাত ব্যবসায়ী দুলাল সরকার ওরফে বাবলা ৷ তাঁর খুনের পেছনে সুপারি কিলারের দল রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ৷

নিজের ঘনিষ্ঠ স্নেহভাজনের মৃত্যুর খবর প্রথম জনসমক্ষে নিয়ে আসেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ দিনের আলোয় নিজের এলাকায় দুলাল সরকারের খুনের ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা শহর ৷ ঘটনার প্রেক্ষিতে থমথমে হয়ে রয়েছে ঝলঝলিয়া এলাকা ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহর জুড়ে পুলিশি টহলদারি শুরু হয়েছে ৷ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মুখে কুলুপ জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের ৷ তবে দুলাল সরকারের এহেন মৃত্যুতে পুলিশকেই দায়ী করেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ৷

ETV BHARAT
দুলাল সরকারের দেহে মিলেছে 6টি বুলেট (নিজস্ব চিত্র)

1982 সালে প্রয়াত বরকত গনি খান চৌধুরীর হাত ধরে রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করেন দুলাল সরকার ৷ ধীরে ধীরে বরকত সাহেবের অন্যতম প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি ৷ 1995 সালে প্রথমবার কংগ্রেসের টিকিটে পুর নির্বাচনে অংশ নিয়েই ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলর হন ৷ 1999 সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি ৷ মালদা জেলায় কার্যত তিনিই তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা ৷ তিনি মোট ছ’বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ৷ তিন দফায় পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানও হন ৷ 2006 থেকে 2009 সাল পর্যন্ত জেলা তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন ৷ বর্তমানে তিনি ছিলেন দলের জেলা সহসভাপতি ৷

দুলাল সরকারের স্ত্রী চৈতালি ঘোষ সরকারও ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলর ৷ তিনি মালদা জেলা আদালতের একজন আইনজীবীও ৷ একমাত্র ছেলে পুপান শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি কলেজের ছাত্র ৷ ব্যবসায়ী হিসাবেও সফলতা পেয়েছিলেন দুলাল সরকার ৷ তিনিই প্রথম এই জেলায় প্লাইউড ফ্যাক্টরি নির্মাণ করেন ৷ করতেন আম আর জমির ব্যবসা ৷ রয়েছে স্কুল আর হোটেল ব্যবসাও ৷ উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ব্যবসায় ঢুকে পড়েন তিনি ৷ তাঁর পড়াশোনাও সেখানে থমকে যায় ৷

মালদা মেডিক্যালের সহকারী অধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার প্রসেনজিৎ বর জানিয়েছেন, "দুলালবাবুর শরীরের একাধিক জায়গায় গুলির চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে ৷ মূলত মাথার পিছনের দিকে তাঁকে গুলি করা হয়েছিল ৷ চিকিৎসকরা তাঁকে বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা করেন ৷ কিন্তু সফল হওয়া যায়নি ৷ তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷"

অপারেশন থিয়েটরের এক কর্মী জানিয়েছেন, দুটি গুলি তাঁর গলার পিছনের অংশে, দুটি মাথায়, দুটি পেটে লেগেছে ৷ এতেই শেষ নয় ৷ আরও একাধিক জায়গায় গুলির ক্ষতচিহ্ন রয়েছে ৷ ক্ষতস্থানগুলি থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় ৷ অনেক চেষ্টা করেও রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায়নি ৷ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয় তাঁর ৷

এদিকে এদিন কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আজ বাবলা সরকারকে খুন করা হয়েছে ৷ সে প্রথম থেকে আমাদের সঙ্গে দলের কাজ করত ৷ পুলিশের গাফিলতিতেই ওর এই মৃত্যু ৷ কারণ, এর আগেও ওকে খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল ৷ তবু পুলিশ ওর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ৷ আমি ফিরহাদ আর সাবিনাকে মালদা পাঠাচ্ছি ৷"

2008 সালে প্রথমবার দুষ্কৃতীদের গুলির নিশানা হন দুলাল সরকার ৷ সেবার গুলি তাঁর পেট ছুঁয়ে চলে যায় ৷ 2017 সালে ফের তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা ৷ সেবার গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল ৷ কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি ৷ কে বা কারা, কেন তাঁকে খুন করল, তা নিয়ে জেলা জুড়ে কানাঘুষো শুরু হয়েছে ৷ ইতিমধ্যে তদন্তে নেমে পড়েছে পুলিশ ৷ স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের একাংশেরও অনুমান, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে সুপারি কিলারের দল ৷ যে পদ্ধতিতে দুলালবাবুকে খুন করা হয়েছে তাতে দুষ্কৃতীরা যে রীতিমতো রেইকি করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত ৷ যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে একাধিক সিসি ক্যামেরা রয়েছে ৷ আপাতত সেসব ফুটেজের ভিত্তিতেই শুরু হয়েছে পুলিশি তদন্ত ৷

প্রতিদিনের মতো এদিন সকাল সওয়া 10টা নাগাদ সর্বমঙ্গলা পল্লির ফ্ল্যাট থেকে গাড়িতে চেপে প্লাইউড ফ্যাক্টরির দিকে রওনা দিয়েছিলেন দুলাল সরকার ৷ ভবানী মোড়ে গাড়ি থেকে নেমে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অফিসের সাফাইকর্মী টুসি হরিজনের সঙ্গে কথা বলেন ৷ সেখান থেকে রওনা দেন ফ্যাক্টরির উদ্দেশে ৷

তাঁর গাড়ির চালক সুমন রায় জানাচ্ছেন, "ফ্যাক্টরির সামনে যেতেই চার দুষ্কৃতী আমাদের পথ আটকায় ৷ তারা একটি বাইকে চেপে এসেছিল ৷ মুখে কাপড় বাঁধা ছিল ৷ আমি কাকুকে বলেছিলাম, যেন তিনি গাড়ি থেকে না নামেন ৷ কিন্তু তিনি থতমত খেয়ে গাড়ি থেকে নেমে যান ৷ তখনই দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় ৷ কাকু প্রাণ বাঁচাতে দোকানে ঢুকে পড়েন ৷ সেই দোকানে ঢুকে দুষ্কৃতীরা তাঁকে একের পর এক গুলি চালিয়ে বেরিয়ে যায় ৷ ওরা কেউ কোনও কথা বলেনি ৷ আমি গাড়ি ঘুরিয়ে দোকানের ভিতর ছুটে যাই ৷ কাকুকে ডাকাডাকি করি ৷ কিন্তু তিনি সাড়া দেননি ৷ তখন সেখানে অনেক লোক ৷ সবাই ছবি তুলছিল ৷ কেউ কাকুকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি ৷ শেষ পর্যন্ত পরিচিত লালটুদা আর আমি কাকুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করি ৷ দুষ্কৃতীদের আমি চিনতে পারিনি ৷ ওরা একটি বাইকেই এসেছিল মনে হয়েছে ৷"

প্রাণ বাঁচাতে যে দোকানে দুলাল সরকার আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই দোকানের কর্মী সুদাম মণ্ডল জানাচ্ছেন, "বাবলাদা প্রতিদিন সকালে কারখানায় আসতেন ৷ আজও এসেছিলেন ৷ গাড়ি থেকে নামতেই চারটি ছেলে তাঁকে তাড়া করে ৷ ওদের সবার হাতে ছিল পিস্তল ৷ মুখ কাপড়ে বাঁধা ৷ ওরা বাইরে থেকেই বাবলাদাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে ৷ সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় আমাদের দোকানের ভিতরে ঢুকে একের পর এক গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায় ৷ তখন আমরা দোকানে দু’জন ছিলাম ৷ ওরা আমাদেরও তাড়া করেছিল ৷ প্রাণ বাঁচাতে আমরা দোকান থেকে পালিয়ে যাই ৷"

কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না দুলাল সরকারের স্ত্রী চৈতালি ৷ হাসপাতাল ছাড়ার সময় শুধু বলে ওঠেন, "ও তো কারও ক্ষতি করেনি ৷ ওর উপর কাদের রাগ ছিল ? কারা আমার এত বড় ক্ষতি করে দিল ?"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.