সন্দেশখালি, 2 জানুয়ারি: মুখ্যমন্ত্রীর সভা করে যাওয়ার দু'দিনের মাথাতেই ফের উত্তপ্ত হল সন্দেশখালি। এবার তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি লক্ষ্য করে চলল এলোপাথাড়ি গুলি। যার জেরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে সরবেড়িয়া-আগারহাটি পঞ্চায়েত এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ কয়েকটি গুলির খোল উদ্ধার করেছে।
পাশাপাশি ওই তৃণমূল নেতা ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এর নেপথ্যে কী কারণ থাকতে পারে, তাও জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। তবে, ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। গুলি চলার সময় বাড়িতেই ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান যাদবকুমার মণ্ডল। যদিও, বাড়ির বাইরে না-বেরনোয় কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
শেখ শাহজাহান পরবর্তী জমি-কাণ্ডের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়নি সন্দেশখালি। বেশ কয়েক মাস ধরে শান্তই ছিল এলাকা। নতুন বছরের শুরুতে সেই সন্দেশখালিই ফের সরগরম হয়ে উঠল তৃণমূল নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনায়। তবে, কেন গুলি চলল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ শাসকদলের পঞ্চায়েত প্রধানই। এই বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না, বলে দাবি। তবে এর নেপথ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে পাল্টা দাবি করে শাসক শিবিরকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। দাবি, পাল্টা দাবি ঘিরে রাজনীতির পারদ আবারও চড়তে শুরু করেছে সন্দেশখালিতে। বস্তুত, বৃহস্পতিবার মালদায় গুলি চলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে তৃণমূল কাউন্সিলরের মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে গুলি। মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তার ঠিক আগে সন্দেশখালির এই ঘটনা যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে এলাকায়।
তৃণমূল পঞ্চায়েত তৃণমূল প্রধান যাদবকুমার মণ্ডলের বাড়ি সরবেড়িয়া এলাকাতেই। আগে এই পঞ্চায়েতের দায়িত্ব ছিল শাহজাহান ঘনিষ্ঠ জিয়াউদ্দিন মোল্লার কাঁধে। ইডি'র উপর হামলার ঘটনায় শাহজাহানের সঙ্গে গ্রেফতার হতে হয় তাঁকেও। বর্তমানে তিনি জেল হেফাজতে রয়েছেন। তাঁর জায়গায় সরবেড়িয়া-আগারহাটি পঞ্চায়েত প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় যাদবকুমার মণ্ডলকে। সেই পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি লক্ষ্য করেই বুধবার গভীর রাতে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার সঙ্গে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ কারও যোগ রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
দুষ্কৃতীরা পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি ঘিরে যেভাবে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছে, তার ছাপও স্পষ্ট রয়েছে সেখানে। গুলিতে বাড়ির দেওয়ালে চলটা কোথাও খসে গিয়েছে। আবার কোথাও ফুটো হয়ে গিয়েছে দেওয়াল। ঘটনার আকস্মিকতায় এখনও চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ তৃণমূল নেতা যাদবকুমার মণ্ডলের। এই বিষয়ে তিনি বলেন, "গতকাল রাতে বাইরে কিছু ফাটার আওয়াজ পাই আমি। দাদা বলল, ঘরের বাইরে কারা দাঁড়িয়ে আছে। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে বন্দুক বের করে গুলি করছে। তুই এখন বাড়ির বাইরে যাবি না। কারা, কী কারণে গুলি চালিয়েছে, সেটা বলতে পারব না। আমার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। পুলিশকে সমস্ত ঘটনা জানিয়েছি। বাড়ি থেকে গুলির খোল উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে। এই ধরনের ঘটনার সন্মুখীন আগে কখনও হতে হয়নি। আতঙ্কিত হওয়াটা স্বাভাবিক।"
এদিকে, ঘটনার পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির। এই বিষয়ে বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার যুব মোর্চার সভাপতি পলাশ সরকার বলেন, "এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছাড়া আর কিছুই নয় ৷ শেখ শাহজাহান পরবর্তী সন্দেশখালি কার দখলে থাকবে, তা নিয়ে শাহজাহান গোষ্ঠী এবং বিধায়ক সুকুমার মাহাতো গোষ্ঠীর লড়াই চলছে ৷ তৃণমূল যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন এই দলে ভাগবাটোয়ারা ও লুটের লড়াই চলতে থাকবে।"