কলকাতা, 17 অক্টোবর: তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মিম করায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এক ছাত্র ৷ আর পুলিশের এই অতি-সক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত ৷ বিচারপতির বক্তব্য, বরানগর থানার ওসি, অভিযোগ নথিবদ্ধকারী অফিসার ও তদন্তকারী অফিসারকেও এই মামলায় যুক্ত করতে হবে ৷ মামলাটির পরবর্তী শুনানি আগামিকাল, বুধবার ৷
সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের লালগোলার বাসিন্দা শুভাঞ্জন বড়াল ৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের 'শ্রীকৃষ্ণের শেষ ক'টাদিন' (সাহিত্য আকাদেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত) বইয়ের প্রচ্ছদে শ্রীকৃষ্ণের ছবির জায়গায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের মুখের ছবি বসিয়েছেন তিনি ৷ এরপর সেই মিম করা প্রচ্ছদটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন শুভাঞ্জন ৷
এই ঘটনার 12 দিন পর বরানগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এক তৃণমূল সমর্থক ৷ ওই তৃণমূল সমর্থকের বক্তব্য, "আমার বিষয়টা খারাপ লেগেছে" ৷ তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তড়িঘড়ি বরাহনগর থেকে পুলিশ লালগোলা গিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে আসে ৷ যদিও পরে ব্যারাকপুর আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে যান অভিযুক্ত শুভাঞ্জন ৷ এরপর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ৷
আরও পড়ুন: রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইডিকে গাইডলাইন বেঁধে দিল হাইকোর্ট
এই মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার সকালে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত প্রশ্ন করেন, "কী করে 41-এ নোটিশ না-দিয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করল ? এদের শিক্ষা হওয়া উচিত ৷ অপরাধটা কী ? কোন উৎসাহে এত তৎপরতা পুলিশের ? ধরে নিতাম, তাৎক্ষণিক ভাবে কোনও ঘটনা ঘটেছে, আর অভিযুক্তকে হাতের কাছে পেয়ে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৷ সেখানে তবু একটা যুক্তি থাকে ৷ কিন্তু এখানে বরানগর থেকে পুলিশ ছুটছে, লালগোলায় গিয়ে তুলে আনছে ! এটা কী !"
এদিন সরকারি আইনজীবী অমিতেষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "যা ঘটেছে তা খুব খারাপ ঘটনা ৷ এক ঘণ্টার মধ্যে ল্যাপটপ ফিরিয়ে দেওয়া হবে ৷ আমাদের সময় দিন ৷ পুজোর ছুটির পরে এই মামলার শুনানি হোক ৷" ক্ষুব্ধ বিচারপতি তাঁকে ভর্ৎসনা করে বলেন, "ফেরত দেওয়া পরের কথা, আগে তো গ্রেফতারের কারণ কী ? কেন ল্যাপটপ কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সেটা জানাক পুলিশ ৷ কালই শুনানি হবে ৷ কোনও সময় দেওয়ার সুযোগ নেই ৷"
গতকাল এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, "অভিযোগ কোথায় ? কেন ল্যাপটপ আটকে রাখা হয়েছে ? কী গ্রাউন্ড ? কী কারণে এফআইআর, গ্রেফতার-ই বা কেন ? এই সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে ।"
আজ সরকারি আইনজীবী আদালতে তাঁর ভুল স্বীকার করেন ৷ অভিযুক্তর তরফে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "শুভাঞ্জন বড়াল, বিএ অনার্সের ছাত্র ৷ মুর্শিদাবাদের লালগোলা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় ৷ 500, 505(2), 34 ধারায় অভিযুক্ত ৷ পরের দিন 26 সেপ্টেম্বর তিনি ব্যারাকপুর আদালত থেকে জামিন পান ৷ এই ঘটনায় থানার ওসির জেলে যাওয়া উচিত ৷" 18 অক্টোবর এই মামলার শুনানি হবে ৷
আরও পড়ুন: আদালতে রক্ষাকবচ পেলেন না অভিষেকের আপ্ত সহায়ক সুমিত রায়