কলকাতা, 22 জুলাই: ক্যালেন্ডারের পাতায় পার হয়ে গেল আরও একটি একুশে জুলাই । আর ওইদিন শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে যখন ভিক্টোরিয়া হাউজের মূলমঞ্চে বক্তব্য রাখছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সেই সময় টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখেছিলেন একদা তৃণমূল নেত্রীর ছায়াসঙ্গী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । সেখানেও অবশ্য আছে টুইস্ট । প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের টিভিতে তৃণমূলের প্রায় সব নেতা-নেত্রীর বক্তব্যই খুব মন দিয়ে শুনেছেন দলের প্রাক্তন মহাসচিব । তবে এক তরুণ নেতার বক্তব্য শুরু হতেই রীতিমতো বিরক্ত প্রকাশ করে চ্যানেল ঘুরিয়ে দেন তিনি । কে সেই তৃণমূল নেতা, যার বক্তব্য শোনা তো দূর, তাঁকে দেখার ক্ষেত্রেও পার্থর যথেষ্ট অনীহা প্রকাশ পেল ! না, সেই নেতার পরিচয় প্রকাশ করতে কোনও মতেই রাজি হয়নি জেল কর্তৃপক্ষ । আর এই কাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
শুক্রবার একের পর এক তৃণমূলের প্রথমসারির নেতা-নেত্রীরা একুশের মঞ্চ থেকে বক্তব্য রেখেছেন । সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়, ফিরহাদ হাকিম, শিউলি সাহা, সায়নী ঘোষ-সহ আরও বেশ কয়েকজনকে পডিয়ামে উঠতে দেখা গিয়েছে । সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস । এর মাঝেই কোনও এক বক্তার বক্তব্য শুনতে চাননি পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় । সেই বক্তার প্রতি যে তিনি বীতশ্রদ্ধ তাও পার্থের ব্যবহারে স্পষ্ট । জেল সূত্রে খবর, সকাল থেকেই টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখেছিলেন পার্থ। কিন্তু দলনেত্রী মূল মঞ্চে বক্তব্য রাখার আগে অন্যান্য বেশ কয়েকজন নেতা মূলমঞ্চে বক্তব্য রাখছিলেন । আর তাঁদের মধ্যেই একজন নেতার বক্তব্য শুনে খানিকটা বিরক্তি প্রকাশ করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, ওই নেতার বক্তব্য শুরু হতেই টেলিভিশনের চ্যানেল ঘুরিয়ে দেন পার্থ।
এরপর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় মূল মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠলে, তা অবশ্য মন দিয়ে শুনতে দেখা যায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন মহাসচিবকে । দল তাঁকে ছেঁটে ফেলেছে । দলের সব পদ থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তারপরও বারবার পার্থ দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন । এমনকী দল নির্বাচনে জিতবে বলেও মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে । কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি । দলের তরফে তাঁকে আর সেই জায়গা দেওয়া হয়নি।
2022 সালে একুশে জুলাইয়ে যিনি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বর্তমান ঠিকানা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার। ওই বছরই 22 জুলাই ভোরবেলা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তদন্তকারী আধিকারিকরা কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার নাক তলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি ঘিরে ফেলেন। শুরু হয় চিরুনি তল্লাশি অভিযান। প্রায় 23 ঘণ্টা পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে অবশেষে 23 জুলাই খাতায়কলমে রাত তিনটে নাগাদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অ্যারেস্ট মেমোয় সই করিয়ে গ্রেফতার দেখান ইডি-র আধিকারিকরা । তারপর থেকেই বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে পার্থর জীবনে।
আরও পড়ুন: জেলে ধমক খেয়েছেন, এক বছরেও জামিন পেলেন না 'হেভিওয়েট' পার্থ
মন্ত্রীত্ব গিয়েছে । দলীয় পদও গিয়েছে । বর্তমানে বেহালা পশ্চিমের বিধায়কের সঙ্গেই তিনি প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগরের একজন আবাসিক মাত্র। যদি এই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপর এখনও প্রভাবশালী তকমা দিয়ে রেখেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তকারীরা। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতের একটি আংটি সামনে এনে তদন্তকারীরা আদালতে সওয়াল করেছিলেন, একজন সংশোধনাগারের আবাসিকের হাতে কেন আংটি থাকবে? তাহলে কি পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলেও তাঁর প্রভাব খাটাচ্ছেন ? এরপর আদালতে ছুঁটতে হয়েছিল প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের সুপার দেবাশীষ চক্রবর্তীকেও। অবশেষে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে সরে যায় সেই বিশেষ আংটি। তবে এখনও পার্থ চট্টোপাধ্যায় রয়ে গিয়েছেন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের একজন আবাসিক হিসেবে। আর সেখানে বসেই একুশে জুলাইয়ের অনুষ্ঠান দেখলেও, দেখলেন না একজনকে।