ETV Bharat / state

বাড়ছে হাতির মৃত্যু , মানুষের সঙ্গে সংঘাতই কি কারণ ? - Man-Elephant conflict

হাতির মৃত্যু যেমন বাড়ছে , তেমনি বাড়ছে হাতির সংখ্যাও । কিন্তু পর্যাপ্ত বাসস্থান কোথায় । ফলে খাদ্যের অভাবে তারা লোকালয়ে চলে আসছে । ফসল নষ্ট করছে । তার জন্য মানুষ জমিতে বিষ প্রয়োগ করছে । কিংবা জমিতে তার ফেলে রাখছে । এভাবেই হাতির মৃত্যু হচ্ছে । মানুষ ও হাতির দ্বন্দ্বে মারা যাচ্ছে মানুষও ।

Man-Elephant conflict
বাড়ছে হাতির মৃত্যু , হাতি ও মানুষের সংঘাত কি কারণ
author img

By

Published : Aug 12, 2020, 6:39 PM IST

জলপাইগুড়ি , 12 অগাস্ট : ওয়ার্ল্ড এলিফ্যান্ট ডে বা বিশ্ব হাতি দিবস । আট বছর আগে অর্থাৎ 2012 সালের 12 অগাস্ট দিনটি প্রথম পালন করা করা হয় । সৌজন্যে দুই কানাডিয়ান চিত্র পরিচালক এবং থাইল্যান্ডের রিইন্ট্রোডাকশন ফাউন্ডেশন । দিনটি পালনের উদ্দেশ্য হাতির সংরক্ষণের বিষয়ে আরও সচেতনতা বাড়িয়ে তোলা । কিন্তু , সচেতনতা কি সেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ? পরিসংখ্যান বলছে , বিশ্বে হাতির মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে । এর প্রধান কারণ মানুষ ও হাতির মধ্যে সংঘাত ।

কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক (M0EFCC)-র মতে , মানুষ ও হাতির সংঘর্ষে বছরে দেশে কমপক্ষে 500 জন মানুষ এবং 100 টি হাতি মারা যাচ্ছে । বিশ্বে এশিয়ান হাতি রয়েছে 50,000-60,000 ৷ যার মধ্যে 60 শতাংশ ভারতেই রয়েছে । দেশে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে হাতিরা ?

  • হাতির দাঁত নিয়ে ব্যবসা ।
  • জঙ্গল কেটে ফলেছে । ফলে বাসস্থান সংকট তৈরি হচ্ছে ।
  • যেসব হাতি বন্দি , তাদের ক্ষেত্রে বিশেষত লকডাউনের সময় খাদ্যসংকট দেখা দিচ্ছে ।

ফলে হাতির মৃত্যু বাড়ছে । রাজ্যে বিশেষত উত্তরবঙ্গের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে, প্রতি বছর রাজ্যে হাতির মৃত্যু বেড়ে যাচ্ছে । উত্তববঙ্গের শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং জেলাতেও এই ছবি দেখা যাচ্ছে । এইসব জায়গায় বেশিরভাগ হাতির মৃত্যু হয়েছে ট্রেনের ধাক্কায়, বিষক্রিয়ায় কিংবা ইলেকট্রিক শকে । কারণ হাতির সংখ্যা অনুযায়ী, পর্যাপ্ত পরিণামে জঙ্গল নেই । জঙ্গল কেটে ফেলা হচ্ছে । খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে । ফলে তারা লোকালয়ে চলে আসছে । জমি থেকে সমস্ত ফসল খেয়ে নিচ্ছে । জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় ফসল বাঁচাতে কখনও হাতি মারা যাচ্ছে । কখনও বা হাতির হানায় মানুষ মারা যাচ্ছে । ফসল বাঁচাতে একদিকে যেমন মানুষ ইলেকট্রিকের তার ফেলে রাখছে । অন্যদিকে , জমিতে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে । ফলে কখনও বিষক্রিয়ায় , কখনও ইলেকট্রিক শক কিংবা ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হচ্ছে ।

প্রতি বছর রাজ্যে হাতির মৃত্যু বেড়ে যাচ্ছে

শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার জংশনের ডুয়ার্স রুটে 2004 সালে ব্রডগেজ লাইন হওয়ার ফলে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে । 2004 সালে শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ারগামী রেলপথটি মিটার গেজ থেকে ব্রড গেজে রূপান্তরিত হওয়ার পরেই ট্রেনে কাটা পড়ে হাতির মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে । 1973 সাল থেকে 2013 সাল পর্যন্ত ট্রেনের ধাক্কায় 53টি হাতির মৃত্যু হয়েছিল । তার মধ্যে 2004 সাল থেকে 2013 সাল পর্যন্ত ট্রেনের ধাক্কায় 30 টি হাতির মৃত্যু হয়েছে । 2016 সালের মে মাসে মাদারিহাটে , 14 ডিসেম্বর গুলমাতে এবং 23 ডিসেম্বর রাজাভাতখাওয়ার পানিঝোরাতে ট্রেনের ধাক্কায় দুইটি হাতি মারা গেছে । 2015-2016 সালে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু কমলেও 2017 সাল থেকে ফের হাতির মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে । 2018 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ট্রেনের ধাক্কায় ছয়টি হাতির মৃত্যু হয় । জমিতে ফসল বাঁচাতে , বিষ প্রয়োগ করে বা ইলেকট্রনিক শকের ফলে হাতি মারা যাচ্ছে । গতমাসেই ইলেকট্রিক শকে দুটি হাতির মৃত্যু হয়েছে ।

উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার জলদাপাড়া , গোরুমারা , নেওড়াভ্যালি , বক্সা জাতীয় উদ্যানে , মহানন্দা , চাপড়ামারি অভয়ারণ্যে হাতির সংখ্যা বেশি । বিশেষ করে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিং জেলাতেই ট্রেনের ধাক্কায় , ইলেকট্রিক শকে , বিষক্রিয়ায় হাতির মৃত্যু বেশি হয়েছে । পরিসংখ্যান অনুযায়ী , জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার , নাগরাকাটা, ধুপগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট, কালচিনি ব্লকে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু বেশি হয়েছে ।

মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে হাতির সংখ্যাও । আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলার 977.51 বর্গকিলোমিটারে জাতীয় উদ্যান , অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হাতির সংখ্যা বেশি রয়েছে বলে বন্যপ্রাণ শাখা থেকে জানা গেছে । অন্যদিকে , দক্ষিণবঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর , বাঁকুড়া , পুরুলিয়া জেলার 414 বর্গকিলোমিটার এলাকায় হাতি রয়েছে । উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে 1391.51 বর্গকিলোমিটার এলাকায় হাতি রয়েছে ।

বনবিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী উত্তরবঙ্গে 2002 সালে হাতির সংখ্যা ছিল 292 । 2005-এ তা বেড়ে হয় 300 । 2007-এ সংখ্যাটা হয় 350 । 2010-এ হাতির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে 529 ।

মানুষ ও হাতির সংঘাত যাতে না বাড়ে , মানুষ ও হাতির যাতে কোনও ক্ষতি না হয় তার জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ করেছে জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণী বিভাগ । ইতিমধ্যেই বনবিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামে হাতির আসার আগে সাইরেন বাজিয়ে গ্রামবাসীকে সজাগ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে । জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামে হাতি ঢুকলেই বেজে উঠবে সাইরেন । আর তাতে সতর্ক হয়ে যাবেন বনকর্মীরা । সজাগ হবেন গ্রামবাসীরা । অটোমেটেড এলিফ্যান্ট ট্র‍্যাকিং ডিভাইজ় প্রোজেক্টের মাধ্যমে এই সুবিধা পাচ্ছেন জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার মানুষেরা । জলপাইগুড়ি গোরুমারা জাতীয় উদ্যানের কালীপুর ইকো ভিলেজের চারপাশে চারটি ডিভাইজ় লাগানো হয়েছে । 150 মিটার অন্তর অন্তর ডিভাইসগুলি পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো হয়েছে ।

এই বিষয়ে জলপাইগুড়ির এক বন্যপ্রাণী প্রেমী সংগঠনের সদস্য শ্যামাপ্রসাদ পাণ্ডে জানান , "বন্যপ্রাণী ও মানুষের সংঘাত এবার বাড়বে বলে আমরা মনে করছি । কারণ যারা বাইরে কাজে গিয়েছিল , তারা ফিরে এসেছে । তারা তাদের যা জমি ছিল সেই জমিতে ধান লাগিয়েছে । হাতির এলাকাতেও জমিগুলিতে ধান লাগানো হয়েছে । ফলে এবার মানুষ ও হাতির সংঘাত বাড়বে বলে আমরা মনে করছি । এই সংঘাত এড়ানোর জন্য আমরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করছি । গ্রামের মানুষ যাতে ধান রক্ষা করতে পারে তার জন্য তাদের যাতে পুরোপুরি সাহায্য করা যায় তার জন্য বনবিভাগের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন ব্যবস্থা করছি । এছাড়া , আমরা লক্ষ্য করছি ইলেকট্রিকের তার অনেক নিচ দিক দিয়ে যাওয়ার ফলে হাতির সংস্পর্শে আসছে । এইবিষয়টি আমরা বিদ্যুৎ বণ্টন কম্পানিকে দেখার জন্য বলব ।"

জলপাইগুড়ি গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের DFO নিশা গোস্বামী বলেন , "আমরা মানুষ ও হাতির সংঘাত রুখতে বাল্ক মেসেজের ব্যবস্থা করেছি । কোথাও হাতির হানার আশঙ্কা থাকলে আমরা আগের থেকে তাদের মেসেজ পাঠিয়ে সচেতন করছি । প্রায়শই জঙ্গল থেকে লোকালয়ে বেরিয়ে আসে হাতি । কখনও জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার মানুষের চাষাবাদের ক্ষতি করে । কখনও বা জীবনহানির ও ঘটনা ঘটে । এলার্মিং সিস্টেমের ফলে হাতি গ্রামের আশপাশে এলেই আমাদের সংকেত দেবে । ফলে আমাদের বনকর্মীরাও বুঝতে পারবে যে হাতি ঢুকছে । এবং গ্রামবাসীরাও সজাগ হয়ে যাবে তাতে করে জীবনহানির ঘটনা ঘটবে না। আমরা আশাবাদী এই ডিভাইজ়ের মাধ্যমে আমরা ভালো ফল পাব । আমরা কখনওই চাই না মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সংঘাত হোক ।"

এছাড়া ট্রেনে কাটা পড়ে হাতির মৃত্যু ঠেকাতে জলপাইগুড়ির চালসা ও আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনিতে মৌ মাছির শব্দের সাউন্ড স্টেশনে লাগানো হয়েছে । হাতি রেললাইনের পাশে এলেই মাইকে মৌমাছির শব্দের আওয়াজ চালু করে দেওয়া হচ্ছে । যার ফলে হাতি চলে যাচ্ছে ।

জলপাইগুড়ি , 12 অগাস্ট : ওয়ার্ল্ড এলিফ্যান্ট ডে বা বিশ্ব হাতি দিবস । আট বছর আগে অর্থাৎ 2012 সালের 12 অগাস্ট দিনটি প্রথম পালন করা করা হয় । সৌজন্যে দুই কানাডিয়ান চিত্র পরিচালক এবং থাইল্যান্ডের রিইন্ট্রোডাকশন ফাউন্ডেশন । দিনটি পালনের উদ্দেশ্য হাতির সংরক্ষণের বিষয়ে আরও সচেতনতা বাড়িয়ে তোলা । কিন্তু , সচেতনতা কি সেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ? পরিসংখ্যান বলছে , বিশ্বে হাতির মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে । এর প্রধান কারণ মানুষ ও হাতির মধ্যে সংঘাত ।

কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক (M0EFCC)-র মতে , মানুষ ও হাতির সংঘর্ষে বছরে দেশে কমপক্ষে 500 জন মানুষ এবং 100 টি হাতি মারা যাচ্ছে । বিশ্বে এশিয়ান হাতি রয়েছে 50,000-60,000 ৷ যার মধ্যে 60 শতাংশ ভারতেই রয়েছে । দেশে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে হাতিরা ?

  • হাতির দাঁত নিয়ে ব্যবসা ।
  • জঙ্গল কেটে ফলেছে । ফলে বাসস্থান সংকট তৈরি হচ্ছে ।
  • যেসব হাতি বন্দি , তাদের ক্ষেত্রে বিশেষত লকডাউনের সময় খাদ্যসংকট দেখা দিচ্ছে ।

ফলে হাতির মৃত্যু বাড়ছে । রাজ্যে বিশেষত উত্তরবঙ্গের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে, প্রতি বছর রাজ্যে হাতির মৃত্যু বেড়ে যাচ্ছে । উত্তববঙ্গের শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং জেলাতেও এই ছবি দেখা যাচ্ছে । এইসব জায়গায় বেশিরভাগ হাতির মৃত্যু হয়েছে ট্রেনের ধাক্কায়, বিষক্রিয়ায় কিংবা ইলেকট্রিক শকে । কারণ হাতির সংখ্যা অনুযায়ী, পর্যাপ্ত পরিণামে জঙ্গল নেই । জঙ্গল কেটে ফেলা হচ্ছে । খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে । ফলে তারা লোকালয়ে চলে আসছে । জমি থেকে সমস্ত ফসল খেয়ে নিচ্ছে । জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় ফসল বাঁচাতে কখনও হাতি মারা যাচ্ছে । কখনও বা হাতির হানায় মানুষ মারা যাচ্ছে । ফসল বাঁচাতে একদিকে যেমন মানুষ ইলেকট্রিকের তার ফেলে রাখছে । অন্যদিকে , জমিতে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে । ফলে কখনও বিষক্রিয়ায় , কখনও ইলেকট্রিক শক কিংবা ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হচ্ছে ।

প্রতি বছর রাজ্যে হাতির মৃত্যু বেড়ে যাচ্ছে

শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার জংশনের ডুয়ার্স রুটে 2004 সালে ব্রডগেজ লাইন হওয়ার ফলে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে । 2004 সালে শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ারগামী রেলপথটি মিটার গেজ থেকে ব্রড গেজে রূপান্তরিত হওয়ার পরেই ট্রেনে কাটা পড়ে হাতির মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে । 1973 সাল থেকে 2013 সাল পর্যন্ত ট্রেনের ধাক্কায় 53টি হাতির মৃত্যু হয়েছিল । তার মধ্যে 2004 সাল থেকে 2013 সাল পর্যন্ত ট্রেনের ধাক্কায় 30 টি হাতির মৃত্যু হয়েছে । 2016 সালের মে মাসে মাদারিহাটে , 14 ডিসেম্বর গুলমাতে এবং 23 ডিসেম্বর রাজাভাতখাওয়ার পানিঝোরাতে ট্রেনের ধাক্কায় দুইটি হাতি মারা গেছে । 2015-2016 সালে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু কমলেও 2017 সাল থেকে ফের হাতির মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে । 2018 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ট্রেনের ধাক্কায় ছয়টি হাতির মৃত্যু হয় । জমিতে ফসল বাঁচাতে , বিষ প্রয়োগ করে বা ইলেকট্রনিক শকের ফলে হাতি মারা যাচ্ছে । গতমাসেই ইলেকট্রিক শকে দুটি হাতির মৃত্যু হয়েছে ।

উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার জলদাপাড়া , গোরুমারা , নেওড়াভ্যালি , বক্সা জাতীয় উদ্যানে , মহানন্দা , চাপড়ামারি অভয়ারণ্যে হাতির সংখ্যা বেশি । বিশেষ করে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিং জেলাতেই ট্রেনের ধাক্কায় , ইলেকট্রিক শকে , বিষক্রিয়ায় হাতির মৃত্যু বেশি হয়েছে । পরিসংখ্যান অনুযায়ী , জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার , নাগরাকাটা, ধুপগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট, কালচিনি ব্লকে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু বেশি হয়েছে ।

মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে হাতির সংখ্যাও । আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলার 977.51 বর্গকিলোমিটারে জাতীয় উদ্যান , অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হাতির সংখ্যা বেশি রয়েছে বলে বন্যপ্রাণ শাখা থেকে জানা গেছে । অন্যদিকে , দক্ষিণবঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর , বাঁকুড়া , পুরুলিয়া জেলার 414 বর্গকিলোমিটার এলাকায় হাতি রয়েছে । উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে 1391.51 বর্গকিলোমিটার এলাকায় হাতি রয়েছে ।

বনবিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী উত্তরবঙ্গে 2002 সালে হাতির সংখ্যা ছিল 292 । 2005-এ তা বেড়ে হয় 300 । 2007-এ সংখ্যাটা হয় 350 । 2010-এ হাতির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে 529 ।

মানুষ ও হাতির সংঘাত যাতে না বাড়ে , মানুষ ও হাতির যাতে কোনও ক্ষতি না হয় তার জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ করেছে জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণী বিভাগ । ইতিমধ্যেই বনবিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামে হাতির আসার আগে সাইরেন বাজিয়ে গ্রামবাসীকে সজাগ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে । জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামে হাতি ঢুকলেই বেজে উঠবে সাইরেন । আর তাতে সতর্ক হয়ে যাবেন বনকর্মীরা । সজাগ হবেন গ্রামবাসীরা । অটোমেটেড এলিফ্যান্ট ট্র‍্যাকিং ডিভাইজ় প্রোজেক্টের মাধ্যমে এই সুবিধা পাচ্ছেন জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার মানুষেরা । জলপাইগুড়ি গোরুমারা জাতীয় উদ্যানের কালীপুর ইকো ভিলেজের চারপাশে চারটি ডিভাইজ় লাগানো হয়েছে । 150 মিটার অন্তর অন্তর ডিভাইসগুলি পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো হয়েছে ।

এই বিষয়ে জলপাইগুড়ির এক বন্যপ্রাণী প্রেমী সংগঠনের সদস্য শ্যামাপ্রসাদ পাণ্ডে জানান , "বন্যপ্রাণী ও মানুষের সংঘাত এবার বাড়বে বলে আমরা মনে করছি । কারণ যারা বাইরে কাজে গিয়েছিল , তারা ফিরে এসেছে । তারা তাদের যা জমি ছিল সেই জমিতে ধান লাগিয়েছে । হাতির এলাকাতেও জমিগুলিতে ধান লাগানো হয়েছে । ফলে এবার মানুষ ও হাতির সংঘাত বাড়বে বলে আমরা মনে করছি । এই সংঘাত এড়ানোর জন্য আমরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করছি । গ্রামের মানুষ যাতে ধান রক্ষা করতে পারে তার জন্য তাদের যাতে পুরোপুরি সাহায্য করা যায় তার জন্য বনবিভাগের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন ব্যবস্থা করছি । এছাড়া , আমরা লক্ষ্য করছি ইলেকট্রিকের তার অনেক নিচ দিক দিয়ে যাওয়ার ফলে হাতির সংস্পর্শে আসছে । এইবিষয়টি আমরা বিদ্যুৎ বণ্টন কম্পানিকে দেখার জন্য বলব ।"

জলপাইগুড়ি গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের DFO নিশা গোস্বামী বলেন , "আমরা মানুষ ও হাতির সংঘাত রুখতে বাল্ক মেসেজের ব্যবস্থা করেছি । কোথাও হাতির হানার আশঙ্কা থাকলে আমরা আগের থেকে তাদের মেসেজ পাঠিয়ে সচেতন করছি । প্রায়শই জঙ্গল থেকে লোকালয়ে বেরিয়ে আসে হাতি । কখনও জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার মানুষের চাষাবাদের ক্ষতি করে । কখনও বা জীবনহানির ও ঘটনা ঘটে । এলার্মিং সিস্টেমের ফলে হাতি গ্রামের আশপাশে এলেই আমাদের সংকেত দেবে । ফলে আমাদের বনকর্মীরাও বুঝতে পারবে যে হাতি ঢুকছে । এবং গ্রামবাসীরাও সজাগ হয়ে যাবে তাতে করে জীবনহানির ঘটনা ঘটবে না। আমরা আশাবাদী এই ডিভাইজ়ের মাধ্যমে আমরা ভালো ফল পাব । আমরা কখনওই চাই না মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সংঘাত হোক ।"

এছাড়া ট্রেনে কাটা পড়ে হাতির মৃত্যু ঠেকাতে জলপাইগুড়ির চালসা ও আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনিতে মৌ মাছির শব্দের সাউন্ড স্টেশনে লাগানো হয়েছে । হাতি রেললাইনের পাশে এলেই মাইকে মৌমাছির শব্দের আওয়াজ চালু করে দেওয়া হচ্ছে । যার ফলে হাতি চলে যাচ্ছে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.