জলপাইগুড়ি, 3 ডিসেম্বর : উত্তরবঙ্গে কেএলও (কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন) জঙ্গিরা কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল । কেএলওর আন্দোলনের ফলে কেউ প্রাণ হারিয়েছিলেন । কেউ বা কেএলওর গুলিতে আহত হয়েছিলেন । উত্তরবঙ্গের ৪৭ টি পরিবার কোনও না কোনও ভাবে কেএলও এর আক্রমণের শিকার হয়েছে ৷ বর্তমানে রাজ্য সরকার প্রাক্তন কেএলও জঙ্গিদের চাকরি দিচ্ছে । এদিকে জঙ্গিদের গুলিতে যারা নিহত বা আহত হয়েছেন তাঁরা আজও বঞ্চিত ৷ সেই সকল পরিবারের সদস্যরা চাকরির দাবিতে এবার আন্দোলনে নামার হুমকি দিলেন। পাশাপাশি যারা রাজ্য সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজে জমি দিয়েছিলেন, সেই সব ভূমি হারারা জমি দিয়ে আজ সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন । প্রতিশ্রুতি মত সরকার পরিবারের একজনকে চাকরি দেবে বললেও, বাস্তবে কেউ চাকরি পাননি। এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বৃহত্তর আন্দোলনে নেমেছে জলপাইগুড়ি জেলার ল্যান্ড লুজ়ার কমিটির সেইসব সদস্য়রা । ইতিমধ্যে চাকরির দাবিতে জেলাশাসক, জেলা পরিষদে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তাঁরা ।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের প্রাক্তন কেএলও জঙ্গিদের হোমগার্ডে চাকরি দেওয়া শুরু করেছে রাজ্য় সরকার । 2001 সাল থেকে কেএলও-র বাড়বাড়ন্ত । কেএলওর গুলিতে বেশ কয়েক নিহতদের পরিবারের সদস্যদের। গোটা উত্তরবঙ্গে কেএলও জঙ্গিদের গুলিতে বেশ কয়েকজন নিহত হন এবং আহতও হয়েছিলেন অনেকেই । এমন পরিবারের সংখ্যা প্রায় 47। বিগত সরকার 10 টি পরিবারের সাহায্য করলেও, বাকি পরিবারগুলি অথৈজলে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। পরিবারের সদস্যদের বিগত সরকারের পক্ষ থেকে চাকরি দেওয়া হলেও প্রায় 25টি নিহত পরিবারের সদস্যদের চাকরি আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি ৷ এবার তাঁরা চাকরির দাবিতে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ।
বিগত বামফ্রন্ট সরকার নির্যাতিতদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ৷ এমনকি তাদের স্বনির্ভর করার জন্য সরকারি পর্যায়ে ট্রেনিংও দিয়েছিল । কিন্তু তারপরে কোনও সহযোগিতা পাননি তাঁরা । অভিযোগ নিহত পরিবারের মধ্যে যারা প্রভাবশালী, সেই রকম কিছু পরিবারকে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে ৷ বাকি প্রায় 25টি পরিবারকে বঞ্চিত করা হয়েছে ৷ তাই তাঁদের দাবি, এবার সরকার তাদেরও চাকরির ব্যবস্থা করুক ।
অন্যদিকে, ভূমি হারাদের চাকরির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে জলপাইগুড়ি জেলার ল্যান্ড লুজ়াররা । কোনও একসময় সরকারি প্রকল্পের জন্য় জমি দিয়েছিলেন তাঁরা ৷ সে সময় তাঁদের পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ৷ তবে, আজও তাঁদের বেশিরভাগই কোনও চাকরি পাননি ৷ ইতিমধ্যেই সরকারি প্রকল্পে জমি দিয়ে চাকরি না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন সুরাহা হয়নি। গতবছর অগাস্ট মাসে আমরণ অনশনেও বসেছিল ল্যান্ড লুজ়াররা । সেই সময় তাঁদের বুঝিয়ে অনশন তুলিয়েছিল শাসক দলের প্রতিনিধিরা ৷ কিন্তু এক বছর পরেও চাকরির দাবি না মেটায় ফের আন্দোলনে নেমেছে জলপাইগুড়ি ল্যান্ডলুজার কমিটি । এদিন আন্দোলনকারী ল্যান্ড লুজার নজরুল রহমান অভিযোগ করেন, তাঁরা জেলাশাসক, জেলা সভাধিপতি, বিধায়ক, জেলা তৃণমূল সভাপতি থেকে সর্বত্র তাঁদের দাবি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি । বাধ্য হয়েই তাঁরা ফের আন্দোলনে নেমেছেন ৷
আরও পড়ুন : পান্তা ভাত, মুড়ি খাওয়া ছেলেটা আদর্শের জন্য লড়ছে এবং লড়বে : শুভেন্দু
একইভাবে আন্দোলনে নেমেছেন, কলেজের অস্থায়ী শিক্ষককর্মীরা ৷ চাকরিতে 60 বছর বয়স পর্যন্ত কর্মনিশ্চয়তা সহ একাধিক দাবিতে টানা 51 দিন ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ক্যাজুয়াল এমপ্লয়িজ সমিতি জলপাইগুড়ি শাখার সদস্য়রা ৷ তাঁদের দাবি, কলেজের কর্মরত অস্থায়ী শিক্ষাকর্মীদের জন্য ৬০ বছরের কর্মনিশ্চয়তা, কর্মক্ষেত্রে সরকারি স্বীকৃতি , সরকারি নির্দেশনামা ৩৯৯৮এফ (পি২) লাগু করা হোক ৷ এ নিয়ে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের কথাও বলেন আন্দোলনকারীরা ৷