চুঁচুড়া, 13 জুলাই : আজ সকাল থেকে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল চুঁচুড়া । গতরাতে পুলিশ ও দুষ্কৃতীদের সংঘর্ষ হয় । এর জেরে আহত হন রবীন্দ্রনগরের বেশ কিছু সাধারণ মানুষ ও পুলিশ । এরপর আজ সকালে খাদিনামোড় থেকে হুগলি মোড় পর্যন্ত GT রোডের বিস্তীর্ণ এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয়রা । খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে যায় চুঁচুড়া থানার পুলিশ ও RAF । তারা রবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ।
ঘটনার সূত্রপাত গতকাল সন্ধ্যায় । গতকাল সমাজবিরোধী টোটন বিশ্বাসের ডান হাত নেপার জন্মদিন ছিল । জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রতিবছরই রবীন্দ্রনগরে বসে মদের আসর । আসরে যোগ দেয় রবীন্দ্রনগর সহ রানাঘাট, রিষড়া, জগদ্দল, কাঁচারাপাড়া সহ একাধিক জায়গার সমাজবিরোধীদের । পুলিশের কাছে খবর ছিল । পাকড়াওয়ের প্রস্তুতিও জোরকদমে শুরু করে চন্দননগর পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর । গতরাত 11 টা নাগাদ ASP 1 যশপ্রীত সিংয়ের নেতৃত্বে চুঁচুড়া থানার IC অরিজিৎ দাসগুপ্তকে সঙ্গে নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশ ও ব়্যাফ । পুলিশ রবীন্দ্রনগরে ঢোকা মাত্র তাদের উপর হামলা চালাতে শুরু করে দুষ্কৃতীরা । চলে ইটবৃষ্টি ও গুলি । দুষ্কৃতীদের ছোড়া ইটের আঘাতে জখম হন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী । কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, "দুষ্কৃতীদের গুলির হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন যশপ্রীত সিং ও অরিজিৎ দাসগুপ্ত । অন্ধকার থাকায় পুলিশকর্মীরা বুঝে উঠতে পারছিলেন না কোথা থেকে গুলি ও ইট ছোড়া হচ্ছে । বাধ্য হয়ে আমরা মক গ্রেনেড, রবার বুলেট ফায়ার করি ।" এরপরেই ছত্রভঙ্গ হয় দুষ্কৃতীরা । এলাকার বিভিন্ন গলি দিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা ।
আজ সকালে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে রবীন্দ্রনগর এলাকা । বন্দুক উঁচিয়ে কাতারে কাতরে দুষ্কৃতী বেরিয়ে আসে রাস্তায় । তাদের সঙ্গে যোগ দেয় রবীন্দ্রনগর সহ চুঁচুড়া শহরের বেশ কিছু সাধারণ মানুষ । শুরু হয় GT রোড অবরোধ । তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করতে এসে তাঁদের উপর হামলা চালিয়েছে । এর জেরে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ।
এর প্রতিবাদে আজ সকালে বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল ও দোকানপাট । স্তব্ধ হয়ে যায় জেলা সদর চুঁচুড়া শহর । অভিযোগ, চুঁচুড়া ও হুগলি স্টেশনের টিকিট কাউন্টার ভয় দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা । বন্ধ হয়ে যায় স্টেশন সংলগ্ন গ্যারেজগুলি । অঘোষিত বন্ধের চেহারা নেয় চুঁচুড়া শহর । এর জেরে বিপাকে পড়েন ট্রেন ও বাসের নিত্যযাত্রীরা ।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থানে যান পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর । পুলিশ এলাকাটিকে দু'দিক থেকে ঘিরে ফেলে । ফের পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে অবরোধকারীরা । পরিস্থিতি সামাল দিতে একাধিক কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ । একই সঙ্গে চলতে থাকে মক গ্রেনেড ও রবার বুলেট ফায়ারিং ।
ঘটনায় মোট 12 জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । পরে কমিশনারের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী যায় রবীন্দ্রনগরে । তারা টোটন বিশ্বাসের বাড়ি ও আস্তানা সহ গোটা এলাকা রেইকি করে । কমিশনার বলেন, "গোটা এলাকা আমি ঘুরে দেখেছি । এলাকায় নজরদারি চালানোর জন্য প্রতিটি পোস্টে CCTV লাগানো রয়েছে । এই ক্যামেরাগুলির মাধ্যমে এলাকার উপর নজর চালাত টোটন । ওই এলাকায় সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াত নিষিদ্ধ ছিল । সাধারণ মানুষ ওই এলাকায় ঢুকে পড়লে তাকে আটকে তল্লাশি চালাত দুষ্কৃতীরা । যা আমাদের রাজ্যে কাম্য নয় ।" কমিশনার সাফ জানান, দ্রুত এই দুষ্কৃতীরাজ সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হবে । লাগাতার চলবে এই অভিযান । আজ সকালে টোটন বিশ্বাসের বাড়ি ও বেশ কয়েকটি আস্তানা তল্লাশি করে বেশ কিছু নথিপত্র, ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে, টোটনের খোঁজ মেলেনি ।