মুম্বই, 19 নভেম্বর: শুধু মুম্বইকর নন, তাঁরা সোবো। দেশের অন্যতম অভিজাত এলাকা দক্ষিণ মুম্বই বা সাউথ মুম্বইয়ের বাসিন্দারা নিজেদের সোবো বলতেই পছন্দ করেন । আভিজাত্যের এই প্রদর্শন শুধু নামে সীমাবদ্ধ ভাবলে ভুল হবে । এলাকার সর্বত্রই সেই ছাপ স্পষ্ট। এবার মহারাষ্ট্র নির্বাচনে দক্ষিণ মুম্বই শিরোনামে এসেছে ওরলি বিধানসভার লড়াই ঘিরে। বিরোধী শিবিরের আদিত্য ঠাকরের সঙ্গে শাসক জোটের মিলিন্দ দেওয়ার লড়াই ঘিরে চর্চার অন্ত নেই ।
গোড়ার কথা:
আদিত্য আর মিলিন্দ দুজনেই রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য । মিলিন্দের বাবা মুরলী দেওয়া কংগ্রেসের বড় নেতা ছিলেন । একাধিকবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বের পাশপাশি মুম্বই পুরনিগমের মেয়রও ছিলেন। ববার দেখানো পথে চলে মিলিন্দও 2004 সালে 28 বছর বয়সে লোকসভার সদস্য হন এই দক্ষিণ মুম্বই কেন্দ্র থেকেই। পরবর্তী সময়ে ইউপিএ-র দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় জাহাজ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন । 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে শিবির বদলে শিন্ডে সেনায় নাম লেখান । তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে এনডিএ।
আদিত্য সম্পর্কে বালাসাহেব ঠাকরের নাতি। তবে ঠাকরে পরিবারের তিনিই প্রথম সদস্য যিনি নির্বাচনে লড়েছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের অবিভক্ত সেনা-এনসিপি এবং কংগ্রেসের সরকারে মন্ত্রীও ছিলেন । বিরোধী আসনে বসেও বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে বারবার সরব হতে দেখা গিয়েছে।
সব রাস্তা ওরলির দিকে:
প্রার্থী পরিচয় থেকেই স্পষ্ট কেন ওরলির লড়াই গোটা দেশের কাছে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। ঠাকরেদের কাছে পরিবারিক সম্মান রক্ষার লড়াই। আবার বিজেপি শিবিরের কাছে ঠাকরেদের নাস্তানাবুদ করার সুয়োগ দুই শিবিরের সব বড় নেতাই প্রচার সেরেছেন এখানে।
মুম্বই শহরে জমি-বাড়ির দাম গোটা দেশের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। ওরলি বা তার আশপাশের এলাকায় তা আরও খানিকটা বেশি। অনলাইনে বিভিন্ন রিয়েলএস্টেট সংস্থা্র থেকে পাওয়া সাম্প্রতিক হিসেব বলছে ওরলির যে কোনও জায়গায় এক একর জমির দাম কমবেশি ৩৩ কোটি টাকা । অন্য একটি হিসাব থেকে জানা গিয়েছে ওরলি এবং তার আশপাশ এলাকায় একটি এক কামরার ফ্ল্যাটের দামও 8 কোটি টাকার কম নয়।
বাহিরাগত না উন্নয়ন:
প্রচারের শুরু থেকে শেষ একে অপরকে তীব্র আক্রমণ করেছেন দুই প্রার্থী। আদিত্য বলেছেন, মিলিন্দ নিজের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হলে রাজ্যসভার আসন ছেড়ে প্রার্থী হতে পারতেন । পাল্টা মিলিন্দের দাবি, আদিত্যর বাবা উদ্ধব ঠাকরেও জনতার ভোটে না জিতে বিধান পরিষদের সদস্য হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।
মিলিন্দ দক্ষিণ মুম্বইয়ের বাসিন্দা । ঘটনাচক্রে আদিত্যর আগে যাঁরা যাঁরা এই বিধানসভা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরা সকলেই স্থানীয় বাসিন্দ। ব্যতিক্রম শুধুই আদিত্য। এবারের প্রচারে এই প্রশ্নে আদিত্যকে বহিরাগত আখ্যা দিয়ে প্রচার শুরু করেছে শাসক শিবির। অন্যদিকে, তাঁদের সময় মুম্বইয়ের যে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে সেটাকেই প্রচারের মূল অস্ত্র করেছেন আদিত্য। পাশাপাশি এনডিএ সরকার মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রকল্প গুজরাটে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলেও প্রচার করছে বিরোধীরা । শিল্পপতি থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ওরলি বিধানসভায় তা অবশ্যই বড় ইস্যু।
কী বলছে ইতিহাস?
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে 1962 সাল থেকে এই ওরলি কেন্দ্রে বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে । একটা দীর্ঘ সময় কংগ্রেসের দখলে ছিল এই কেন্দ্র । পরবর্তী সময়ে শিবসেনার প্রায় একছত্র দাপট চোখে পড়ে। পরের দিকে শরদ পাওয়ারের দল এনসিপিও এখানে নিজের প্রভাব বাড়িয়েছিল। বিজেপির দাপট তেমন দেখা যায়নি এখানে। 2014 সালের নির্বাচনে এনসিপির হাত থেকে আসলটি ছিনিয়ে নেয় শিবসেনা। তার পরেরবার প্রার্থী বদলায় অবিভক্ত সেনা-শিবির। জেতেন আদিত্য।
ওরলি বিধানসভা কেন্দ্রটি মুম্বই দক্ষিণ লোকসভার মধ্যে পড়ে। গত তিনটি লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জিতে লোকসভায় গিয়েছেন অরবিন্দ সাওয়ান্ত । শিবসেনার বিভাজনের পর উদ্ধব শিবিরে রয়েছেন অরবিন্দ। অনেকেই মনে করেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে মিলিন্দ দেওয়ার দলবদলের এটাও একটা কারণ । তিনি ধরে নিয়েছিলেন কংগ্রেসের সঙ্গে উদ্ধবদের আসন ভাগাভাগি হলেও অরবিন্দ আছেন বলে তাঁর প্রার্থী হওয়া হবে না। যদিও শিন্ডে শিবিরে গিয়েও তাঁর সে আশা পূরণ হয়নি । অরবিন্দ সাওয়ান্তের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন শিন্ডে-শিবসেনার যামিনী যাদব।
এই অবস্থায় ভোটের নিরিখে গত লোকসভা নির্বাচনের হিসেবে এই বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে আছেন আদিত্যই। তবে দুই দশক সংসদীয় রাজনীতিতে কাটিয়ে দেওয়া মিলিন্দও যে ভোটের রং বদলে দিতে পারেন, সে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ।