শিলিগুড়ি, 16 মে: মাদক-সহ কারবারীকে হাতেনাতে পাকরাও করা। কিন্তু তাকে গ্রেফতার না-দেখিয়ে চারদিন থানার লকআপে রাখা। তারপর কারবারীকে আবার ছেড়ে দেওয়া। পরে বাজেয়াপ্ত হওয়া মাদক আবার কারবারীর কাছেই বিক্রি করার চেষ্টা। কিন্তু এতসব ফন্দি এঁটেও শেষমেশ কোনও লাভ হল না। অবশেষে সাসপেন্ড হতে হল দুই পুলিশ কর্তাকে ৷ এটি কোনও সিনেমার প্লট নয়। এটা বাস্তবের একটি ঘটনা । এই ঘটনা ঘটেছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের অধীন নিউ জলপাইগুড়ি থানার।
পুলিশের সঙ্গে সাধারণ আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের সম্পর্ক অম্লমধুর। সুযোগ পেলে পুলিশকে আঁড় চোখে দেখা কিংবা কটুক্তি করার সুযোগ ছাড়ে না অনেকেই। কিন্তু সব কিছুর পরেও যে পুলিশ আধিকারিকদেরই বিরুদ্ধে এরকমও অভিযোগ উঠতে পারে তা হয়তো অনেকেই কল্পনা করতে পারেনি। তবে ওই দুই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই মাথা হেঁট হয়েছে পুরো পুলিশমহলের।
নিউ জলপাইগুড়ি থানার সাদা পোশাকের দুই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ওই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আর অভিযোগ এবং তদন্ত দু'টোই করেছেন কমিশনারেটের শীর্ষ আধিকারিকরা। তদন্তের পর ওই দুই অফিসারকে সাসপেন্ড করে মাল্লাগুড়ির পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর ৷ তবে বিষয় নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন কমিশনারেটের আধিকারিকরা। কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, এনজেপি থানার সাদা পোশাকের পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর সজল দাস ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর নিউটন বিশ্বাসকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
কয়েকদিন আগে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এক মাদক কারবারীকে অভিযান চালিয়ে ফুলবাড়ি এলাকা থেকে পাকরাও করে তারা। কারবারীকে ধরে নিয়ে এসে চারদিন টানা থানার লকআপে রাখা হয়। কিন্তু যেখানে নিয়ম কাউকে আটক বা গ্রেফতার করে নিয়ে আসলে 24 ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে তুলতে হবে। সেই জায়গায় ওই কারবারীকে টানা চারদিন লকআপে রাখার পর আশ্চর্যজনকভাবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দিয়েই খান্ত হননি ওই দুই অফিসার। পরে বাজেয়াপ্ত মাদক সবার চোখের আড়ালে ওই কারবারীকে বিক্রি করতে যান তারা ৷
আরও পড়ুন:পাচারের আগে 18 লক্ষ টাকার মাদক ট্যাবলেট ইয়াবা-সহ গ্রেফতার চার
কিন্তু ততক্ষণে বেশ দেড়ি হয়ে গিয়েছে। পুরো ঘটনার খবর চলে যায় আধিকারিকদের কাছে। বিষয়টি জানা মাত্রই অন্তর্বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার ওই তদন্তের ভার দেন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) জয় টুডুকে। তদন্তে যাচাই করে দেখা হয় থানার সিসি ক্যামেরাও। সমস্ত দিক দিয়ে তদন্ত করার পর প্রথমে ক্লোজ করা হয় এসআই সজল দাস ও এএসআই নিউটন বিশ্বাসকে ৷ সোমবার দুপুরে ওই দুই অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয় ও মাল্লাগুড়ি পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়। সেখানেই আগামীতে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই বিষয়ে কমিশনার অখিলেশ চতুর্বেদী ও ডিসিপি জয় টুডুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।