ক্যানিং, 16 জুলাই: রবিবার বিশ্ব সর্প দিবস । এইদিনেই কুসংস্কারের জেরে সাপের কামড়ে মৃত্যু হল এক শিশুর ৷ রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ক্যানিং থানার নিকারীঘাটা পঞ্চায়েতের পাঙ্গাশখালি গ্রামে । জানা গিয়েছে, কালাচ সাপের ছোবল মারে মা ও দুই মেয়েকে । কিন্তু তাদের সঠিক সময়ে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ওঝা ডেকে ঝাড়ফুঁক করা হয় ৷ তার জেরেই মৃত্যু হয় এক মেয়ের । মৃত শিশুটির নাম হালিমা সরদার(6) । ঘটনা প্রসঙ্গে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক সমরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, "সাপের কামড়ে মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক । তবে ওঝা-গুণীন ডেকে ঝাড়ফুঁক করার জন্য দীর্ঘ সময় নষ্ট হয়ে যায় ৷ এরপর চেষ্টা করা সত্ত্বেও ওই শিশুটিকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি ।"
জানা গিয়েছে, পাঙ্গাশখালি গ্রামের বাসিন্দা পরিযায়ী শ্রমিক রাজ্জাক সরদার । তিনি আন্দামানে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। বাড়িতে থাকতেন স্ত্রী ছলেমা সরদার ও দুই মেয়ে রেশমা এবং হালিমা সরদার । রেশমা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে । অপরদিকে হালিমা প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত । অন্যান্য দিনের মতো শনিবার রাতে খাওয়া-দাওয়া করে মা ও মেয়েরা একটি বিছানায় মশারী টাঙিয়ে ঘুমিয়েছিলেন । গভীর রাতে বিছানার মধ্যে মা ও দুই মেয়েকে কালাচ সাপে কামড় দেয় ।
রাত দুটো নাগাদ ব্যাপারটি বুঝতে পারেন ছলেমা সরদার । তিনি বিছানার মধ্যে সাপটি দেখতে পেয়ে মারার জন্য উদ্যত হন ৷ তবে সাপটি পালিয়ে যায় । গভীর রাতেই এই ঘটনার কথা প্রতিবেশীদেরকে জানান তিনি । পরে স্থানীয় এক ওঝা-গুণীনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের । সেখানে রবিবার সকাল ছটা পর্যন্ত চলে ঝাড়ফুঁক । পরিস্থিতি খারাপ হতে হাল ছেড়ে দেয় ওই ওঝা । এরপর প্রতিবেশীরা তড়িঘড়ি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসে চিকিৎসার জন্য । মা ও মেয়েদেরকে ক্যানিং হাসপাতালে ভরতি করা হয় । ছোট মেয়ে হালিমার অবস্থা গুরুতর ছিল ৷ তাকে তড়িঘড়ি হাসপাতালের তরফে 25টি সাপে কামড়ানো প্রতিষেধক দেওয়া হয় । তবে ওঝার কাছে অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শেষ রক্ষা হয়নি । মৃত্যু হয় ছোট্ট হালিমার ।
আরও পড়ুন: ড্রেসিং টেবিলের নীচে 24টি কোবরা, ঘুম উড়েছে নেটপাড়ার; দেখুন ভিডিয়ো
অন্যদিকে ছলেমা সরদার একটু সুস্থ বোধ করায় তিনি বাড়ি চলে যান । ঘণ্টা দেড়েক পর আবারও অসৃস্থ হয়ে পড়েন তিনি ৷ পরে ফের চিকিৎসার জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে । পাশাপাশি রেশমার অবস্থা সংকটজনক হলে তাকে প্রথমে বারুইপুর এবং পরে আরজি কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে । প্রতিবেশী ইয়াকুব সরদার বলেন, "রাতে তিনজনে ঘুমোচ্ছিল সেসময় বিছানায় সাপে কামড় দেয় তাদেরকে । জানতে পারার পর স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ছোট মেয়ে হালিমার মৃত্যু হয় ।"