জয়নগর, 24 জুন: অক্ষরজ্ঞান ঠিকমতো হয়নি ৷ তাতে কী? মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই অক্ষর স্বপ্ন দেখছে ধর্মীয় ভেদাভেদহীন সমাজের। নেপথ্যে অবশ্যই তাঁর বাবা এবং মা ৷ পদবি ছাড়াই তাঁদের সন্তানকে বড় করে তোলার স্বপ্ন দেখছেন বাবা মুদ্দাসর হোসেন এবং মা হাবিবা মল্লিক। মুদ্দাসর পেশায় একজন অভিনেতা ৷ মা'ও নাট্যকর্মী ৷ দু'জনেই চান ধর্মীয় পরিচয় ছাড়া সন্তানকে বড় করে তুলতে। জয়নগর থানা এলাকার দক্ষিণ বারাসাতের বাসিন্দা এই দম্পতি। অক্ষরের জন্মের শংসাপত্রে কোনও পদবি না-রাখার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে পদবি ছাড়াই অক্ষরের জন্মের শংসাপত্র প্রদান করেছে পঞ্চায়েত।
পরিকল্পনা ছিল আগে থেকেই ৷ ছেলে হোক বা মেয়ে, সন্তানকে ধর্মের পরিচয় থেকে বাইরে রাখার পরিকল্পনা করেন তারা। তাই খাতায়-কলমে পদবি ছাড়াই বেড়ে উঠছে অক্ষর। এ বিষয়ে অক্ষরের বাবা মুদ্দাসর বলেন, "পদবি তো ধর্মের বাহক আর তা দেখেই ভাগ করা হয় আমাদের বিভিন্ন জাত। আমি এবং আমার স্ত্রী চাই আমাদের সন্তান এই ভেদাভেদের মধ্যে বেড়ে না-ওঠে ৷ আমাদের পরিবার একান্নবর্তী। পরিবারের মধ্যে ধর্মচর্চার কোনও ঠাঁই নেই। পাশাপাশি আমাদের বাড়িতে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয় না ৷"
তিনি আরও বলেন, "মানবতাইকে একমাত্র ধর্ম বলে মনে করি। ছেলেকে সেভাবেই বড় করে তোলার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমাদের পরিবারে বরাবরই মানবতার চর্চা হয় ৷ কোথাও লিখিতভাবে ধর্মের কথা উল্লেখ করতে হলে মানবতার লেখায় পছন্দ করেন তাঁরা। এভাবেই ছেলেকে বড় করে তুলব।" পরিবারের মুক্ত পরিবেশও তাঁদের এই ইচ্ছেয় রসদ জুগিয়েছে। বাবা-মা তার জীবনের শুরুটা কোনও গণ্ডিতে বাঁধতে চাননি। এখনও বোঝার বয়স হয়নি ওর। তবুও খেলনা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আধো-স্বরে অক্ষর গেয়ে ওঠে 'আমরা করব জয় নিশ্চয়'।
আরও পড়ুন: সন্তান ধারণের পরিকল্পনার সময় গুরুত্ব দিতে হবে থাইরয়েডকে, পরামর্শ চিকিৎসকের
অভিনেত্রী দম্পতিদের এই অভিনব উদ্যোগ অবাক করেছে এলাকার বাসিন্দারা। চেনা বেড়াজাল ভেঙে ইচ্ছে স্বপ্ন ওড়ানোর জন্য যে পদক্ষেপ দম্পতি নিয়েছে সেটা অনেক বড় ভাবনা। শুধুমাত্র জাতি ধর্ম এই ভেদাভেদ ভুলে মানুষ হয়ে যদি মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় তাহলে এই বিশ্ব অনেক হিংসার হাত থেকে মুক্তি পাবে। কথায় রয়েছে, 'সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে কেউ নাই ৷' সেই প্রবাদবাণী যেন অক্ষরের জীবনে মিলে যাচ্ছে।