কলকাতা, 10 মে : আলিপুর সংশোধনাগারের সমস্ত কাজের উপর আগামী 14 জুন পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট । ওই দিন রাজ্য সরকারকে তার বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে । প্রধান বিচারপতি T B N রাধাকৃষ্ণণ ও অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে ।
শতাব্দী প্রাচীন এই সংশোধনাগারের বন্দীদের ইতিমধ্যে বারুইপুরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে । রাজ্য সরকারের বক্তব্য আলিপুরে যেখানে সংশোধনাগারটি রয়েছে সেখানে উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে । কিন্তু উন্নয়নমূলক কাজ বলতে রাজ্য সরকার কী বলতে চেয়েছে সেটা স্পষ্ট নয় । এই মর্মে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছিল । মামলাকারীদের দাবি উন্নয়নমূলক কাজের নামে আসলে ওখানে রিয়েল এস্টেট গড়ে তোলা হবে । সেই মামলার ভিত্তিতেই আজ হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে ।
আজ মামলাটির শুনানিতে মামলাকারীদের তরফে নিলীনাদেব লাল বলেন, "বন্দীদের সরানো হয়েছে তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই । কিন্তু আলিপুর সংশোধনগার, প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের মতো বিল্ডিংগুলো গ্রেড -1 হেরিটেজের তকমাপ্রাপ্ত । আলিপুর জেলের ভিতরে যে পরিমাণ ফাঁকা জায়গা রয়েছে তা এই শহরের মূল্যবান সম্পদ।" অন্যদিকে রাজ্যের তরফে অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনেরাল অভ্রতোষ মজুমদার বলেন, "এই ধরনের জনস্বার্থ মামলা এর আগেও দায়ের হয়েছিল । কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সেই মামলা খারিজ করে দিয়েছিলেন।" কিন্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানায় অন্য মামলায় কী হয়েছিল আমরা জানতে চাইছি না । আপাতত আগামী 14 জুন পর্যন্ত আলিপুর সংশোধনাগারের সমস্ত কাজ স্থগিত থাকবে । 14 জুন এই ব্যাপারে রাজ্যকে তাদের বক্তব্য জানাতে হবে ।
আদালত কক্ষের বাইরে নিলীনাদেব লাল বলেন, "আলিপুর জেল, প্রেসিডেন্সি জেল এইগুলো গ্রেড -1 হেরিটেজ । এইগুলো জনগণের সম্পত্তি । বন্দীদের সরকার সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেটা ঠিক আছে । কিন্তু বিল্ডিং ভেঙে ফেলে নতুন করা বা কিছুটা রেখে নিলামে দেওয়া রিয়েল এস্টেট ডেভেলপ করার জন্য এটা উচিত নয় । আমাদের শহরে এমনিতেই ফাঁকা জায়গার অভাব রয়েছে । সেই দিক থেকে এই হেরিটেজ থাকা মানে প্রাকৃতিক পরিবেশও ভালো থাকবে । আমাদের ঐতিহ্যও রক্ষিত হবে । এই জায়গাগুলো নিয়ে যা কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তাতে স্বচ্ছতা থাকা দরকার । অথচ আলিপুর জেলের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ কিছুই জানে না । সাধারণ মানুষকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এটা করা হচ্ছে । এই মুহূর্তে আলিপুর জেলের ভিতরের পরিস্থিতি কী আমরা কিছুই জানি না । কতটা ভাঙা হয়েছে সে ব্যাপারেও জানি না । আমরা জানার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্ত পারিনি । সরকার কিছুই জানাতে চাইছে না । আমরা জানার জন্য RTI করেছিলাম গত বছর অগাস্ট মাসে । ফলপ্রসূ উত্তর পাইনি । তাই বাধ্য হয়ে চলতি বছরের এপ্রিলে মামলা ফাইল করি হাইকোর্টে ।"
এর আগে আলিপুর জেলের 20 একর জমি উন্নয়নমূলক কাজে লাগানো হবে বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার তার বিরুদ্ধেও একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল । যেখানে একই দাবি করা হয়েছিল । পাশাপাশি সেখানে বলা হয়েছিল যে আলিপুর জেলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস । এই জেলেই একদা বন্দী ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষচন্দ্র বসু, অরবিন্দ ঘোষ, জওহরলাল নেহেরু, বিধানচন্দ্র রায় প্রমুখ । আন্দামানের সেলুলার জেলের মতো আলিপুর জেলও সংরক্ষিত হওয়া উচিত । এখানেও প্রদর্শনশালা হওয়া উচিত । কিন্তু সেই মামলাটি তখন খারিজ করে দিয়েছিল হাইকোর্ট ।