মালদা, 3 সেপ্টেম্বর : তৃণমূলের নেতাকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল শাসকদলেরই এক জনপ্রতিনিধির পরিবারের সদস্যকে । এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে চাঁচলের চন্দ্রপাড়া এলাকায় । অভিযোগ, গতকাল রাতে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে ওই নেতাকে । কোপানো হয় ধৃতের স্ত্রীকেও । তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক ৷ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।
নিহত তৃণমূল নেতার নাম সেতাবুর রহমান । বয়স 36 বছর । তিনি চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের অঞ্চল সহ সভাপতি । বাড়ি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই খানপুর গ্রামে । এলাকায় তিনি ভিকু নামেই পরিচিত । পুলিশ সূত্রে খবর, গতকাল রাতে ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি । কিছুক্ষণ পরেই তাঁর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে তাঁর উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বেশ কয়েকজন । হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন খানপুর গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য শেরবানু বিবির স্বামী জামালুদ্দিন ও দেওর কামালুদ্দিন । একই সঙ্গে কোপানো হয় কামালুদ্দিনের স্ত্রী, 29 বছরের নাইমা বিবিকেও । রক্তাক্ত অবস্থায় দু’জনকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা । দু’জনকে পড়ে থাকতে দেখে গ্রামবাসীরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেতাবুর ও নাইমাকে প্রথমে মালতিপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, সেখান থেকে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, সব শেষে মালদা মেডিক্যালে নিয়ে যায় । কিন্তু আজ ভোরে মারা যান সেতাবুর । অন্যদিকে, নাইমার অবস্থাও আশঙ্কাজনক ।
সেতাবুরের স্ত্রী আলিয়ারা খাতুন বলেন, “রাতে ফোন করে আমার স্বামীকে ওরা ডেকেছিল। রাত ন’টা নাগাদ ফোন এসেছিল । রাতের খাবার খেয়ে স্বামী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় । আধঘণ্টার মধ্যেই খবর পাই, ওকে কোপানো হয়েছে । নিশ্চয়ই এই হামলার পিছনে কোনও কারণ ছিল । গ্রামের লোকই ওকে খুন করেছে । যারা ওকে খুন করেছে তাদের শাস্তি দাবি করছি আমি ।”
সেতাবুরের দাদা মহম্মদ মুসলিম বলেন, “রাত সাড়ে 12টা নাগাদ বাড়ি ফিরে জানতে পারি, কামালুদ্দিন, জামালুদ্দিনরা ভাইকে পরিকল্পনা করে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়েছে । রক্তাক্ত অবস্থায় ভাইকে ফেলে রেখে ওরা পালিয়ে যায় । ওদের মধ্যে রাজনীতি সংক্রান্ত বিবাদ ছিল । জামালের স্ত্রী পঞ্চায়েত সদস্য । কিন্তু এভাবে হামলা কেন হল, তা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না । পরে মালদা মেডিক্যালে সেতাবুর মারা যায় । আমি এই ঘটনায় যথাযথ পুলিশি পদক্ষেপ দাবি করছি ।”
আরও পড়ুন, Kaliachak Murder Case : কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডে আদালতে 273 পাতার চার্জশিট পেশ পুলিশের
খানপুর গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, “গতকাল রাত সাড়ে 11টা নাগাদ আমরা বিষয়টি জানতে পারি । মালদা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সেতাবুর মারা যায় । কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে আমরা ধোঁয়াশায় রয়েছি । কিন্তু ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতেই । সেতাবুর চন্দ্রপাড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সহ সভাপতি । দুই পক্ষের মধ্যে ভালই সম্পর্ক ছিল বলে জানতাম । কেন এমন হয়, জানি না ।”
এই ঘটনায় চাঁচল থানার পুলিশ ইতিমধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত কামালুদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে । ঘটনার পুলিশি তদন্তও শুরু হয়েছে । প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এই ঘটনায় শুধু রাজনীতি নয়, পরকীয়া সংক্রান্ত বিষয়ও জড়িয়ে রয়েছে । সেই কারণেই গতকাল সেতাবুরের সঙ্গে নাইমা বিবিকেও হাঁসুয়া দিয়ে কোপায় তাঁর স্বামী কামালুদ্দিন, ভাসুর জামালুদ্দিন সহ অন্যরা । সেতাবুরের স্ত্রী আলিয়ারা খাতুনের গলাতেও যেন তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে । যদিও এনিয়ে এখনও কেউ মুখ খোলেনি । চাঁচল থানার আইসি সুকুমার ঘোষ শুধু জানিয়েছেন, “গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে । আপাতত এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে । বাকিদের খোঁজ চলছে ।”