কলকাতা, 1 সেপ্টেম্বর: রবিবার ফের ‘শহর জুড়ে ফুটবল ফিভার’ ৷ 19 বছর পরে ফের ডুরান্ড ফাইনালে ডার্বি । আদ্যপান্ত কর্পোরেটের মোড়কে মুড়লেও ইস্ট-মোহনের আবেগ এখনও ‘ওল্ডস্কুল’, ‘ক্লিশে’ ৷ ময়দানে গেলে বছরের পর বছর দেখা যায় এরকমই টুকরো ছবি ৷ যার কোলাজ সদা রঙিন ৷ যার গল্পে শুধু ফুটবল নয় ৷ চামড়ার গোলকে বরাবর মিশেছে দিনযাপনের কথা, ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ৷
কেউ সদ্য হারিয়েছেন প্রিয়জনকে, যন্ত্রণা ভুলতে তাঁর অস্ত্র ময়দানি যুদ্ধ ৷ হৃদয়ের টানেই শ্মশানফেরত মাঠে আসেন তিনি ৷ কেউ শারীরিকভাবে অসমর্থ, হুইলচেয়ারে চড়ে গলা ফাটাতে আসেন প্রিয় দলের হয়ে ৷ কারও যাবতীয় সমস্যার সমাধান ওই মাঠ, সবুজ গালিচাই তাঁর ধূসর জীবনে রঙের পরত লাগায় ৷ যাদের আবেগের কাছে বরাবর ফিকে হয়ে গিয়েছে সবুজ-মেরুন, লাল-হলুদের মতো উজ্জ্বল রঙও ৷ ফোকাসে এসেছে ফুটবল, ময়দানি লড়াই ৷ যাদের পাগলামো, ভালোবাসা মিলিয়ে দেয় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলকে ৷ দিনযাপনের কোলাজে মিশে যায় মোহন-ইস্ট ৷ বাঙালির সেরা খেলায় জীবনযুদ্ধের মিশেল এক করে দেয় দুই ক্লাবকে ৷
রবিবার সেই ম্যাচ...বড়ম্যাচ ৷ লক্ষ লক্ষ সমর্থক নাওয়া-খাওয়া ভুলে যে দিনের অপেক্ষায় প্রহর গোনেন ৷ সমালোচকরা বলেন, কর্পোরেটের বেড়াজালে আটকে গিয়েছে আবেগ ৷ খরস্রোতা হৃদয়ে পলি জমিয়েছে টাকার অঙ্ক ৷ সত্যিই কি তাই ? শুক্রের ময়দান বুঝিয়ে দিল, আবেগ বিক্রি হয় না ৷ ডার্বির টিকিটের জন্য হাহাকার, লম্বা লাইন, মাউন্টেড পুলিশ যেন ফিরিয়ে দিল সোনালী অতীত ৷ হুইলচেয়ারে বসে টিকিটের সন্ধানে আসা অঙ্কিতা কিংবা চড়া রোদে 8 ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শুভেন্দুরা তো এই আবেগেই বাঁচে, যেমনভাবে সমস্ত প্রতিকূলতা ডজ করে বঙ্গের ফুটবলকে বাঁচিয়ে রেখেছে দুই ক্লাব ৷
আরও পড়ুন: গোয়া ‘বধ’ বাগানের, 19 বছর পর ডুরান্ড ফাইনালে ডার্বি
ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন টুর্নামেন্ট, ডুরান্ড কাপ ৷ তাতে সবচেয়ে সফল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল, দু’দলই ডুরান্ড জিতেছে 16 বার করে ৷ 28 বার ফাইনালে উঠেছে মোহনবাগান, 26 বার ইস্টবেঙ্গল ৷ পদ্মাপাড়ের ক্লাব শেষবার ফাইনাল খেলেছিল 2004 সালে ৷ মোহনবাগানকে 2-1 গোলে হারিয়ে কাপ গিয়েছিল লাল-হলুদ তাঁবুতে ৷ মোহনবাগান শেষবার ডুরান্ড ফাইনাল খেলেছে 2019 সালে, গোকুলাম কেরালার কাছে 2-1 গোলে হেরেছিল বাগান ৷ এতো গেল পরিসংখ্যানের কথা ৷
চলতি ডুরান্ডের গ্রুপ পর্বে নন্দকুমারের গোলে ইস্টবেঙ্গল হারিয়ে দিয়েছিল মোহনবাগানকে ৷ অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দল গড়েও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে হারতে হয়েছে গঙ্গাপাড়ের ক্লাবকে ৷ টানা আট ডার্বি জেতার পর নৌকোডুবি ৷ ফলে ডুরান্ডের ফাইনাল বাগানের কাছে কার্যত বদলার ম্যাচ ৷ অন্যদিকে 19 বছর পর ফাইনালে উঠে জিততে বদ্ধপরিকর লাল-হলুদও ৷ ফলে আবেগ, প্রিয় ক্লাবের সঙ্গে দুই কোচের ফুটবল বুদ্ধি, খেলোয়াড়দের নিপুনতার মিশেলে রবিবারের ডার্বি জমজমাট ৷
আরও পড়ুন: দু'গোলে পিছিয়ে পড়ে স্মরণীয় প্রত্যাবর্তন, টাইব্রেকারে জিতে 19 বছর পর ডুরান্ড ফাইনালে লাল-হলুদ