কলকাতা, 23 ডিসেম্বর: "শিরায় শিরায় রক্ত আমরা দেবের ভক্ত"- প্রেক্ষাগৃহগুলিতে এমনই স্লোগান চলছে আজকাল। 'খাদান'-এ দেব প্রমাণ করলেন যে কেন তাঁর ভক্ত সংখ্যা আজ আকাশ ছুঁয়েছে।
'খাদান' জুড়ে বইল দেব ঝড়
"ফ্যামিলি নিয়ে ব্যস্ত আছি তো কী ভাবছিস, অ্যাকশনটা ভুলে গেছি?"-- 'খাদান' দেখার পর দেবের এই সংলাপ মানুষের মুখে মুখে ফিরছে ৷ বন্ধু বন্ধুকে বলবে, শত্রুও শত্রুকে বলবে। পুরনো মেজাজে, রোম্যান্টিক ইমেজে এই সেই চেনা দেব ৷ অ্যাকশন করছেন আবার কিশোরীর সঙ্গে ডগমগ প্রেমেও মশগুল। এহেন দেবকে অনেকদিন ধরেই চাইছিল বাঙালি দর্শক। পিরিয়ড ড্রামা, সাহিত্যের পাতা থেকে গোয়েন্দার চরিত্রে ঠিক ভরছিল না দর্শকের মন। অবশেষে ভক্তদের সাধপূরণ করলেন তিনি। সেই কারণেই হয়ত হল ভরাচ্ছেন তাঁরা।
কোলিয়ারি এলাকায় সিস্টেম-সিন্ডিকেটের ডামাডোল থেকে নাচ-গান, রোমান্স, অ্যাকশনে ভরপুর এই ছবি। দেবের এখানে ডাবল রোল। দুই অবতারেই প্রমাণ করেছেন পাগলু ছিলেন, পাগলু আছেন, পাগলু থাকবেন।
খাদান গল্প
গল্পের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে সর্বস্ব খুইয়ে এপারে এসেছে মোহন দাস (যিশু)। তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় শ্যাম মাহাতোর (দেব)। মোহনের মাথা আর শ্যামের শক্তি, দুই মিলে কোলিয়ারি অঞ্চলে একচেটিয়া রাজ চালায় মোহন এবং শ্যাম। তাতে বিধায়ক সিদ্দিকি (সুজন নীল মুখোপাধ্যায়) নড়েচড়ে বসে ৷ দিন এগোয় শ্যাম আদিবাসীদের ভগবান হয়ে ওঠে। শ্রমিকদের পেটে লাথি মারতে নারাজ শ্যাম। এরপর খাদানের 20 শতাংশ ভাগ তাদের হাতে তুলে দিয়ে শ্যাম হয়ে ওঠে তাদের রাজা। কিন্তু রাগের মাথায় পুলিশ খুন করে ফেলে শ্যাম। অগত্যা হাজতবাস। এদিকে ঘরে সদ্যোজাত সন্তান আর স্ত্রী। এর মাঝে জেলেই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় শ্যামের। কে খুন করল শ্যামকে? খোঁজ মিলবে ছবিতে। বিরতির পর আগমন শ্যাম পুত্র মধুর। এরপরই গল্পের মোড় ঘোরে! সেখানেই আছে চমক।
চিত্রনাট্য আরেকটু শক্তপোক্ত হলে মন্দ হত না। তবে, অনেকদিন পর রোমান্স আর অ্যাকশনে ভরপুর এমন বাংলা সিনেমা এল দর্শকের দরবারে। দেবের পুরনো ইমেজ দিনদিন হারাতে বসছিল অস্বীকার করার জায়গা নেই। সেই জায়গায় 'খাদান' আবার তাঁকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনল। মনে করাল পুরনো দেবকে। জানা গিয়েছিল চরিত্রের প্রয়োজনে নাকি দেব বিড়ি টেনে ঠোঁট পুড়িয়েছেন। ছবিতেও তা স্পষ্ট। বিশেষ করে শ্যামের উস্কোখুস্কো চুল, রাফ অ্যান্ড টাফ ইমেজ এক লহমায় দর্শককে নড়িয়ে চড়িয়ে বসিয়ছে।
ইধিকা পালের সঙ্গে 'কিশোরী কিশোরী' গানের সঙ্গে দেবের নাচ অনবদ্য। শাকিবের প্রিয়তমা দেবের সঙ্গেও সমান রোম্যান্টিক। যত্ন নিয়ে অভিনয় করেছেন ইধিকা। দর্শক ভালোবেসেছে এই জুটিকে।
যীশু সেনগুপ্ত এখন 'পোরখাওয়া', 'দুঁদে' অভিনেতা। 'খাদান'-এও সেটা প্রমাণ করলেন। তবে, বাঙাল সংলাপের প্রতি আরেকটু নজর দেওয়ার দরকার ছিল যীশুর চরিত্রের। আদিবাসী সর্দার মাণ্ডির ভূমিকায় অনির্বাণ চক্রবর্তী অনবদ্য। একেন এবং জটায়ুর চরিত্রকে কীভাবে ভেঙেচুরে দিতে হয় সেটা দেখিয়ে দিলেন। সুজন নীল মুখোপাধ্যায় একইরকমের ভালো। দেবের সঙ্গে অ্যাকশন দৃশ্যে নজর কাড়লেন জন ভট্টাচার্য। দশ বছর ধরে বাংলা সিরিয়ালে দাপিয়ে বেরিয়েছেন তিনি। এবার মন দিয়েছেন সিনেমায়। অ্যাকশনেও হিরো ইমেজ রেখেছেন জন। বরখা থেকে স্নেহা যথাযথ।
এই ছবির গানেও ম্যাজিক আছে। 'রাজার রাজা এলো' থেকে 'কিশোরী কিশোরী'- দুর্দান্ত পারফরম্যান্স অভিনেতাদের। সবমিলিয়ে মশলাদার মুভি 'খাদান'। ফুল এন্টারটেইনিং। পুরনো দেবের ইমেজ বুঝতে ঢুঁ মারতে হবে প্রেক্ষাগৃহে ৷