কল্যাণী, 12 অক্টোবর : খেলল ইউনাইটেড স্পোর্টস, জিতল মহমেডান স্পোর্টিং। সপ্তমীর বিকেলে কল্যাণী স্টেডিয়াম বাঙালির ফুটবল নৈপুণ্যের শরিক হয়ে রইল। ম্যাচের স্কোরবোর্ড বলছে মার্কাস জোসেফের একমাত্র গোলে ইউনাইটেড স্পোর্টসকে হারিয়ে কলকাতা লিগের ফাইনালে মহমেডান স্পোর্টিং। কিন্তু যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই ম্যাচে দেখা গেল তাতে বলা যায়, জয় হল ফুটবলের, বাঙালির ফুটবল আবেগের। 18 অক্টোবর ফাইনালে রেলওয়ে এফসির মুখোমুখি হবে মহমেডান।
সেমিফাইনাল ম্যাচে খেলতে নামার আগে মারাত্মক চাপে ছিলেন মহমেডান ও ইউনাইটেড স্পোর্টসের ফুটবলাররা। 1981 সালে শেষবার কলকাতা লিগ জিতেছিল মহমেডান। অন্যদিকে, ইউনাইটেড স্পোর্টস অতীতে দু-দুবার লিগে রানার্স হলেও খেতাব জিততে পারেনি। মঙ্গলবার জিততে পারলেই লক্ষ্যের কাছাকাছি চলে যাওয়া যাবে। এই পরিস্থিতিতে মাটি বিনা যুদ্ধে না দেওয়ার পণ ছিল দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে। এমন এক কঠিন ম্যাচ খেলতে নেমে শেষ হাসি হাসলেন মহমেডান ফুটবলাররাই।
নির্ধারিত 90 মিনিটে ইউনাইটেড স্পোর্টসকে 1-0 গোলে হারিয়ে লিগের ফাইনালে পৌঁছে গেল মহমেডান স্পোর্টিং। জয়সূচক গোলটি করেন বিদেশি ফুটবলার মার্কাস জোসেফ। সবমিলিয়ে দীর্ঘ 40 বছর পর মহমেডানের সামনে ফের লিগ জয়ের হাতছানি। অন্যদিকে লিগ খেতাব জয়ের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল অলোকেশ কুন্ডু-নবাব ভট্টাচার্যদের।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ এবং প্রতি আক্রমণ। বলের দখল মহমেডানের ফুটবলারদের পায়ে একটু বেশি থাকলেও চোখ জুড়িয়ে গিয়েছে ইউনাইটেডের এক ঝাঁক বাঙালি ফুটবলারদের পাসিং ফুটবল দেখে। মাটিতে বল রেখে এক সঙ্গে 5-6টা পাস খেলে বিপক্ষের বক্সে উঠে যাচ্ছে। শেষ পাঁচ বছরের কলকাতা লিগে বাঙালিদের এমন সংঘবদ্ধ ফুটবল দেখা যায়নি। বিশেষ করে সুব্রত, জগন্নাথ, তারক, বাসুদেব, তন্ময়দের ফুটবল দেখে মনে হচ্ছিল এরাই যেন বাঙালির ফুটবলের আত্মতৃপ্তি। নিরন্তর কঠোর অনুশীলনের সার্থক ফসল। পরিসংখ্যান বলছে, এবারের কলকাতা লিগে এখনও পর্যন্ত গোল হয়েছে 135 টি। বিদেশি ফুটবলাররা গোল করেছেন 41 টি। আর বাঙালি ফুটবলাররা গোল করেছেন 83টি।
তাই বলা যায় দুর্দান্ত লড়াই করেও হারতে হল জগন্নাথদের। প্রথমার্ধের শেষ দিকে বক্সের মধ্যে মার্কাস জোসেফকে তন্ময় ঘোষ ফাউল করলে সঙ্গে সঙ্গে রেফারি পেনাল্টি দেন। 43 মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে মহমেডানকে 1-0 গোলে এগিয়ে দেন মার্কাস জোসেফ। যদিও পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে ইউনাইটেড স্পোর্টসের ক্ষোভ রয়েছে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে শুরু করেন জগন্নাথ, সুব্রত, তন্ময়রা। একটা সময় মনে হচ্ছিল যে কোনও সময় গোল করে দেবেন সুব্রতরা। কিন্তু শাহিন, অরিজিত বাগুইদের নেতৃত্বাধীন মহমেডানের জমাট রক্ষণভাগ অটুট থাকে শেষ পর্যন্ত। কিংবদন্তী কোচ অমল দত্ত বলতেন, 'অস্ত্রোপচার সফল, অথচ রোগী বাঁচল না। তাহলে কিসের সফল অস্ত্রোপচার? " ইউনাইটেডের ফুটবলাররা ভাল খেললেন। কিন্তু গোলমুখে ব্যর্থতা তাঁদের পরাজিতর তালিকায় রেখে দিল।
এদিনের ম্যাচের সেরা হয়েছেন একমাত্র গোলদাতা মার্কাস জোসেফ। সাদা-কালোর গোল করার ভার কার্যত তিনি নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছেন। প্রতিভাবান ফুটবলারের স্বীকৃতি পেলেন জগন্নাথ। এখন দেখান রেলের চেন টেনে চল্লিশ বছর পরে লিগ খেতাব মহমেডান ঘরে তুলতে পারে কি না।