কলকাতা : খাবার নষ্ট করা উচিত নয়। ছোটোবেলা থেকে বড়দের মুখে বাচ্চারা শুনে থাকে এই কথা। কিন্তু তবুও কিছু বাচ্চা কথাটার গুরুত্ব বুঝতে পারে না। সচ্ছল পরিবার থেকে আসার কারণে জীবনের অনেককিছুরই অভাব টের পায় না তারা। অন্যদিকে পথের দুস্থ শিশুরা দু'মুঠো অন্নের জন্য হাহাকার করতে থাকে রাস্তায় রাস্তায়। তাদের এই কষ্টকে সুন্দরভাবে ক্যামেরাবন্দি করেছেন পরিচালক ডাঃ কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। ১৩ মিনিটের সেই শর্টফিল্মের নাম 'হাফ অ্যান আওয়ার উইথ চার্লি'।
কৃষ্ণেন্দু বললেন, " স্ট্রিট চিল্ড্রেনরা ঠিক মতো খেতে পায় না। বাসি খাবার, পচা জিনিসপত্র খেয়েও হাসি মুখে থাকে। কিন্তু, অবস্থাপন্ন বাড়িতে বাচ্চারা ইচ্ছে হলেই খাবার ফেলে দেয়। রেস্টুরেন্টে গেলে, খাবার ভালো না লাগলে ফেলে দেয়। রোজকার জীবনে তারা এভাবেই মানুষ হচ্ছে। যারা ভালো খাবারও পছন্দ না হলে খায় না। আমার গল্পে একটি বাচ্চা আছে, যে খুব বড়লোক বাড়ির ছেলে। যাকে ভালো খাবার দিলেও পছন্দ হয় না। সে খাবার ফেলে উঠে যায়। বাচ্চাটির ঘরের মধ্যে রয়েছে একটি চ্যাপলিনের মূর্তি। চার্লি চ্যাপলিনের। একদিন সে দেখে চ্যাপলিন তার মুখের সামনে বসে আছে। চাপলিন বাচ্চাটিকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে গোটা কলকাতা শহর ঘুরে দেখায়। এবং একদম রিয়েল লোকেশনে নিয়ে যায়। অর্থাৎ যেখানে দুস্থ পথশিশুরা থাকে। যেমন ঢাকুরিয়া, রাজবিহারী, গড়িয়াহাট। খাবার সময় তারা হাজির হয় সে সব জায়গায়। বাচ্চাটি দেখে, যে খাবারই হোক, সেটা পেয়ে কীভাবে দুস্থ বাচ্চারা পিকনিকের মতো সেটা খাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার পর বাচ্চাটি বাড়ি চলে আসে। মা যখন তাকে খেতে দেয়, সেটা সে যত্ন সহকারে খেয়ে নেয়।"
কৃষ্ণেন্দু বলেন, "এই বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আমার বহুদিনের। চ্যাপলিনকে আনলাম, কারণ এই গল্পে কোনও ডায়ালগ নেই। পুরোটাই সাইলেন্ট। আসলে আমার কিছু না বলে অনেক কিছু বলে দিতে ভালো লাগে। ছবির শুরুতে দু'বার খালি ডাক আসে, যখন মা ছেলেটিকে খেতে ডাকে, ওইটুকুই। এখানে একটা কমেডির মোড়কও রেখেছি আমি।"
কৃষ্ণেন্দুর বক্তব্য, "আমার টার্গেট ১ লাখ স্কুল পড়ুয়াকে ছবিটা দেখানো। এখনও পর্যন্ত আমরা এটা তিনটে স্কুলে দেখিয়েছি। সকলের খুব ভালো লেগেছে ছবিটা। অনেকে বলেছে দুস্থ পথ শিশুদের জন্য খাবার দেবে। আসলে আমরা একটা অ্যাওয়ারনেস তৈরি করতে চেয়েছি। এই কাজে আমাকে খুব সাহায্য করেছে ফিড। ফিড একটি সংস্থা, যারা ফুড ATM তৈরি করেছে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়। এই বাচ্চাগুলোকে নিয়ে শুট করা খুব কঠিন ছিল। কারণ এরা রিয়েল লোকেশনের রিয়েল বাচ্চা। কেউ আর্টিস্ট নয়। শুধু যাকে সচ্ছল পরিবারের দেখানো হয়েছে সেই অভিনেতা। তার নাম রাজ ঘোষ, বয়স 7 কী 8। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন RJ মানালি। রিয়েল লোকেশনের বাচ্চাদের নিয়ে শুটিং করার বিষয়টা আমাকে খুব ভাবিয়ে ছিল। পুরোটা চন্দ্রশেখরদা দেখেদিয়েছেন। অসম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আমার প্রযোজক শুভঙ্কর বিশ্বাস। এ ধরনের ছবিতে তো কোনও লাভের আশা রাখা যায় না, তাও যে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, এ জন্য আমি খুবই কৃতজ্ঞ।"