বাগদা, ২১ ফেব্রুয়ারি : ছেলেকে খুন করে কবর দেওয়ার অভিযোগ উঠল আব্বার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি বাগদা থানার আষাঢ়ু গ্রাম পঞ্চায়েতের মালিপোঁতা গ্রামের। শওহরের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলে পুলিশের কাছে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের দাবি জানান মৃতের আম্মা পাপিয়া মণ্ডল। তাঁর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে মৃত সুমন মণ্ডলের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তারপর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
বাগদা ব্লকের আষাঢ়ু পঞ্চায়েতের মালিপোঁতা গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান মণ্ডল ও তাঁর বিবি পাপিয়া মণ্ডল। তাঁদের ছেলে সুমন মণ্ডল (১৭)। পারিবারিক অশান্তির জেরে আলাদা থাকেন শওহর-বিবি। শাহজাহানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ না হলেও পাপিয়া মণ্ডল বনগাঁ থানার মণিগ্রাম এলাকায় তাঁর বাবার বাড়িতে থাকেন। সম্পর্ক ঠিক না থাকায় ছেলের সঙ্গে শাহজাহানকে কম দেখা করতে দেওয়া হত। কিন্তু সুমন বড় হওয়ার পর বাবা-ছেলের কথা হত। শাহজাহানের পরামর্শেই প্রায় আট মাস আগে সোনার কাজ শিখতে পুনে গিয়েছিল সুমন। পুনেতে সুমন যার দোকানে থেকে কাজ শিখত, তার বাড়ি বাগদার পদ্মপুকুর এলাকায়।
সুমনের মা পাপিয়া মণ্ডল বলেন, "গত রবিবার ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার। ছেলে আমায় জানিয়েছিল যে শাহজাহান তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেছে।" পাপিয়া মণ্ডলের অভিযোগ, মাত্র আট মাস হয়েছে ছেলে কাজ শিখছে। এখনও ভালো করে কিছু শিখতেই পারেনি। এর মধ্যে এক লাখ টাকা সে পাবে কোথায়। তিনি আরও বলেন, "পুনেতে আর থাকতে চাইছিল না ছেলে। এখানে নিয়ে আসার কথা আমায় বলেছিল।"
তিনি আরও বলেন, "সোমবার শাহজাহান এবং দোকানের মালিক আমার কাছে এসে বলে সুমন নাকি তিন দিন ধরে নিখোঁজ। এটা শোনার পরেই আমার সন্দেহ হয়। রবিবারই সুমনের সঙ্গে কথা বলেছি আমি। এর মধ্যে ছেলে নিখোঁজ হয় কী করে?" এরপর পাপিয়া প্রতিবেশীদের কাছে জানান বিষয়টি। প্রতিবেশীরা চেপে ধরতেই শাহজাহান বলে, সুমন আত্মহত্যা করেছে। এরপর সুমনের দেহ পুনে থেকে নিয়ে এসে ময়নাতদন্তের দাবি তোলেন পাপিয়া এবং প্রতিবেশীরা।
পাপিয়া মণ্ডল বলেন, "মঙ্গলবার জানতে পারি পুনে থেকে ছেলের দেহ এনে বাগদার মালিপোঁতায় নিজের বাড়িতে কবর দিয়েছে শাহজাহান।" এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। সন্দেহ দানা বাঁধতেই
মঙ্গলবার গভীর রাতে বাগদা থানায় গিয়ে হাজির হন পাপিয়া মণ্ডল। পুলিশের কাছে পাপিয়া অভিযোগে জানান, শাহজাহানই তাঁর ছেলেকে খুন করে দেহ কবর দিয়েছে। পাশাপাশি কবর থেকে ছেলের দেহ তুলে ময়নাতদন্তেরও
দাবি জানিয়েছেন পুলিশের কাছে।
পুলিশ সূত্র অনুযায়ী, পাপিয়া মণ্ডলের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতেই গতকাল সুমনের দেহ তোলার ব্যবস্থা করা হয়।
গতকাল দুপুরেই বাগদা থানার পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম আলি মুফতি হাজির হন মালিপোঁতায় শাহজাহানের বাড়িতে। পুলিশ জানিয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতেই মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু হয়।
বাগদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, কী ভাবে পুনে থেকে সুমনের দেহ এখানে নিয়ে আসা হয়েছে, কারা এই কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত আর কেনই বা ময়নাতদন্ত না করে কবর দেওয়া হয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্ত শাহজাহান মণ্ডল ও তার এক সহযোগী পলাতক। তাদের খোজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।