ETV Bharat / international

ইউরোপীয় খামারগুলির অযৌক্তিক ও অনৈতিক ভর্তুকি ব্যবস্থা

2007-08 সালে বিশ্বজুড়ে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই সব খামারের উপর থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল । তথ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়েছিল, এই ভর্তুকির জন্যই খাদ্য পণ্যের বিপুল দাম বাড়ছে ৷ যার কিছুটা বিপরীত প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর । লিখছেন পারিতালা পুরুষোত্তম ৷

european farm
ইউরোপীয় খামার
author img

By

Published : Jan 28, 2020, 7:30 AM IST

Updated : Jan 28, 2020, 7:56 AM IST

পুরানো কথা

দু’টি বিধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি হওয়ার পরে 1962 সালে ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের মধ্যে একটি সর্বজনীন নীতি তৈরি করে । এই পলিসির মূল লক্ষ্য ছিল, কৃষিক্ষেত্রে মূলত ভর্তুকির মাধ্যমে একটি স্বনির্ভর ব্যবস্থা তৈরি করা ৷ যাতে কখনও খাদ্য সংকট দেখা না দেয় । এই পলিসির নাম ছিল কমন এগ্রিকালচারাল পলিসি (CAP) । প্রথমে এটিকে একটি সাময়িক ব্যবস্থা হিসাবে‌ দেখা হয়েছিল । কিন্তু পরবর্তী কালে এটি দীর্ঘকালীন ব্যবস্থা হিসাবে সামনে আসে । 1980 সাল নাগাদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট বাজেটের দুই তৃতীয়াংশ CAP-এর আওতায় চলে যায় । বর্তমানে যে চুক্তিটি রয়েছে, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে 2020 সালের শেষে । এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, এত দিন ধরে যে সব খামার (যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বড় খামার) সুবিধা পেত, তারা চুক্তি পুনর্নবীকরণের জন্য আবেদন করবে । কিন্তু এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্তদের একটা বড় অংশ- সমাজের বুদ্ধিজীবী, পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী, করদাতাদের একাংশ এবং সমাজ বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন CAP-এর পুনর্বিন্যাস ও ভর্তুকির পরিমাণ অনেকটাই কমানোর বিষয়ে ।

যেখানে সমালোচনা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই ভর্তুকি একেবারেই অযৌক্তিক, ভণ্ডামিতে ভরা এবং সংরক্ষণপূর্ণ -

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যার মাত্রা 5.4 শতাংশ মানুষ খামারে কাজ করেন । 2005 সালের হিসাব অনুযায়ী, EU-এর মোট GDP-র মাত্র 1.6 শতাংশ আসে খামার ক্ষেত্র থেকে । প্রতি বছর 2 শতাংশ হারে ইউরোপে কৃষকের সংখ্যা কমছে । উপরন্তু, বেশির ভাগ ইউরোপীয় বাস করেন শহর ও মফস্বলে ৷ গ্রামীণ এলাকায় বিশেষ কেউ থাকেন না । GDP-তে সামান্য পরিমাণ অবদান থাকলেও EU-এর মোট বাজেটের প্রায় 40 শতাংশ এই ক্ষেত্রে ব্যয় করা হয় । টেট অ্যান্ড লিল, নেসলে-র মতো বড় মাপের 250টি সংস্থা এই অর্থের বেশির ভাগটাই নিয়ে নেয় । ছোটো সংস্থাগুলির জন্য পড়ে থাকে খুবই সামান্য পরিমাণ অর্থ । ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে পশুপালন মোটামুটি ভাবে ব্যর্থ । ‘লাভ’ বলে যে অংশটির উল্লেখ করা হয়, তার প্রায় 90 শতাংশ আসে ভর্তুকি থেকে । কমন এগ্রিকালচারাল পলিসি (CAP)-এর প্রধান লক্ষ্য ছিল বহু দশকের শত্রুতাকে পাশে সরিয়ে রেখে কৃষকদের সেই পর্যায়ের উন্নতি সাধন করা, যাতে তাঁরা সমগ্র ইউরোপকে খাবার যোগাতে সক্ষম হন । আর এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির মাধ্যমে ইউরোপকেই তাঁদের কৃষকদের খাবারের জোগান দিতে হচ্ছে ।

2007-08 সালে বিশ্ব জুড়ে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই সব খামারের উপর থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল । তথ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়েছিল, এই ভর্তুকির জন্যই খাদ্য পণ্যের বিপুল দাম বাড়ছে ৷ যার কিছুটা বিপরীত প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর ।

মোট বাজেটের 38 শতাংশের হিসাবে দেখা গেছে, ইউরোপের করদাতারা প্রতি বছর কৃষকদের 58 বিলিয়ন ইউরোর বেশি দিয়ে থাকেন । এই পরিমাণটা কতটা বেশি তার জন্য দু’টি তথ্যই যথেষ্ট, ইউরোপের মোট জনসংখ্যার মাত্র তিন শতাংশ কৃষক এবং তাঁরা মোট GDP-এর মাত্র ছয় শতাংশের দায়িত্ব নেন ।

এগুলো শুনে যদি এটা মনে হয়, এই অর্থনীতি সুরক্ষাবাদ ও সঙ্কীর্ণ, তা হলে তা একেবারেই সঠিক ।

সমগ্র ইউরোপ জুড়ে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য, কম দামে খাদ্য পণ্য আমদানি থেকে তাঁদের কৃষকদের বাঁচাতে সুরক্ষার প্রয়োজন । ভাবখানা এমন যেন সস্তার খাদ্যের প্রতি গ্রাহকদের কোনও অধিকার নেই।

2003 থেকে 2013 সালের মধ্যে ইউরোপের প্রায় 25 শতাংশ খামারের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে । এই বন্ধ হয়ে যাওয়া খামারগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ছোটো ছোটো খামার । বড় খামারগুলোর ব্যবসা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে ।

30 শতাংশেরও বেশি সরাসরি ভর্তুকি যায় মাত্র দুই শতাংশের কাছে । আর 80 শতাংশ ভর্তুকি যায় মাত্র 20 শতাংশ খামার ব্যবসায় । তার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই কৃষকের কোনও অস্তিত্বই থাকে না । ভর্তুকির সিংহ ভাগ যায় টেট অ্যান্ড লিল এবং নেসলের মতো সংস্থায়, যারা কোটি কোটি ইউরোর ব্যবসা করে ।

খামারে এই ভর্তুকির পরিণতি বিপুল পরিমাণে বাড়তি খাদ্যের উৎপাদন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই বিপুল ভর্তুকির জন্য উৎপন্ন হচ্ছে বাড়তি খাদ্যদ্রব্য । দুধ থেকে গম—এই বিপুল বাড়তি খাদ্য অত্যধিক কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে । বিপুল ভর্তুকির জন্য এই সব খাদ্যের দাম এতটাই কম হচ্ছে যে আফ্রিকার স্থানীয় কৃষকরা প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠছেন না । ফলে আফ্রিকার কৃষকদের সামান্য আয় আরও কমে যাচ্ছে ।

একমাত্র ইউরোপই নয়, যারা নিজেদের সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রকল্প থেকে সমস্যায় পড়েছে । 1980 সালে এই রকমই সমস্যায় পড়েছিল নিউজ়িল্যান্ড । সেই সময় এই দেশ কৃষিপণ্যের রপ্তানির উপর ভীষণ ভাবে নির্ভরশীল ছিল । খামার ব্যবসার 40 শতাংশ আয় আসত ভর্তুকি থেকে । এক বছর অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে প্রায় 60 লাখ ভেড়া মেরে ফেলা হয় ৷ কারণ তাদের কোনও ক্রেতা ছিল না ।

কৃষিক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই বিপুল ভর্তুকির ফলে বিপুল ক্ষমতা পেয়ে তৈরি হচ্ছে "কৃষি মাফিয়া"

ইউরোপের এই খামার প্রকল্প বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভর্তুকি প্রকল্পগুলির অন্যতম । এখানে কৃষক ও গ্রমীণ বিভিন্ন সংগঠনকে প্রায় 65 বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দেওয়া হয় । নিউইয়র্ক টাইমসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ব্যবস্থার মারাত্মক সুবিধা নিচ্ছে একদল শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতা ও আমলার দল । প্রায় 65 বিলিয়ন ডলারের এই বিপুল ভর্তুকির সুবিধা নেয় যে সব সংস্থা, অনেক সময়ই তার পরিচালনার ভার থাকে এই সব রাজনৈতিক নেতা ও আমলার উপর ।

পরিবেশের উপর বিপরীত প্রভাব

সীমাহীন ভর্তুকি বড় কৃষি সংস্থাগুলিকে সুবিধা করে দিয়েছে বিপুল পরিমাণে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহারে । এর ফলে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে জল, মাটি ও বাতাস । এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সমগ্র জীবজগতের উপর । ব্রিটেনে দূষণের ফলে হওয়া মৃত্যুর ফলে জনস্বাস্থ্যে আপৎকালীন অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয়েছিল সে দেশের সরকার । কৃষকদের কম কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া এই অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার একটা উপায় হলেও এর ফলে সমস্যার পূর্ণ সমাধান হওয়া কোনও অবস্থাতেই সম্ভব নয় ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি (51 শতাংশ) খামার যারা 2017 সালে CAP-এর মাধ্যমে মোট 104 মিলিয়ন ইউরো সাহায্য পেয়েছে, তারা তাদের নিজেদের দেশে সবচেয়ে বেশি অ্যামোনিয়া নিঃসরণ করায় দুষ্ট । সার থেকে বের হওয়া ক্ষতিকারক অ্যামোনিয়া নদী, হ্রদ ও সমুদ্রে অত্যন্ত দ্রুত হারে শ্যাওলা উৎপাদনে মদত দেয় ৷ যার ফলে প্রাণী ও গাছপালার প্রয়োজনীয় অক্সিজেনে টান পড়ে।

এই সব দেশে বিপুল পরিমাণে অ্যামোনিয়া নিঃসরণকারী দুই হাজার 374টি পশুপালন খামারের মধ্যে এক হাজার 209টি প্রতি বছর CAP-এর মাধ্যমে 104 মিলিয়ন ইউরো ভর্তুকি পেয়ে এসেছে । বাল্টিক সাগরে নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় শ্যাওলার পরিমাণ মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে । এদের মধ্যে কয়েকটির নীল ও সবুজ ফুল এতটাই বিশাল যে এগুলিকে অন্তরীক্ষ থেকেও দেখা যায় ।

এই শ্যাওলাগুলি পচে গিয়ে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত অক্সিজেনের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিচ্ছে । এর ফলে বাল্টিক সাগরের বহু অংশ মৃতের অঞ্চল হয়ে গেছে । এই সব জায়গায় আর প্রাণের অস্তিত্ব নেই ।এইভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কৃষি জল, মাটি ও বাতাসকে দূষিত করে চলেছে ।

হারিয়ে যাচ্ছে পাখির দল

এই বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি এবং এর ফলে হওয়া খামার দূষণের ফলে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে পাখি, প্রজাপতি, মৌমাছি-সহ একাধিক পতঙ্গ প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে বা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে । এর ফলে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে খাদ্য শৃঙ্খলে, যা প্রাণের অন্যতম ধারক। বিপু‌ল পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে মাটি দূষিত হচ্ছে । এর ফলে পাখিরা খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছে ।

কৃষিক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর এই প্রকল্পের ফলে বন্যপ্রাণের মারাত্মক ক্ষতির বিষয় প্রায় দুই দশক ধরেই জানেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্তারা । 2004 সালে বিজ্ঞানীরা দুটি রিপোর্ট পেশ করে দাবি করেন, কৃষি ক্ষেত্রে এই ভর্তুকির জন্যই পাখির সংখ্যা কমছে এবং খামারের জীব বৈচিত্র্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে ।

এরপর থেকেই সংরক্ষণের চেষ্টাকে বারবার লঘু করা হয়েছে । 2006 সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশির ভাগে দেশ একটি ভূমি বিল পাশ করানোর চেষ্টা করে, যার ফলে বন্যপ্রাণের উন্নতি হতে পারত । কিন্তু ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি মিলিতভাবে এই বিলের বিরোধিতা করে তা আটকে দেয়।

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন

ইউরোপের মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনের 10 শতাংশের জন্য দায়ি এই খামার ব্যবস্থা । খামারের গবাদি পশুরা খাবার খেয়ে যে মল ত্যাগ করে তা থেকে নির্গত হয় মিথেন, যা অন্যতম গ্রিনহাউস গ্যাস । এর সঙ্গে যোগ হয় রাসায়নিক সার থেকে নির্গত হওয়া নাইট্রাস অক্সাইড এবং পচে যাওয়া সার থেকে নির্গত হওয়া মিথেন ও অ্যামোনিয়া । পশুপালনকে উৎসাহ দিতে বিপুল ভর্তুকি এই পরিস্থিতিকে আরও মারাত্মক করে তুলছে ।

ফ্রান্সে প্রতি গ্রীষ্মে ব্রিটানি সমুদ্র সৈকত শ্যাওলায় ঘন সবুজ হয়ে যায় । এই সব শ্যাওলা পচে গিয়ে বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইড নিঃসরণ করে যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এই ব্রিটানিতেই ফ্রান্সের অর্ধেক পরিমাণ শুয়োরের মাংস এবং সিকি ভাগ দুগ্ধজাত সামগ্রী উৎপন্ন হয় । গবাদি পশুর অবশেষ ছড়িয়ে দেওয়া হয় গম ও ভুট্টার খেতে, যেগুলি আবার এই সব পশুদের অন্যতম খাদ্য । এই সব কারণে সমগ্র ফ্রান্সের মধ্যে ব্রিটানিতে নাইট্রোজেন ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি । এই সব নাইট্রোজেন শ্যাওলার অন্যতম প্রধান খাদ্য । এই সব প্রাদেশিক খামারগুলি সমুদ্রে শ্যাওলার পরিমাণ বাড়িয়েই চলেছে ।

বহু বছর ধরে সরকারি আধিকারিক এবং কৃষকরা কৃষি ও সৈকতে ভেসে আসা শ্যাওলার মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, তা মানতেই চাননি । ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পরিবেশ মন্ত্রকের আধিকারিকরা বলছেন, নাইট্রেট দূষণ কমাতে কৃষকদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে এবং তাঁদের বোঝাতে হবে যাতে তাঁরা উৎপাদন কিছুটা কমিয়ে দেন । কিন্তু এই প্রস্তাব কৃষকরা মানতে চাননি । তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও অবস্থাতেই তাঁরা লভ্যাংশ কমাতে তৈরি নন । ইউরোপেরই পরিবেশ এজেন্সি জানাচ্ছে, বাল্টিক সাগরের অংশবিশেষকে স্বাস্থ্যকর অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অন্তত 200 বছরের প্রয়োজন । গত বছর পোল্যান্ড সমগ্র দেশকে নাইট্রেট প্রবণ হিসাবে ঘোষণা করে এবং মেনে নেয় যে সে দেশের জল দূষণের জন্য দায়ি খামার । নতুন নির্দেশিকা জারি করে কৃষকদের সারের ব্যবহার বেঁধে দেওয়া হয়েছে । সার ও অবশেষ এখন কৃষকদের ছিদ্র নিরোধক পাত্রে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় রেখে দিতে হয় ।

কিন্তু সরকারের এই নীতি একেবারেই পছন্দ হয়নি গ্রেটার পোল্যান্ড প্রদেশের কৃষকদের । এর একমাত্র কারণ, এই প্রদেশেই রয়েছে বিশাল আকারের একাধিক গবাদি পশুর খামার । পোল্যান্ডের এই নীতিকে খামার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় অনুপ্রবেশ বলে কটাক্ষ করে ব্রাসেলস ।

ইউরোপের বেশিরভাগ নদী, হ্রদ এবং মোহনা রাসায়নিক এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ দ্বারা মাত্রাতিরিক্ত দূষিত । এ তথ্য জানিয়েছে সাম্প্রতিক একটি প্যান-আমেরিকান সমীক্ষা । 2010 থেকে 2015 সালের মধ্যে এক লাখ 30 হাজার জলাশয়ে সমীক্ষা চালায় ওই সংস্থা । তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, 160টি নদী অববাহিকার মাত্র 40 শতাংশ পরিবেশগত মানের কাছে পৌঁছেছে । মাত্র 38 শতাংশ জলাশয় রাসায়নিক দূষণের মাত্রার মধ্যে রয়েছে । তুলনায় ভূগর্ভস্ত জলায়শয়গুলোর অবস্থা অনেকটাই ভালো । এগুলোর মধ্যে 74 শতাংশ রাসায়নিক দূষণের মাত্রার মধ্যেই রয়েছে এবং 89 শতাংশের পরিবেশগত অবস্থাও বেশ ভালো । দেখা গেছে, বেশির ভাগ জলাশয়ের দূষণের প্রধান কারণ নাইট্রেট, কৃষি অবশেষ, লবণ, শিল্পক্ষেত্র হওয়া থেকে রাসায়নিক দূষণ, খনি ও বর্জ্য । এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ দূষক হল পারদ । এর সাধারণ উৎপত্তিস্থান খনি, কয়লার দহন এবং অন্যান্য শিল্পক্ষেত্র থেকে । অন্য দিকে, ভূগর্ভস্থ জলাশয় দূষিত হয় কৃষি ক্ষেত্রে, জলে দূষিত বর্জ্য মেশা ও বাসস্থানের অবক্ষয়ের জন্য ।

জার্মানি, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরির মতো মধ্য ইউরোপের দেশগুলির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ । এই সব দেশের প্রায় 90 শতাংশ জলাশয়ের অবস্থা নির্ধারিত মানের চেয়ে অনেকটাই খারাপ । অন্য দিকে, সুইডেন, ফিনল্যান্ডের মতো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলির অবস্থা সবচেয়ে ভালো । ব্রিটেনের ছবিটাও প্রায় একই রকম । ইংল্যান্ড যেন সেখানে মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর প্রতিনিধি, যেখানে বেশিরভাগ জলাশয়ের হাল খারাপ, আর স্কটল্যান্ড যেন স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোর প্রতিনিধি, যেখানে জলাশয়গুলোর অবস্থা বেশ ভালো ।

উন্নত দেশগুলোর খামারে ভর্তুকির বিপরীত প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষকদের আয়ের উপর-

উন্নত দেশগুলোর কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকি উন্নয়নশীল দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলছে, সে সব তথ্য ভালো ভাবেই রাখা রয়েছে । কৃষিতে ভর্তুকির ফলে কম দামে খাদ্য দ্রব্য পাওয়ায় গ্রাহকের খুব সুবিধা হয়, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই । তবে এর উলটো দিকে, এর ফলে ভর্তুকিহীন দেশের কৃষকরা বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন । দারিদ্রের ক্ষেত্রে এই ভর্তুকির বিপরীত প্রভাব পড়ছে । বিষয়টা বোঝাতে একটা ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক । উন্নত দেশগুলো যদি তুলো বা চিনির উৎপাদনের উপর ভর্তুকি দেয়, তা হলে যে সব উন্নয়নশীল দেশে তুলো বা চিনি উৎপন্ন হয়, সেই সব দেশের ভর্তুকি না পাওয়া কৃষকদের সরাসরি লড়াই করতে হবে উন্নত দেশের কৃষকদের সঙ্গে। এবং তা একেবারেই অসম লড়াইয়ে পরিণত হয়ে এই কৃষকদের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ করে তুলবে । আন্তর্জাতিক ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (IFPRI) একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছিল, উন্নত দেশগুলোর কৃষি ক্ষেত্রে এই বিপুল ভর্তুকির জন্য শুধুমাত্র 2003 সালে উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রায় 24 বিলিয়ন ডলার আয় কম হয়েছিল । পাশাপাশি প্রায় 40 বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ব্যবসা মার খেয়েছে । সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, অনুন্নত দেশগুলি, যাদের GDP-র একটা বড় অংশ আসে কৃষি থেকে, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে আরও বেশি । বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের মত হল, উন্নত দেশগুলোর কৃষি ক্ষেত্রে দেওয়া এই বিপুল ভর্তুকির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে । এর পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলির গ্রামের স্বাস্থ্য পরিষেবা, পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ প্রভৃতি পরিকাঠামোর উপর । OECD ভুক্ত দেশগুলো কৃষিতে যতটা ভর্তুকি দেয়, তার মোট পরিমাণ উন্নয়নের জন্য দেয় অর্থের চেয়েও অনেকটা বেশি । আফ্রিকার ক্ষেত্রে হিসাব করে দেখা গেছে, কৃষি পণ্যে মাত্র এক শতাংশ বৃদ্ধি এই অঞ্চলের GDP-র প্রায় 70 বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি ঘটাতে পারে যা বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অনুদানের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি।

কৃষির উপর মারাত্মকভাবে নির্ভরশীল বহু উন্নয়নশীল দেশ । ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অরগানাইজ়েশন (FAO)-এর রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের দরিদ্রতম মানুষের 70 শতাংশের বেশির জীবিকা নির্বাহ হয় কৃষির দ্বারা । CAP-এর এই বিপুল ভর্তুকির জন্য এই সব উন্নয়শীল দেশের পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হয় না । বিশ্বের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ওয়ার্ল্ড ট্রেড অরগানাইজ়েশন (WTO)-র দোহা ডেভেলপমেন্ট রাউন্ড স্থগিত করে দেওয়া হয় শুধুমাত্র উন্নত দেশগুলো কৃষিক্ষেত্রে এই বিপুল ভর্তুকি ওঠাতে অসম্মত হওয়ায় ।

ঋণস্বীকার

দা ডার্টি সিক্রেটস অব ইউরোপিয়ান ফার্ম সাবসিডিজ়, নিউইয়র্ক টাইমস, 25 ডিসেম্বর 2019

“ইউরোপিয়ান ওয়াটার্স— অ্যাসেসমেন্ট অব স্টেটাস অ্যান্ড প্রেশারস (2018)”, দা ইউরোপিয়ান এনভায়রনমেন্টাল এজেন্সি (EEA)

কাই ওয়েইস, দা CAP ডাজ় নট ফিট— হোয়াই দা EU's ফার্ম সাবসিডাইজ় আর রাইপ ফর রিফর্ম, 22 অগাস্ট 2019

গ্রিনপিস ইউরোপিয়ান ইউনিট ইনভেস্টিগেশন: EU সাবসিডাইডেজ় ইউরোপস মোস্ট পলিউটিং লাইভস্টক ফার্ম, 24 এপ্রিল 2018

পুরানো কথা

দু’টি বিধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি হওয়ার পরে 1962 সালে ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের মধ্যে একটি সর্বজনীন নীতি তৈরি করে । এই পলিসির মূল লক্ষ্য ছিল, কৃষিক্ষেত্রে মূলত ভর্তুকির মাধ্যমে একটি স্বনির্ভর ব্যবস্থা তৈরি করা ৷ যাতে কখনও খাদ্য সংকট দেখা না দেয় । এই পলিসির নাম ছিল কমন এগ্রিকালচারাল পলিসি (CAP) । প্রথমে এটিকে একটি সাময়িক ব্যবস্থা হিসাবে‌ দেখা হয়েছিল । কিন্তু পরবর্তী কালে এটি দীর্ঘকালীন ব্যবস্থা হিসাবে সামনে আসে । 1980 সাল নাগাদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট বাজেটের দুই তৃতীয়াংশ CAP-এর আওতায় চলে যায় । বর্তমানে যে চুক্তিটি রয়েছে, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে 2020 সালের শেষে । এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, এত দিন ধরে যে সব খামার (যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বড় খামার) সুবিধা পেত, তারা চুক্তি পুনর্নবীকরণের জন্য আবেদন করবে । কিন্তু এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্তদের একটা বড় অংশ- সমাজের বুদ্ধিজীবী, পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী, করদাতাদের একাংশ এবং সমাজ বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন CAP-এর পুনর্বিন্যাস ও ভর্তুকির পরিমাণ অনেকটাই কমানোর বিষয়ে ।

যেখানে সমালোচনা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই ভর্তুকি একেবারেই অযৌক্তিক, ভণ্ডামিতে ভরা এবং সংরক্ষণপূর্ণ -

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যার মাত্রা 5.4 শতাংশ মানুষ খামারে কাজ করেন । 2005 সালের হিসাব অনুযায়ী, EU-এর মোট GDP-র মাত্র 1.6 শতাংশ আসে খামার ক্ষেত্র থেকে । প্রতি বছর 2 শতাংশ হারে ইউরোপে কৃষকের সংখ্যা কমছে । উপরন্তু, বেশির ভাগ ইউরোপীয় বাস করেন শহর ও মফস্বলে ৷ গ্রামীণ এলাকায় বিশেষ কেউ থাকেন না । GDP-তে সামান্য পরিমাণ অবদান থাকলেও EU-এর মোট বাজেটের প্রায় 40 শতাংশ এই ক্ষেত্রে ব্যয় করা হয় । টেট অ্যান্ড লিল, নেসলে-র মতো বড় মাপের 250টি সংস্থা এই অর্থের বেশির ভাগটাই নিয়ে নেয় । ছোটো সংস্থাগুলির জন্য পড়ে থাকে খুবই সামান্য পরিমাণ অর্থ । ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে পশুপালন মোটামুটি ভাবে ব্যর্থ । ‘লাভ’ বলে যে অংশটির উল্লেখ করা হয়, তার প্রায় 90 শতাংশ আসে ভর্তুকি থেকে । কমন এগ্রিকালচারাল পলিসি (CAP)-এর প্রধান লক্ষ্য ছিল বহু দশকের শত্রুতাকে পাশে সরিয়ে রেখে কৃষকদের সেই পর্যায়ের উন্নতি সাধন করা, যাতে তাঁরা সমগ্র ইউরোপকে খাবার যোগাতে সক্ষম হন । আর এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির মাধ্যমে ইউরোপকেই তাঁদের কৃষকদের খাবারের জোগান দিতে হচ্ছে ।

2007-08 সালে বিশ্ব জুড়ে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই সব খামারের উপর থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল । তথ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়েছিল, এই ভর্তুকির জন্যই খাদ্য পণ্যের বিপুল দাম বাড়ছে ৷ যার কিছুটা বিপরীত প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর ।

মোট বাজেটের 38 শতাংশের হিসাবে দেখা গেছে, ইউরোপের করদাতারা প্রতি বছর কৃষকদের 58 বিলিয়ন ইউরোর বেশি দিয়ে থাকেন । এই পরিমাণটা কতটা বেশি তার জন্য দু’টি তথ্যই যথেষ্ট, ইউরোপের মোট জনসংখ্যার মাত্র তিন শতাংশ কৃষক এবং তাঁরা মোট GDP-এর মাত্র ছয় শতাংশের দায়িত্ব নেন ।

এগুলো শুনে যদি এটা মনে হয়, এই অর্থনীতি সুরক্ষাবাদ ও সঙ্কীর্ণ, তা হলে তা একেবারেই সঠিক ।

সমগ্র ইউরোপ জুড়ে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য, কম দামে খাদ্য পণ্য আমদানি থেকে তাঁদের কৃষকদের বাঁচাতে সুরক্ষার প্রয়োজন । ভাবখানা এমন যেন সস্তার খাদ্যের প্রতি গ্রাহকদের কোনও অধিকার নেই।

2003 থেকে 2013 সালের মধ্যে ইউরোপের প্রায় 25 শতাংশ খামারের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে । এই বন্ধ হয়ে যাওয়া খামারগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ছোটো ছোটো খামার । বড় খামারগুলোর ব্যবসা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে ।

30 শতাংশেরও বেশি সরাসরি ভর্তুকি যায় মাত্র দুই শতাংশের কাছে । আর 80 শতাংশ ভর্তুকি যায় মাত্র 20 শতাংশ খামার ব্যবসায় । তার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই কৃষকের কোনও অস্তিত্বই থাকে না । ভর্তুকির সিংহ ভাগ যায় টেট অ্যান্ড লিল এবং নেসলের মতো সংস্থায়, যারা কোটি কোটি ইউরোর ব্যবসা করে ।

খামারে এই ভর্তুকির পরিণতি বিপুল পরিমাণে বাড়তি খাদ্যের উৎপাদন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই বিপুল ভর্তুকির জন্য উৎপন্ন হচ্ছে বাড়তি খাদ্যদ্রব্য । দুধ থেকে গম—এই বিপুল বাড়তি খাদ্য অত্যধিক কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে । বিপুল ভর্তুকির জন্য এই সব খাদ্যের দাম এতটাই কম হচ্ছে যে আফ্রিকার স্থানীয় কৃষকরা প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠছেন না । ফলে আফ্রিকার কৃষকদের সামান্য আয় আরও কমে যাচ্ছে ।

একমাত্র ইউরোপই নয়, যারা নিজেদের সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রকল্প থেকে সমস্যায় পড়েছে । 1980 সালে এই রকমই সমস্যায় পড়েছিল নিউজ়িল্যান্ড । সেই সময় এই দেশ কৃষিপণ্যের রপ্তানির উপর ভীষণ ভাবে নির্ভরশীল ছিল । খামার ব্যবসার 40 শতাংশ আয় আসত ভর্তুকি থেকে । এক বছর অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে প্রায় 60 লাখ ভেড়া মেরে ফেলা হয় ৷ কারণ তাদের কোনও ক্রেতা ছিল না ।

কৃষিক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই বিপুল ভর্তুকির ফলে বিপুল ক্ষমতা পেয়ে তৈরি হচ্ছে "কৃষি মাফিয়া"

ইউরোপের এই খামার প্রকল্প বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভর্তুকি প্রকল্পগুলির অন্যতম । এখানে কৃষক ও গ্রমীণ বিভিন্ন সংগঠনকে প্রায় 65 বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দেওয়া হয় । নিউইয়র্ক টাইমসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ব্যবস্থার মারাত্মক সুবিধা নিচ্ছে একদল শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতা ও আমলার দল । প্রায় 65 বিলিয়ন ডলারের এই বিপুল ভর্তুকির সুবিধা নেয় যে সব সংস্থা, অনেক সময়ই তার পরিচালনার ভার থাকে এই সব রাজনৈতিক নেতা ও আমলার উপর ।

পরিবেশের উপর বিপরীত প্রভাব

সীমাহীন ভর্তুকি বড় কৃষি সংস্থাগুলিকে সুবিধা করে দিয়েছে বিপুল পরিমাণে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহারে । এর ফলে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে জল, মাটি ও বাতাস । এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সমগ্র জীবজগতের উপর । ব্রিটেনে দূষণের ফলে হওয়া মৃত্যুর ফলে জনস্বাস্থ্যে আপৎকালীন অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয়েছিল সে দেশের সরকার । কৃষকদের কম কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া এই অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার একটা উপায় হলেও এর ফলে সমস্যার পূর্ণ সমাধান হওয়া কোনও অবস্থাতেই সম্ভব নয় ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি (51 শতাংশ) খামার যারা 2017 সালে CAP-এর মাধ্যমে মোট 104 মিলিয়ন ইউরো সাহায্য পেয়েছে, তারা তাদের নিজেদের দেশে সবচেয়ে বেশি অ্যামোনিয়া নিঃসরণ করায় দুষ্ট । সার থেকে বের হওয়া ক্ষতিকারক অ্যামোনিয়া নদী, হ্রদ ও সমুদ্রে অত্যন্ত দ্রুত হারে শ্যাওলা উৎপাদনে মদত দেয় ৷ যার ফলে প্রাণী ও গাছপালার প্রয়োজনীয় অক্সিজেনে টান পড়ে।

এই সব দেশে বিপুল পরিমাণে অ্যামোনিয়া নিঃসরণকারী দুই হাজার 374টি পশুপালন খামারের মধ্যে এক হাজার 209টি প্রতি বছর CAP-এর মাধ্যমে 104 মিলিয়ন ইউরো ভর্তুকি পেয়ে এসেছে । বাল্টিক সাগরে নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় শ্যাওলার পরিমাণ মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে । এদের মধ্যে কয়েকটির নীল ও সবুজ ফুল এতটাই বিশাল যে এগুলিকে অন্তরীক্ষ থেকেও দেখা যায় ।

এই শ্যাওলাগুলি পচে গিয়ে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত অক্সিজেনের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিচ্ছে । এর ফলে বাল্টিক সাগরের বহু অংশ মৃতের অঞ্চল হয়ে গেছে । এই সব জায়গায় আর প্রাণের অস্তিত্ব নেই ।এইভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কৃষি জল, মাটি ও বাতাসকে দূষিত করে চলেছে ।

হারিয়ে যাচ্ছে পাখির দল

এই বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি এবং এর ফলে হওয়া খামার দূষণের ফলে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে পাখি, প্রজাপতি, মৌমাছি-সহ একাধিক পতঙ্গ প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে বা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে । এর ফলে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে খাদ্য শৃঙ্খলে, যা প্রাণের অন্যতম ধারক। বিপু‌ল পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে মাটি দূষিত হচ্ছে । এর ফলে পাখিরা খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছে ।

কৃষিক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর এই প্রকল্পের ফলে বন্যপ্রাণের মারাত্মক ক্ষতির বিষয় প্রায় দুই দশক ধরেই জানেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্তারা । 2004 সালে বিজ্ঞানীরা দুটি রিপোর্ট পেশ করে দাবি করেন, কৃষি ক্ষেত্রে এই ভর্তুকির জন্যই পাখির সংখ্যা কমছে এবং খামারের জীব বৈচিত্র্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে ।

এরপর থেকেই সংরক্ষণের চেষ্টাকে বারবার লঘু করা হয়েছে । 2006 সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশির ভাগে দেশ একটি ভূমি বিল পাশ করানোর চেষ্টা করে, যার ফলে বন্যপ্রাণের উন্নতি হতে পারত । কিন্তু ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি মিলিতভাবে এই বিলের বিরোধিতা করে তা আটকে দেয়।

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন

ইউরোপের মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনের 10 শতাংশের জন্য দায়ি এই খামার ব্যবস্থা । খামারের গবাদি পশুরা খাবার খেয়ে যে মল ত্যাগ করে তা থেকে নির্গত হয় মিথেন, যা অন্যতম গ্রিনহাউস গ্যাস । এর সঙ্গে যোগ হয় রাসায়নিক সার থেকে নির্গত হওয়া নাইট্রাস অক্সাইড এবং পচে যাওয়া সার থেকে নির্গত হওয়া মিথেন ও অ্যামোনিয়া । পশুপালনকে উৎসাহ দিতে বিপুল ভর্তুকি এই পরিস্থিতিকে আরও মারাত্মক করে তুলছে ।

ফ্রান্সে প্রতি গ্রীষ্মে ব্রিটানি সমুদ্র সৈকত শ্যাওলায় ঘন সবুজ হয়ে যায় । এই সব শ্যাওলা পচে গিয়ে বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইড নিঃসরণ করে যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এই ব্রিটানিতেই ফ্রান্সের অর্ধেক পরিমাণ শুয়োরের মাংস এবং সিকি ভাগ দুগ্ধজাত সামগ্রী উৎপন্ন হয় । গবাদি পশুর অবশেষ ছড়িয়ে দেওয়া হয় গম ও ভুট্টার খেতে, যেগুলি আবার এই সব পশুদের অন্যতম খাদ্য । এই সব কারণে সমগ্র ফ্রান্সের মধ্যে ব্রিটানিতে নাইট্রোজেন ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি । এই সব নাইট্রোজেন শ্যাওলার অন্যতম প্রধান খাদ্য । এই সব প্রাদেশিক খামারগুলি সমুদ্রে শ্যাওলার পরিমাণ বাড়িয়েই চলেছে ।

বহু বছর ধরে সরকারি আধিকারিক এবং কৃষকরা কৃষি ও সৈকতে ভেসে আসা শ্যাওলার মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, তা মানতেই চাননি । ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পরিবেশ মন্ত্রকের আধিকারিকরা বলছেন, নাইট্রেট দূষণ কমাতে কৃষকদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে এবং তাঁদের বোঝাতে হবে যাতে তাঁরা উৎপাদন কিছুটা কমিয়ে দেন । কিন্তু এই প্রস্তাব কৃষকরা মানতে চাননি । তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও অবস্থাতেই তাঁরা লভ্যাংশ কমাতে তৈরি নন । ইউরোপেরই পরিবেশ এজেন্সি জানাচ্ছে, বাল্টিক সাগরের অংশবিশেষকে স্বাস্থ্যকর অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অন্তত 200 বছরের প্রয়োজন । গত বছর পোল্যান্ড সমগ্র দেশকে নাইট্রেট প্রবণ হিসাবে ঘোষণা করে এবং মেনে নেয় যে সে দেশের জল দূষণের জন্য দায়ি খামার । নতুন নির্দেশিকা জারি করে কৃষকদের সারের ব্যবহার বেঁধে দেওয়া হয়েছে । সার ও অবশেষ এখন কৃষকদের ছিদ্র নিরোধক পাত্রে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় রেখে দিতে হয় ।

কিন্তু সরকারের এই নীতি একেবারেই পছন্দ হয়নি গ্রেটার পোল্যান্ড প্রদেশের কৃষকদের । এর একমাত্র কারণ, এই প্রদেশেই রয়েছে বিশাল আকারের একাধিক গবাদি পশুর খামার । পোল্যান্ডের এই নীতিকে খামার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় অনুপ্রবেশ বলে কটাক্ষ করে ব্রাসেলস ।

ইউরোপের বেশিরভাগ নদী, হ্রদ এবং মোহনা রাসায়নিক এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ দ্বারা মাত্রাতিরিক্ত দূষিত । এ তথ্য জানিয়েছে সাম্প্রতিক একটি প্যান-আমেরিকান সমীক্ষা । 2010 থেকে 2015 সালের মধ্যে এক লাখ 30 হাজার জলাশয়ে সমীক্ষা চালায় ওই সংস্থা । তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, 160টি নদী অববাহিকার মাত্র 40 শতাংশ পরিবেশগত মানের কাছে পৌঁছেছে । মাত্র 38 শতাংশ জলাশয় রাসায়নিক দূষণের মাত্রার মধ্যে রয়েছে । তুলনায় ভূগর্ভস্ত জলায়শয়গুলোর অবস্থা অনেকটাই ভালো । এগুলোর মধ্যে 74 শতাংশ রাসায়নিক দূষণের মাত্রার মধ্যেই রয়েছে এবং 89 শতাংশের পরিবেশগত অবস্থাও বেশ ভালো । দেখা গেছে, বেশির ভাগ জলাশয়ের দূষণের প্রধান কারণ নাইট্রেট, কৃষি অবশেষ, লবণ, শিল্পক্ষেত্র হওয়া থেকে রাসায়নিক দূষণ, খনি ও বর্জ্য । এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ দূষক হল পারদ । এর সাধারণ উৎপত্তিস্থান খনি, কয়লার দহন এবং অন্যান্য শিল্পক্ষেত্র থেকে । অন্য দিকে, ভূগর্ভস্থ জলাশয় দূষিত হয় কৃষি ক্ষেত্রে, জলে দূষিত বর্জ্য মেশা ও বাসস্থানের অবক্ষয়ের জন্য ।

জার্মানি, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরির মতো মধ্য ইউরোপের দেশগুলির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ । এই সব দেশের প্রায় 90 শতাংশ জলাশয়ের অবস্থা নির্ধারিত মানের চেয়ে অনেকটাই খারাপ । অন্য দিকে, সুইডেন, ফিনল্যান্ডের মতো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলির অবস্থা সবচেয়ে ভালো । ব্রিটেনের ছবিটাও প্রায় একই রকম । ইংল্যান্ড যেন সেখানে মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর প্রতিনিধি, যেখানে বেশিরভাগ জলাশয়ের হাল খারাপ, আর স্কটল্যান্ড যেন স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোর প্রতিনিধি, যেখানে জলাশয়গুলোর অবস্থা বেশ ভালো ।

উন্নত দেশগুলোর খামারে ভর্তুকির বিপরীত প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষকদের আয়ের উপর-

উন্নত দেশগুলোর কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকি উন্নয়নশীল দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলছে, সে সব তথ্য ভালো ভাবেই রাখা রয়েছে । কৃষিতে ভর্তুকির ফলে কম দামে খাদ্য দ্রব্য পাওয়ায় গ্রাহকের খুব সুবিধা হয়, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই । তবে এর উলটো দিকে, এর ফলে ভর্তুকিহীন দেশের কৃষকরা বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন । দারিদ্রের ক্ষেত্রে এই ভর্তুকির বিপরীত প্রভাব পড়ছে । বিষয়টা বোঝাতে একটা ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক । উন্নত দেশগুলো যদি তুলো বা চিনির উৎপাদনের উপর ভর্তুকি দেয়, তা হলে যে সব উন্নয়নশীল দেশে তুলো বা চিনি উৎপন্ন হয়, সেই সব দেশের ভর্তুকি না পাওয়া কৃষকদের সরাসরি লড়াই করতে হবে উন্নত দেশের কৃষকদের সঙ্গে। এবং তা একেবারেই অসম লড়াইয়ে পরিণত হয়ে এই কৃষকদের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ করে তুলবে । আন্তর্জাতিক ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (IFPRI) একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছিল, উন্নত দেশগুলোর কৃষি ক্ষেত্রে এই বিপুল ভর্তুকির জন্য শুধুমাত্র 2003 সালে উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রায় 24 বিলিয়ন ডলার আয় কম হয়েছিল । পাশাপাশি প্রায় 40 বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ব্যবসা মার খেয়েছে । সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, অনুন্নত দেশগুলি, যাদের GDP-র একটা বড় অংশ আসে কৃষি থেকে, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে আরও বেশি । বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের মত হল, উন্নত দেশগুলোর কৃষি ক্ষেত্রে দেওয়া এই বিপুল ভর্তুকির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে । এর পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলির গ্রামের স্বাস্থ্য পরিষেবা, পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ প্রভৃতি পরিকাঠামোর উপর । OECD ভুক্ত দেশগুলো কৃষিতে যতটা ভর্তুকি দেয়, তার মোট পরিমাণ উন্নয়নের জন্য দেয় অর্থের চেয়েও অনেকটা বেশি । আফ্রিকার ক্ষেত্রে হিসাব করে দেখা গেছে, কৃষি পণ্যে মাত্র এক শতাংশ বৃদ্ধি এই অঞ্চলের GDP-র প্রায় 70 বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি ঘটাতে পারে যা বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অনুদানের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি।

কৃষির উপর মারাত্মকভাবে নির্ভরশীল বহু উন্নয়নশীল দেশ । ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অরগানাইজ়েশন (FAO)-এর রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের দরিদ্রতম মানুষের 70 শতাংশের বেশির জীবিকা নির্বাহ হয় কৃষির দ্বারা । CAP-এর এই বিপুল ভর্তুকির জন্য এই সব উন্নয়শীল দেশের পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হয় না । বিশ্বের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ওয়ার্ল্ড ট্রেড অরগানাইজ়েশন (WTO)-র দোহা ডেভেলপমেন্ট রাউন্ড স্থগিত করে দেওয়া হয় শুধুমাত্র উন্নত দেশগুলো কৃষিক্ষেত্রে এই বিপুল ভর্তুকি ওঠাতে অসম্মত হওয়ায় ।

ঋণস্বীকার

দা ডার্টি সিক্রেটস অব ইউরোপিয়ান ফার্ম সাবসিডিজ়, নিউইয়র্ক টাইমস, 25 ডিসেম্বর 2019

“ইউরোপিয়ান ওয়াটার্স— অ্যাসেসমেন্ট অব স্টেটাস অ্যান্ড প্রেশারস (2018)”, দা ইউরোপিয়ান এনভায়রনমেন্টাল এজেন্সি (EEA)

কাই ওয়েইস, দা CAP ডাজ় নট ফিট— হোয়াই দা EU's ফার্ম সাবসিডাইজ় আর রাইপ ফর রিফর্ম, 22 অগাস্ট 2019

গ্রিনপিস ইউরোপিয়ান ইউনিট ইনভেস্টিগেশন: EU সাবসিডাইডেজ় ইউরোপস মোস্ট পলিউটিং লাইভস্টক ফার্ম, 24 এপ্রিল 2018

New Delhi, Jan 28 (ANI): According to a recent study in Canada, the rate of survival of preterm babies in Canada has increased by 25% after the introduction of national program - Evidence-based Practice for Improving Quality (EPIQ) in neonatal intensive care units (NICUs) across the country. The new research was published in the journal CMAJ (Canadian Medical Association Journal). The EPIQ program was introduced in 2003 by the Canadian Neonatal Network in 25 neonatal units to improve outcomes for premature babies. The study, originating from Sinai Health in Toronto, analyzed the effect of changes in care practices on outcomes for 50,831 infants born prematurely between 2004 and 2017. Researchers found that survival without major adverse health effects increased from 56.6 percent to 70.9 percent (25 percent) for very preterm babies and from 70.8 percent to 74.5 percent (5 percent) for babies born between 23 and 25 weeks' gestation, over the course of the 14-year program. Preterm babies often have chronic health issues due to early premature birth, and this quality improvement program resulted in a significant reduction in several adverse outcomes for such babies.
Last Updated : Jan 28, 2020, 7:56 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.